ছাতকে প্রত্যহ ওয়াশিং মেশিনের ৩শ’মে.টন ডাস্টে ভরাট হচ্ছে সুরমার তলদেশ
নাজমুল ইসলাম, ছাতক (সুনামগঞ্জ): ছাতকে প্রায় শতাধিক পরিবেশ বিধ্বংসী যন্ত্রদানব ওয়াশিং মেশিনের (ভাইব্রেটর) ডাস্টে ভরাট হয়ে যাচ্ছে সুরমা নদীর তলদেশ। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে। প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতায় একটি অসাধুচক্র বীরদর্পে এসব যন্ত্রদানব চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রত্যহ শতাধিক ওয়াশিং মেশিন থেকে নির্গত প্রায় ৩শ’মেট্রিকটন ডাস্টে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, ছাতক সদর ইউপি পৌরসভা ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর, দোহালিয়াবাজার ও কাঞ্চনপুর এলাকায় অবৈধভাবে উত্তোলিত টিলার কাঁদা-মাঠিযুক্ত লাল পাথর ও ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পাথর ধুঁয়ার জন্যে শতাধিক ওয়াশিং মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। এরমধ্যে ছাতকের মাছুখালী, মল্লিকপুর ও আন্ধারীগাঁও এলাকায় প্রায় এককিলোমিটার দীর্ঘ সুরমা নদীর তীরে অর্ধশতাধিক ও দোহালিয়াবাজার, কাঞ্চপুর ও দোয়ারা উপজেলা সদর এলাকায় আরো অর্ধশতাধিকসহ শতাধিক ওয়াশিং মেশিনে প্রত্যহ প্রায় ৩শ’ মেট্রিকটন ডাস্টে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। এতে সুরমা নদী নাব্যতা হারিয়ে আড়াইশ বছরের নৌ-পরিবহনসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যে চরম প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্ঠি করছে। এসব বন্ধে ৩টি ব্যবসায়ি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।ছাতক লাইনষ্টোন ইম্পোর্টার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপ কার্যালয়ে গ্রুপের প্রেসিডেন্ট আহমদ শাখাওয়াত সেলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারী সৈয়দ তৌফিক আহমদ ইকবালের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় ছাতক পাথর ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি জয়নাল চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক আবদুল হাই আজাদ, ছাতক পাথর ব্যবসায়ি সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি, ইউপি চেয়ারম্যান অদুদ আলম, সাধারন সম্পাদক সামছু মিয়া, লাইমষ্টোন ইম্পোর্টার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহতাব হোসেন, ফাইন্যান্স সেক্রেটারী আলী আমজাদ, ওয়াশিং মেশিন মালিক পক্ষে আলমগীর আলম মেম্বার, শরীফ আলম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। সভায় ৩টি সংগঠনের সিদ্ধান্তে গতবছরের ১০ফেব্রুয়ারি থেকে শহরে ওয়াশিং মেশিন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর থেকে ওয়াশিং মেশিন ছাতক সদর ইউনিয়নের মাছুখালী, আন্ধারীগাঁও, মল্লিকপুর ও দোহালিয়া বাজারসহ সুরমা নদীর তীরে অবস্থান নেয়। ওয়াশিং মেশিনের ডাস্টে নদীর পানি দুষিত ও তলদেশ ভরাট হয়ে দিন দিন নাব্যতা হারাচ্ছে। পানি দুষিত হওয়ায় নদীতে দেশীয় মাছের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। নদী ভরাট হলে ব্যবসা-বানিজ্যসহ মানুষের সার্বিক জীবন যাত্রায় মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হলে আমদানী-রপ্তানীসহ সরকারের রাজস্ব আয়ের একটি বড়খাত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এব্যাপারে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, ওয়াশিং মেশিন বা ভাইব্রেটর এটি নতুন উদ্ভাবিত একটি পরিবেশ বিধংসী যন্ত্রদানব। একটিতে একশ’ মে.টন সাধারণ ময়লাযুক্ত পাথর ওয়াশ করলে নদীর তলদেশে কমপক্ষে ৫মে.টন আস্তরণ (ডাস্ট) পড়বে। কিন্তু পাথরে ময়লার পরিমান বেশি হলে প্রতি একশ’ মে.টনে কমপক্ষে ১০মেট্রিনটন আস্তরণ পড়তে পারে। তারা নদীর নাব্যতা, পরিবেশ ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় এসব বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ কামণা করেন। ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরি বকুল বলেন, সরকার শীঘ্রই এসব বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সুরমা নদী ভরাট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়তে পারে বলে তিনি জানান।