কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগ রণক্ষেত্র
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা রাজধানীর শাহবাগ মোড় সাড়ে ৪ ঘণ্টা অবরোধের পর তাদের নিষ্ক্রিয় করতে কাঁদুনে গ্যাস, জলকামান ও লাঠিচার্জ শুরু করেছে পুলিশ। এসময় কর্তব্যরত কয়েকজন সাংবাদিককেও লাঠিপেটা করতে দেখা গেছে।রবিবার (৮ মার্চ) রাত ৮টা থেকে বিক্ষোভকারীদের হটাতে কঠোর অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনেকেই আহত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত আহতদের সঠিক সংখ্যা ও নাম পরিচয় জানা যায়নি। এসময় কাউকে কাউকে আটক করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে লাঠিচার্জের বিষয়টি অস্বীকার করে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তারা পথচারীদের যাতায়াত স্বাভাবিক রাখতে ও যান চলাচলে বিঘ্নতা ঠেকাতেই আন্দোলকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে সরিয়ে দিচ্ছে।এদিকে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে চলা কাঁদুনে গ্যাস, জলকামান ও লাঠিচার্জে অনেকটাই ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের ধাওয়ায় আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঢুকে পড়ে চারুকলার সামনে অবস্থান নিয়ে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় পুলিশও পাবলিক লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নিয়ে থেমে থেমে তাদের লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস ছুড়তে থাকে।এর আগে বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের সহকারী উপকমিশনার (এডিসি) আজিমুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দাবি আদায়ে তারা আন্দোলন করুক। কিন্তু যেন কোনও জনদুর্ভোগ না হয়।’সরেজমিন দেখা গেছে, আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপের পর পরই পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয় ও লাঠিচার্জ করে। এসময় মুহূর্তেই আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। কয়েকজন আন্দোলনকারীকে আটক করে পুলিশ।এর আগে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রবিবার দুপুর ২টা থেকে আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে আসে। পরে তাদের একটি বিক্ষোভ মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে জাতীয় শহীদ মিনার, ফুলার রোড, পলাশী, নীলক্ষেত, কাঁটাবন হয়ে আবারও শাহবাগে জড়ো হয়।বিক্ষোভকারীরা বলছিল, সংসদে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাবেন তারা। চলতি সংসদ অধিবেশন থেকে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানান তারা। বিক্ষোভ শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর বিকেলে দশম সংসদের ২০তম অধিবেশন শুরু হয়। রাত ৮টার দিকে লাঠিচার্জ ও জলকামান নিয়ে নামে পুলিশ।উল্লেখ্য, কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’।গত ১৪ মার্চ তারা ৫ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিতে সচিবালয় অভিমুখে যেতে চাইলে পুলিশি ধরপাকড় ও আটকের শিকার হন। তারপর নানা কর্মসূচি পালনের পর রবিবার দুপুর থেকে সারা দেশে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগে অবস্থান নিতে থাকে শিক্ষার্থীরা।বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র যুগ্ম আহ্বায়ক উজ্জ্বল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কোটায় শূন্য থাকা সিটে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে, সেখানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, এক কোটার শূন্য আসন অন্য কোটা দিয়ে পূরণ করা হবে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’