মন্ত্রী ছায়েদুল হকের তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে বাবা মায়ের কবরের মাঝখানে তাকে দাফন করা হয়
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সাংসদ, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের নামাজে জানাজা শেষে তার নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে নাসিরনগর উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নে এস.ই.এস.ডি.পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার তৃতীয় জানাজা শেষে পূর্বভাগ ইউনিয়নের কল্লরপাড় পারিবারিক কবরস্থানে মন্ত্রী ছায়েদুলের বাবা মায়ের কবরের মাঝখানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে বেলা ১২টা ১০ মিনিটে ছায়েদুল হকের লাশ বহনকারী হেলিকপ্টার নাসিরনগর ডিগ্রি কলেজ মাঠে অবতরণ করেন। মন্ত্রীর লাশ বহনকারী বিমানটি নাসিরনগরের আকাশে দেখা দেয়ার সাথে সাথে চারদিক থেকে কান্না শুরু হয়। দুপুর একটায় নাসিরনগর উপজেলা সদরের আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ছায়েদুল হকের দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। এতে প্রায় লক্ষার্ধীক লোকজন অংশগ্রহন করেন। ছায়েদূল হকের একমাত্র ছেলে রায়হানুল হক তার বাবার জন্য সর্বস্তরের মানুষের কাছে দোয়া প্রার্থণা করেন।
জানাজায় কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামিম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪(কসবা ও আখাউড়া) আসনের সাংসদ ও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩(সদর ও বিজয়নগর) আসনের সাংসদ র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের সাংসদ এ বি তাজুল ইসলাম, কুমিল্লার সাংসদ আবদুল মতিন খসরু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক উপমন্ত্রী হুমায়ূন কবীর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শফিকুল আলম, জেলা আওয়ামলীগ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন মঈন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব সৈয়দ এ. কে. এম একরামুজ্জামান সহ আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও নাসিরনগর সহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লক্ষাধীক লোকজন জানাজায় অংশ নেন। জানাজার আগে ছায়েদুল হককে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এর আগে মরহুমের রাজনৈতিক সহকর্মীবৃন্দ ও পরিবারের পক্ষ থেকে তার কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। পরে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। জানাজা পরিচালনা করেন মুফতি মাওলানা আব্দুল হাকিম চৌধূরী। নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ছায়েদুল হকের দ্বিতীয় জানাজা শেষে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এলাকাবাসী। লাশবাহী ফ্রিজআপ গাড়িটির সাথে দৌড়তে থাকেন নাসিরনগরের লোকজন। হিন্দু, মুসলমান সহ সকলেই শেষবারের মত একবার দেখার জন্য ছুটে চলেন। পরে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় মন্ত্রীর নিজ বাড়ি পূর্বভাগ ইউনিয়নের উত্তরপাড়ায়। লাশ এলাকায় পৌছলে সেখানেও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন উপস্থিত লোকজন। পরে বিকাল ৩টায় নাসিরনগরের পূর্বভাগ ইউনিয়নের এস.ই.এস.ডি.পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ছায়েদুল হকের তৃতীয় ও শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকাল সোয়া ৪টায় পূর্বভাগ ইউনিয়নের কল্লরপাড় পারিবারিক কবরস্থানে ছায়েদুলের বাবা মায়ের কবরের মাঝখানে তাকে দাফন করা হয়।এর আগে দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যুতে শুধু নাসিরনগর নয় বাংলাদেশের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। চেষ্টা করলেও এই ক্ষতি কখনো কোন কিছুর মাধ্যমে পূরণ করা যাবে না। আমি তার আত্বার মাগফেরাত কামনা করি। পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।উল্লেখ্য, ১৬ ডিসেম্বর সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্রসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। ১৯৪২ সালের ৪ মার্চ ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় নাসিরনগর থানার পূর্বভাগ গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মৃতুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।