ব্যবস্থা নিতে পারছে না কুষ্টিয়ার প্রশাসন, ব্যাঙের ছাতার মতো উঠছে বহুতল ভবন
কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি: বিধি না মেনে কুষ্টিয়া শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো একের পর এক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, নকশাবিহীন এসব ভবনে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।আইনি জটিলতায় জেলা প্রশাসন মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে কুষ্টিয়ায় বিআরবি গ্রুপ শহরের এনএস রোডে প্রথম বহুতল ভবন নির্মাণ করে। এরপর কুষ্টিয়া শহরের পুলিশ লাইনের সামনের বিশাল পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণ করেন মোজাফফর। মজমপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এর অনুমোদন নেওয়া হয়। এরপর মোজাফফরের দেখাদেখি আরো কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পুকুরের অন্য অংশ ভরাট করে ভবন নির্মাণ করে। এভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গত ১০ বছরে কুষ্টিয়া শহরে শতাধিক বহুতল ভবন গড়ে তুলেছে। এসব ভবনে জরুরি বহির্গমন ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। ফায়ার সার্ভিস এ বিষয়ে তাগাদা দিলেও ভবন মালিকদের কোনো আগ্রহ নেই।বিভিন্ন সূত্র জানায়, বহুতল ভবন নির্মাণের আগে নকশা অনুমোদন ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার পেয়ে যাচ্ছেন বিধি না মেনে বানানো ভবন মালিকরা।কুষ্টিয়ায় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পৌরসভা, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে নকশা অনুমোদনের কথা থাকলেও তা মানছেন না অনেকে। পুলিশ লাইনের সামনে পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা ভবনগুলোর বেশির ভাগ তৈরি করেছে ফয়সাল কনস্ট্রাকশন। এ ছাড়া অন্যরাও এই এলাকায় ভবন নির্মাণ করেছে। তবে এসব ভবনের কোনোটিতে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নেই।এ বিষয়ে ফয়সাল কনস্ট্রাকশনের চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘আমরা আইন মেনে ভবন নির্মাণ করেছি। কোনো অনিয়ম করিনি। ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নেওয়াটা খুবই জটিল হওয়ায় আমাদেরকে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। ’
মনামী বিল্ডার্সের মালিক রবিউল হোসেন রবিন বলেন, ‘অন্য কারো কথা বলতে পারব না। তবে আমরা সব ধরনের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ করেছি। ইচ্ছা করলে যে কেউ তদন্ত করে দেখতে পারেন। ’পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘প্ল্যান সঠিক আছে কি না, আমরা তা দেখি। সেখানে বাকি বিষয়গুলো তদারকির দায়িত্ব আমাদের না। ’কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ব্যবস্থাপক আলী সাজ্জাদ জানান, হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া এখানকার বেশির ভাগ বহুতল ভবন মালিক আইন লঙ্ঘন করে ইমারত নির্মাণ করেছেন এবং করছেন। যেসব ভবনে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নেই সেসব ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া অবৈধ। তবে পৌর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী বহুতল ভবন নির্মাণের আগে নকশা অনুমোদন ও গুণগত মান নিশ্চিতকরণের জন্য জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এটি আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি। যে কারণে বিধি ভঙ্গকারী ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে কোনো কোনো ভবন মালিক কৌশলে ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র নিয়েছেন।কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান বলেন, ‘রাজউকের বাইরে যেসব বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে সেগুলো দেখার জন্য গণপূর্ত থেকে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার কথা। কমিটি এগুলো দেখভাল করবে; কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পৌরসভাকে চিঠি দিয়ে বহুতল ভবন তদারকির জন্য নির্দেশ দেওয়ায় জেলা প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তার পরও আমরা বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদসচিবকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।