বিশেষ ক্ষমতা আইনে থানায় মামলা, ইমামসহ তিন আসামী রিমান্ডে
কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি: ফসল নষ্ট ও অসামাজিক কার্যকলাপের অজুহাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নারীদের ক্ষেত-খামারে (মাঠে) যাওয়া বন্ধ করতে মসজিদে বৈঠক ও মাইকে সিদ্ধান্ত প্রচারের অভিযোগে ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে এগারটায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এমামলা দায়ের করা হয়।এর আগে রাতেই ওই গ্রামে অভিযান চালিয়ে মসজিদের সভাপতি, সেক্রেটারি ও পেশ ইমামসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে গ্রেফতারকৃত ৬ জনকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কুমারখালীর আদালতে হাজির করা হয়। সে সময় এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমারখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিপ¬ব কান্তি সরদার গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিজ্ঞ আদালতে তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত মসজিদের সভাপতি, সেক্রেটারি ও পেশ ইমামের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং অন্য আসামীদের জেল-হাজতের প্রেরণের নির্দেশ দেন।এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলো- কল্যানপুর জামে মসজিদের সভাপতি মাওলানা মো: আলতাফ হোসেন (৪০), সেক্রেটারি মতিউর রহমান (৩৮), পেশ ইমাম আবু মুছা (৩৬), সন্দেহভাজন আসামী আবুল হোসেন (৪০), আনছার (৫০) ও দাউদ সেখ (৩৮)। গত ৮ ডিসেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কুমারখালীর শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর জামে মসজিদে নারীদের ক্ষেত-খামারে যাওয়া বন্ধে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত সংবাদ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে পুলিশ মসজিদ কমিটির নেতাসহ বৈঠকে উপস্থিত ও জড়িতদের গ্রেফতার করে। পরে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ রাজিব আল রশিদ বাদী হয়ে মসজিদ কমিটির নেতাসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।এ ব্যাপারে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: শাহীনুজ্জামান বলেন, নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার। নারীরা ক্ষেত-খামারে যেতে পারবেনা এই মর্মে মসজিদ থেকে যে ঘোষনা প্রচার করা হয়েছে। তা প্রত্যাহার করে বুধবার সকালে পুনরায় মসজিদের মাইকে নারীরাও ক্ষেত-খামারে যেতে পারবেন এই মর্মে আরেকটি ঘোষনা প্রচার করা হয়েছে। শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ্উদ্দিন খান তারেক বলেন, নারীরা মাঠে যেতে পারবেনা এ ব্যাপারে মসজিদের বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা মসজিদের মাইকে প্রচার করা মোটেও উচিত হয়নি।উলে¬খ্য, গত ৮ ডিসেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে জরুরী আলোচনার নামে নারীদের ক্ষেত-খামারে যাওয়া বন্ধ করতে বৈঠকের আয়োজন করা হয়।ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কল্যাণপুর জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা মো: আলতাফ হোসেন, সাধারন সম্পাদক মতিউর রহমান, পেশ ইমাম আবু মুছা, সহসভাপতি মজিবর রহমান মাষ্টার, সিরাজ প্রামানিক প্রমূখ। ওই বৈঠকের শুরুতেই পেশ ইমাম আবু মুছা নারীদের ইচ্ছেমতো মাঠে যাতায়াত বন্ধের বিষয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, নারীরা মাঠে গিয়ে উঠতি ফসলের ক্ষতি করে, নিজেরা নানা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত হয় এবং মাঠে নারীদের একা পেয়ে অনেকে অসমাজিক কাজের প্রতি উৎসাহী হয়ে ওঠে। এ ছাড়াও তিনি কোরআন-হাদিসের আলোকে বক্তব্য উপস্থাপন করে নারীদেরকে ফসলের মাঠে যাওয়া বন্ধ করতে ও ফসল রক্ষার্থে মাঠ চৌকিদার নিয়োগের পরামর্শ দেন। বৈঠক শেষে নারীদের ফসলের ক্ষেতে যাওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়। আর মসজিদের মাইকে নারীদের মাঠে যাওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রচারের ঘটনা নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় নারী সংগঠন সহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিন্দা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।