ভয়ে বাড়ি ফিরছে না ৩০টি পরিবার


কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি: প্রতিপক্ষের ভয়ে প্রায় ২ মাস ধরে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছে না অন্তত ৩০টি পরিবারের সদস্যরা। ইতিমধ্যে এসব পরিবারের অনেকের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকেরা। কেটে ফেলা হয়েছে ফলের বাগানের প্রায় ১০ বিঘা জমির গাছ। এ ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধলসা গ্রামে। ভুক্তভোগী লোকজনের অভিযোগ, সম্প্রতি বিএনপি থেকে জাসদে যোগ দেওয়া এক নেতার নেতৃত্বে এসব অত্যাচার-নির্যাতন চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্যরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। ভুক্তভোগী সাত-আটটি পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ৬ অক্টোবর ছাতিয়ান ইউনিয়নের ধলসা গ্রামে একটি পুকুরের মালিকানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দুপক্ষের সংঘর্ষে শহিদুল ইসলাম (৫০) নামের এক ব্যক্তি মারা যান। এই সংঘর্ষে একপক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন বিশ্বাস ও বিএনপি থেকে জাসদে যোগ দেওয়া নেতা সরোয়ার হোসেন। অপর পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাছের মণ্ডল। নিহত শহিদুল ইসলাম জসিম মণ্ডলের সমর্থক ছিলেন। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হলে তাছের মণ্ডলের সমর্থকেরা গা ঢাকা দেন। এরপর ১১ অক্টোবর তাছের মণ্ডলের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা করেন প্রতিপক্ষের লোকজন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের অভিযোগ, মিরপুর উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলীর ইন্ধনে বিএনপি থেকে জাসদে যোগ দেওয়া নেতা সরোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এসব হামলা চালানো হয়। গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ওই গ্রামে অন্তত ১০টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক ঘরের দেয়াল গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি একতলা বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এসব বাড়ির জানালা দরজা খুলে নেওয়ার পাশাপাশি দামি আসবাবও লুট করা হয়েছে। এ হামলার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন আর গ্রামে নেই। তারা অন্য গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য আওয়ামী লীগের কর্মী আবদুল আলীম জানান, ছাতিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের বিগত নির্বাচনে তাঁরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। অন্য দিকে বিএনপির নেতা সরোয়ার হোসেন জাসদের প্রার্থীকে সমর্থন দেন। এই নিয়ে জাসদের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরই মাঝে স্থানীয় দুপক্ষের বিরোধে একজন খুন হলে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলীর ইন্ধনে সরোয়ার হোসেন তাঁর লোকদের দলে নেন। রাজিয়া খাতুন নামের এক নারী বলেন, হামলাকারীরা বাড়িঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি মূল্যবান আসবাব, দরজা-জানালা ও গরু-ছাগল লুট করে নিয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, তারা প্রায় ১০ বিঘা জমির পেয়ারাবাগানের গাছ কেটে ফেলেছে। জমির পাকা ধান আর পুকুরের মাছ নিয়ে যাচ্ছে। এলাকায় এলেই সরোয়ার হোসেনের লোকেরা তাঁদের তাড়া করছেন। যুবক সবুজ বলেন, বাড়ির বৈদ্যুতিক মিটার ও নলকূপ খুলে নিয়ে গেছে। রফিজ উদ্দিন বলেন, ধলসা বাজারে তাঁর দোকানের ৫-৬ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। তাঁর মতো আরও ছয়-সাতটি দোকানে লুটের ঘটনা ঘটেছে। রফিজ উদ্দিন অভিযোগ করেন, স্থানীয় ক্যাম্পের পুলিশ সরোয়ার হোসেনের পক্ষে কাজ করে, পুলিশের উপস্থিতিতেই অনেক বাড়িতে হামলা হয়েছে। সরোয়ার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।এ ব্যাপারে আহাম্মদ আলী বলেন, মিরপুরে এখন বিএনপি বলে কিছু নেই। কেউ আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় আর কেউ জাসদে ভিড়েছে। তবে বাড়িঘর ভাঙচুরের সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার করা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। তা ছাড়া অনেক কথা আছে যা বললে জোটের মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে যাবে। আর যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তারা তো পালিয়েই থাকবে।’মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন বলেন, জাসদের লোকজন আওয়ামী লীগের কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এতে করে তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধলসা গ্রামের খুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক চারটি মামলা হয়েছে। এতে শতাধিক মানুষ আসামি। অনেকে জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরেছেন। পুলিশ সব মামলার তদন্ত করছে। এখন কেউ যদি এলাকায় না থাকেন সেটা তাঁর দুর্বলতা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *