আমদানি রফতানি বানিজ্যে গতিশীলতা, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও বন্দর থেকে দ্রুত পন্য খালাশের জন্য বেনাপোল কাস্টম হাউসে প্রথমবারের মতো নথি প্রথা বিলুপ্ত করে ফোল্ডার পদ্ধতি চালু

OLYMPUS DIGITAL CAMERA

বেনাপোল সংবাদদাতা: আমদানি রফতানি বানিজ্যে গতিশীলতা, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও বন্দর থেকে দ্রুত পন্য খালাশের জন্য দেশের সর্ববৃহত স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টম হাউসে স্বাধীনতার ৪০ বছর পর এই প্রথমবারের মতো নথি প্রথা বিলুপ্ত করে ফোল্ডার পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ফলে বন্ধ হয়ে যাবে অনিয়ম ও রাজস্ব ফাকি। দ্রুত ও সহজে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য গত বুধবার থেকে এ ব্যবস্থা চালুও নতুন প্রবর্তিত ফোল্ডার পদ্ধতি সম্পর্কে শুল্কায়ন গ্রুপের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের ধারণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় সকালে। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপিিস্থত ছিলেন বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো. বেলাল চৌধুরী। তিনি কর্মশালায় ফোল্ডার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেন।ফোল্ডার ব্যবস্থা চালুর ফলে বেনাপোলে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হয়েছে। এ ব্যবস্থা চালুর কারণে একদিকে ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকে দ্রুত তাদের মালামাল খালাস করতে পারবেন। অন্যদিকে সরকার ও দেশের জন্য রাজস্ব আহরণের কাজ দ্রুত হবে এবং রাজস্ব আহরণের পরিমাণ অনেক বাড়বে। জানা গেছে, গত ৪০ বছর ধরে বেনাপোলে আমদানি চালান শুল্কায়নে নথির মাধ্যমে শুল্কায়ন হতো। এতে শুল্কায়নে বেশি সময় লেগে যেত এবং পণ্য খালাসে অনাকাঙ্খিত বিলম্ব হতো। ফোল্ডার ব্যবস্থা চালুর ফলে নথির পাশাপাশি প্রযোজ্য ও অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে ফোল্ডারের মাধ্যমে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এ ব্যবস্থায় আমদানি রপ্তানি চালান শুল্কায়নের সার্বিক কর্মকান্ডে গতি সঞ্চার, শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় সময়- হ্রাসসহ আমাদনি রফতানি বনিজ্যে গতিশীলতা সহ কাস্টম হাউসের সামগ্রিক রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাণিজ্যবান্ধব ও জনবান্ধব শুল্কায়ন পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। ফোল্ডার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতাভুক্ত চালান রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী বা ডেপুটি কমিশনার পর্যায়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে শুল্কায়িত হবে। এরমধ্যে রয়েছে, সকল সরকারি , আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদানীয় পণ্যচালান, আমদানীয় চাল, গম, তুলা, পাম্প, ক্লিংকার, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, পান, শুকনা মরিচ, কাঁচা মরিচ, তাজা ফুল, লিকুইড গ্যাস প্রভৃতি। আইআরসি’র মাধ্যমে আমদানিকৃত নমুনা পণ্যের চালান; সকল রপ্তানি পণ্যচালান; বন্ডের আওতায় আমদানিকৃত পণ্যচালান; আমদানীয় সকল প্রকার চেসিস; কমিশনার কর্তৃক সময়ে নির্ধারিত নির্দিষ্ট শ্রেণীর পণ্য চালানও শুল্কায়িত হবে। প্রসঙ্গত, রাজস্ব আহরণের গতি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি বৈধ বাণিজ্য সহায়তাকরণ, অপবাণিজ্য প্রতিরোধ ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে গত এক মাসে ইতোমধ্যে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বেনাপোল কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। চলমান সংস্কার ও উদ্ভাবনা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ী ও অংশীজনের সহায়তা চেয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী বলেন, এতদিন ফাইল ব্যবস্থা থাকার কারণে আমদানি-রফতানিকারকদের একটি ফাইল কমিশনার পর্যন্ত আসতে ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেত। এখন ফোল্ডার ব্যবস্থা চালুর ফলে কমিশনারের টেবিল পর্যন্ত একটি ফাইল আসতে মাত্র ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগবে। অন্যদিকে বাড়বে রাজস্ব আয় ও গ্রুত পণ্য খালাশ।বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, কাস্টমস কমিশনারের এ ধরনের পদক্ষেপে রাজস্ব আয় বাড়বে এবং বন্দর থেকে দ্রুত পন্য খালাশ করা সম্ভব হবে। এটি দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *