জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা কর্মকর্তা পুরস্কার পেলেন বিভিন্ন দূর্ণীতিতে অভিযুক্ত বদলগাছী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা
নওগাঁ প্রতিনিধি: দূর্ণীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। টাকা ছাড়া কোন কাজ হয়না সেখানে। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও তদন্তে কোন অভিযোগই যেন প্রমাণিত হয়না প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছানাউল হাবিবের বিরুদ্ধে। খুঁটির জোর কোথায়? এসব বিষয় নিয়ে উপজেলার শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তার বদলীর অপেক্ষায় দিন গুনছেন উপজেলার শিক্ষকরা। তার বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, দুদক চেয়ারম্যান ঢাকাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৩ জুন তারিখে বদলগাছী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদান করেন ছানাউল হাবিব। অফিসে যোগদানের পর থেকে নিজের ইচ্ছেমতো অনিয়মকে নিয়ম করে চালিয়ে যাচ্ছেন। নিয়মিত তিনি অফিসও করেন না। অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীকে হাত করে তার অনিয়মের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এছাড়া কিছু দালাল শিক্ষক আছেন। যারা স্কুল ফাঁকি দিয়ে প্রতিনিয়ত শিক্ষা অফিসে যাতায়াত করেন এবং বিভিন্ন তদবির করে থাকেন। উপজেলায় ১৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। শিক্ষক বদলীর ব্যাপারে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। যদি কোন শিক্ষক টাকা দিতে না চান তাহলে তার বদলী বন্ধ থাকে। আবার কোন স্কুলে শিক্ষকদের পোষ্ট ফাঁকা থাকলে সেখানে কোন শিক্ষক যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তাকে যেতে দেয়া হয়না। শিক্ষা কর্মকর্তা বিভিন্ন অজুহাত দেখান। নিয়ম অনুসারে বদলী হতে হবে। যে কেউ যেতে চাইলে তো যেতে পারবে না। তবে টাকার অঙ্কটা বাড়িয়ে দিলে বদলী নিশ্চিত। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৩০ হাজার টাকা স্লিপের বরাদ্দ করা হয়েছে। এ টাকা উত্তোলনে প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের উৎকোচ হিসেবে গুনতে হয়েছে ৪ হাজার টাকা করে। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে স্লিপের বরাদ্দকৃত ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ৪ হাজার টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ৪ হাজার টাকা এবং প্রাক-প্রাথমিকের ৫ হাজার টাকার মধ্যে এক হাজার টাকা উৎকোচ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। টাকা না দিলে কোন স্বাক্ষর করেন না। বাধ্য হয়ে শিক্ষকদের টাকা দিতে হয়। শিক্ষকরা ওই অফিসারের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে স্লিপের টাকায় শিক্ষা কর্মকর্তা নিজে বগুড়া থেকে সাইড ড্রাম নিয়ে এসে যে সকল বিদ্যালয়ে প্রদান করেছেন তার প্রায় সবগুলোই নষ্ট হয়ে গেছে।২০১৭ সালে উপজেলার ২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী কাম দপ্তরি পদে নিয়োগ দেয়া হয়। সেখানে ৭/৮ লাখ টাকার নিয়োগ বার্ণিজ্য হয়। টাকার একটি অংশ দলীয় ব্যক্তি, প্রধান শিক্ষক ও এসএমসি’র সভাপতিদের দিয়েছেন। আর বাকী প্রায় ৩ লাখ টাকা নিজের ভাগে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।ওই অফিসারের বিরুদ্ধে কোন শিক্ষক মুখ খোলার সাহস পায় না। যদি কোন শিক্ষক মুখ খোলে তো তার উপর নেমে আসে বিভিন্ন হয়রানি। যদি স্কুলে আসতে দেরী হয় তাহলে বেতন থেকে মাস শেষে টাকা কেটে রাখা হয়। দেখে শুনে কোন শিক্ষক এসব হয়ারনি স্বীকার হতে চান না। তাই বাধ্য হয়ে নীরবে সহ্য করতে হয় শিক্ষকদের।প্রতিনিয়ত উপজেলার শিক্ষকরা ওই শিক্ষা অফিসারের কারণে হয়রানি স্বীকার হতে হচ্ছে। কিন্তু নিরুপায়। যেন কিছুই করার নাই। সবকিছুই শিক্ষকদের মুখ বন্ধ করে নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে। তার ঘুষের ধরনটাই যেন অন্য রকম। ঘুষের টাকা অফিসে লেনদেন হয়না। আবার তিনি নিজেও সরাসরি টাকা নেননা। এসব অনিয়মের সাথে কয়েকজন শিক্ষক সম্পৃক্ত আছে। তাদের দিয়ে তিনি এ ঘুষের কাজ দেদারচে চালিয়ে যাচ্ছেন। বিনিময়ে তাদের কিছু কমিশন দিয়ে থাকেন। ঘুষ নেয়া হয়। কিন্তু পরিবর্তন হয় ঘুষ নেয়ার ধরন।এছাড়া মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ‘বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ চিহ্নিত চোর ফারুক হোসেনকে নৈশ প্রহরী কাম দপ্তরি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চোর সার্বস্ত হওয়ায় তাকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ নিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকা সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। কিন্তু নিজের ক্ষমতা বলে পরদিন গত ৫ ডিসেম্বর চোর ফারুক হোসেনকে নিয়োগ দিয়েছেন।আর এতো অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। তার অনিয়মের হাত এতোই শক্তিশালী যে উপর মহলও কিছু করতে পারছেনা বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জিল্লুর রহমান বলেন, ফারুক হোসেন সালিসে চোর সার্বস্ত হয়। আর এ চোরকে নিয়োগ না দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে পেপার কার্টিং সহ অভিযোগ দেয়া হয়। তারপর কোন পদক্ষেপ না নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চোরকে নিয়োগ দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছানাউল হাবিব তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ যে নিয়োগ হয়েছে তা স্বচ্ছতার ভিত্তিত্বে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ পাইনি। তার দূর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাংবাদিকের সাথে এক ধরনের অশালিন আচরণ করেন। বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের এতো মাথা ব্যথা কেন?
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুম আলী বেগ বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাঠিয়েছিলাম ফারুক হোসেনের বিষয়ে কোন ধরনের অনিয়মের ঘটনা আছে কিনা। যদি তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ থাকে তাহলে উপজেলার ‘বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ নিয়োগ বাতিল করা হবে।নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদরুজ্জেহা অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যেহেতু অভিযোগে অভিযোগকারীর কোন নাম পরিচয় নাই। আর নাম পরিচয় না পেলে শুধুমাত্র অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনা