ইন্দুরকানীতে নৌপথে হামলায় ট্রলার থেকে পড়ে যুবক নিখোঁজ এক প্রকৌশলীকে উদ্ধারট্রলারের দুই চালক সহ আটক-৯
মোঃ মনির চৌধুরী,পিরোজপুর: পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে এক প্রকৌশলী ও তার সহযোগীকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে নদীতে ফেলে দিয়েছে যুবকরা।এর মধ্যে সবুজ নামে এক যুবক নিখোঁজ রয়েছে এবং এক সহকারী প্রকৌশলীকে আহত অবস্থায় প্রত্যক্ষদর্শীরা নদী থেকে উদ্ধার করে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। এ ঘটনায় ৭ যুবক ও ট্রলারের দুই চালক সহ ৯ জনকে স্থানীয় জেলেরা ধাওয়া করে ধরে গনধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। নদীতে নিখোজ হওয়া যুবককে উদ্ধারের চেস্টা চালাচ্ছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মিরা। শনিবার দুপুুর ১২টার দিকে ইন্দুরকানী ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তি বঙ্গবন্ধু বাজার(গাজীরহাট) সংলগ্ন পানগুচি নদীতে এ ঘটনা ঘটে। আটককৃতরা হলেন, হাফিজ হাওলাদার(২০), হাসিব (১৭), অহিদুজ্জামান পরশ(৩০), সাইফুল রানা (২০), হাফিজুল ইসলাম (৩০), মাহামুদ (১৮) ও হাসিব (১৯)। এঘটনায় ট্রলারের চালক ছগির (১৭) ও হাচান (২০) প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
এদের মধ্যে আটককৃত হাফিজুল, হাসিব ও মাহামুদের বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের দক্ষিন গাজীপুর গ্রামে। এছাড়া ট্রলারের দুই চালক সহ অপর ৪ জনের বাড়ি ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়নে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী, ট্রলারের চালক সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ৯টায় ইন্দুরকানী উপজেলার টগড়া ফেরিঘাট থেকে ট্রলার ভাড়া করে মোড়েলগঞ্জের উদ্যেশ্যে রওনা হয় ৬ যুবক। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মোড়েলঞ্জের ছোলমবাড়িয়া খেয়াঘাটে গিয়ে পৌছায় তারা। এরপর ট্রলারে থাকা ঐ যুবকদের সহযোগী অহিদুজ্জামান পরশ নামে এক যুবক সেখান থেকে তাদের ট্রলারে ওঠেন। পরশ খুলনা থেকে ওখানে এসে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় তাদের সাথে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এর প্রকৌশলী সামছুল আরেফিন রনি(৩৫) ও তার সহযোগী সবুজ (৩৪) ট্রলারে ওঠেন। ছোলমবাড়িয়া থেকে ট্রলার যোগে ইন্দুরকানী ফেরার পথে পানগুছি নদীর গাজীরহাট সংলগ্ন স্থানে রনি ও সবুজের উপর হামলা চালায়। এসময় তাদের দুজনকে মারধর করে ছুরিকাঘাত করলে তারা নদীতে পড়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন নদীর কিনার থেকে বিষয়টি দেখে আহত অবস্থায় নদী থেকে সামসুল আরেফিন রনি নামে একজনকে উদ্ধার করে। এছাড়া অপর যুবক সবুজ পানিতে ডুবে যায়। এসময় ট্রলারযোগে পালিয়ে যাবার সময় স্থানীয় লোকজন ট্রলার নিয়ে তাদের ধাওয়া করে ধরে ঐ যুবকদের আটক করে। উদ্ধার হওয়া রনির বাড়ি খুলনার শেখ পাড়ায় বলে মোড়েলগঞ্জ থানা এস আই আবু মুছা জানিয়েছেন। রনির বরাত দিয়ে তিনি জানান, সামসুল আরেফিন রনি খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষতে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। তার কাছ থেকে একটি বাড়ির নকশা তৈরীর করার জন্য কল রায়েন্দা নিয়ে যাচ্ছিলেন হাসান নামের এক যুবক। রনির সাথে তার সহকারী হিসাবে খুলনা থেকে এসেছেন সবুজ (৩৪)। তারা ট্রলার যোগে পানগুছি নদী পার হওয়ার সময় অতর্কিত ভাবে হামলা করা হয়। ট্রলারে পূর্ব থেকে ৬/৭ জন যুবক ছিলেন। এসময় হামলাকারীরা তাদেরকে ছুরিকাঘাতও করে। যুবকদের হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় নদীতে পড়ে যায় সবুজ। এসময় তাদের চিৎকারে ইন্দুরকানী প্রান্তের কলারন খেয়াঘাট এলাকার লোকজন নৌ যোগে তাদের ঘিরে ফেলে। হামলাকারীদের আটক করে ইন্দুরকানীর কলারণ ঘাটে নিয়ে আসে স্থানীয়রা। আহত অবস্থায় রনিকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা মোড়েলগঞ্জ হাসপাতালে পাঠায়। পরে ইন্দুরকানীর বালিপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে আটক করে। তবে কেন খুলনা থেকে আসা ওই ইঞ্জিনিয়ার ও তার সহযোগির উপরে হামলা করা হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ট্রলারের চালক ছগির জানান, পাড়েরহাট এলাকার কয়েকজন যুবক আমাকে পিকনিকের কথা বলে ট্রলারটি ভাড়া করে মোড়েলগঞ্জ নিয়ে যায়। এসময় ছোলমবাড়িয়া ঘাট থেকে ৩ জন অপরিচিত লোক আমার ট্রলারে ওঠে। এদের মধ্যে পরশ নামে এক যুবক তাদের পরিচিত ছিল। পরে ট্রলার ছেড়ে পান গুছি নদীর মাঝ খানে বসে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় ট্রলার থেকে দুই জন নদীতে পড়ে যায়। ইন্দুরকানী থানার এসআই আব্দুল আজিজ বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িত ৭ যুবককে আটক করা হয়েছে। এছাড়া ট্রলারের ২ চালককে জিঞ্জাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
তিনি শনিবার সন্ধ্যায় আরো জানান, নিখোঁজ যুবককে উদ্ধারের জন্যআমারা চেষ্টা চালাচ্ছি। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।