বিনম্র শ্রদ্ধা আর গভীর ভালবাসায় জাতি স্মরণ করছে তার বীর সন্তানদের

Bangladeshi children dance at a rally to mark the Victory Day in Dhaka, Bangladesh, Friday, Dec. 16, 2016. The Victory Day celebrated on December 16 marks the anniversary of Bangladesh’s victory in the war against Pakistan. (AP Photo)

লাল-সবুজের পতাকা আর ফুল হাতে জনস্রোত ছুটছে স্মৃতিসৌধের দিকে। পোশাকেও প্রাধান্য পেয়েছে জাতীয় পতাকার রং। বাতাসে ভাসছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারী গান আর বঙ্গবন্ধুর দরাজ কণ্ঠের ভাষণ। বর্ণিল শোভাযাত্রায় কণ্ঠ থেকে কণ্ঠে জয় বাংলার স্লোগান আর বিজয়ের গান। রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি-গাড়ি, অফিস-আদালত, দোকানপাট সবখানেই উড়ছে জাতীয় পতাকা। এমনকি গালে-কপালেও রং তুলির আঁচলে স্থান পেয়েছে জাতীয় পতাকা। এভাবেই বিনম্র শ্রদ্ধা আর গভীর ভালবাসায় জাতি স্মরণ করছে তার বীর সন্তানদের। একই সঙ্গে স্মরণ করা হয়েছে যাঁর ডাকে এই মুক্তিযুদ্ধ, সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সকল রাজনৈতিক নেতাসহ স্বাধীনতাসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া জাতির সাহসী সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করা হয়েছে ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের।অন্যসময় রাজধানীর অদূরে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ শীতের সকালে নিরিবিলিই থাকে। তবে আজ (শনিবার) বিজয়ের দিনে কুয়াশাচ্ছন্ন এ ভোরকে উপেক্ষা করে লাখো মানুষের ডল নেমেছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। শিশু-কিশোর, ধনী-গরীব, সকলের উৎসবমুখর পদচারণায় বিজয়ের ৪৬ বছর পালন করলো সবাই। স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান সর্বস্তরের মানুষ। দিনের শুরুতেই সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থেকে শহীদদের স্মরণ করেন তারা। এসময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। এরপর জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা, বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপ্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে যাওয়ার পর সকাল সাড়ে ৭টায় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সবার জন্য। তারপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ফুল দিয়ে মহান বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে এ প্রজন্মের তরুণ যুবক, ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, কূটনীতিক, সমাজকর্মী সর্বোপরি লাখো লাখো সাধারণ মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে মহান বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেখা যায়। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত শ্রদ্ধার পুষ্পাঞ্জলিতে ঢেকে যায় বেদি।এরপর সকাল ১১টার কিছু পরে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা।
মেডিকেল কলেজে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে খুব সকালে স্মৃতিসৌধে আসেন কলেজশিক্ষক সাইফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এখানে এলে বিজয়ের গৌরবটা একটু বেশি অনুভব করা যায়। বোধ-চেতনায় দোলা দেয়।’ বিজয়ের দিনে কেমন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশই চাওয়া। আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশের স্বপ্নে প্রতিদিন ঘুম ভাঙে। বিজয়ের দিন স্বপ্নটা আরও রঙিন হয়ে ওঠে।’এ দিবসটি উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও ছিল বেশ লক্ষণীয়। এ সময় সাভার স্মৃতিসৌধ ও এর আশপাশে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি, র‌্যাব, পোশাকধারী পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত যেসব সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয় তারা হল- ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জাবি সাংবাদিক সমিতি, জাকের পার্টি, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি),কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন, জাতীয় পার্টি, প্রশিকা, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ন্যাপ, জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, বাংলাদেশ গণআজাদী লীগ, বাংলাদেশ ক্ষেত মজুর সমিতি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, ছাত্র ঐক্য ফোরাম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, ছাত্র পরিষদ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণফোরাম, ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সমাজ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, মানবাধিকার কাউন্সিল, গণমুক্তি ইউনিয়ন, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, আওয়ামী তৃণমূল লীগ, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ, বাংলাদেশ মুহাজির যুব সংগঠন, দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী বিমোচন সমাজ কল্যাণ সংস্থা, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সজাগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট, মুক্তিযুদ্ধ সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, কৃষক দল, কৃষক সমিতি, ক্ষেত মজুর সমিতি, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, বঙ্গবন্ধু সংসদ, জাসাস, মহিলা পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, আশুলিয়া প্রেসক্লাব, সাভার পৌরসভা, বাংলাদেশ নৌ বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বিনিয়োগ বোর্ড, মীর মশাররফ হোসেন হল জাবি, জাহানারা ইমাম হল জাবি, প্রীতিলতা হল জাবি, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলা একাডেমি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সাভার উপজেলা ও পৌর আওয়ামী হকার্স লীগ, সাভার উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ, বেগম খালেদা জিয়া হল জাবি, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল জাবি, জাতীয় শ্রমিক লীগ, এসো পড়ি, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম, বাঁধন কেন্দ্রীয় পরিষদ, বাংলাদেশ আশুলিয়া থানা মুক্তিযোদ্ধাগণ, বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হল ঢাবি, বাংলাদেশ যুবলীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ঢাবি, গণবিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এ এফ এম রহমান হল ঢাবি, কবি জসীমউদ্দীন হল ঢাবি, জনতা ব্যাংক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, গণমুক্তি ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্রাব), বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ইউনিয়ন, জাসদ, নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ নেভি প্রাক্তন সদস্য কল্যাণ সংস্থা, রোকেয়া হল ঢাবি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ গণআজাদী লীগ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এমএল), মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জাতীয় পেশাজীবী পরিষদ, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *