গৌরব ও বিজয়ের মাস ডিসেম্বর


ঢাকা প্রতিনিধি: আজ ১ ডিসেম্বর। বাঙালির গৌরব ও বিজয়ের মাস শুরু। আমাদের গৌরবের এবং গর্বের মাস এটি। একটি গর্বিত জাতি হিসেবে সগর্বে মাথা উঁচু করার স্পর্ধা আমরা অর্জন করি এ মাসেই। সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং আত্মদানের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠার সরল রাজপথে আমরা প্রবেশ করেছি ডিসেম্বরেই। তাই জাতির কাছে ডিসেম্বর হয়ে উঠেছে বিজয়ের মাস। এ মাসকে আমরা পেয়েছি আমাদের বিকশিত সত্তার উজ্জ্বল প্রতীকরূপে, আমাদের জাতীয় অর্জনের শ্রেষ্ঠতম স্মারক হিসেবে। আমরা ভুলিনি, আমাদের বিজয় এসেছে রক্তসিক্ত পথে। এসেছে এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ছোপ ছোপ রক্তের সিঁড়ে বেয়ে। এক নদী রক্তের তীর ঘেঁষে। নিজের রক্তের বিনিময়ে এ বিজয় অর্জিত বলেই এটি আমাদের এত কাঙ্ক্ষিত সম্পদ। আট মাস যুদ্ধের পর নভেম্বরের শেষ থেকেই ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধে। ৩ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনি তথা ভারতের সশস্ত্র বাহিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে আক্রমণ শুরু করে পাক হানাদার বাহিনির বিরুদ্ধে। একে একে সীমান্তবর্তী সব পাকিস্তানের দখলে থাকা বর্ডার অবজারবেশন পোস্টগুলো (বিওপি) দখলে আসতে শুরু করে। পিছু হটে ঢাকার দিকে চাপতে থাকে হানাদাররা। মূলত ৯ ডিসেম্বরের মধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়ে তারা। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তথা তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে পাক বাহিনি আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। ওইদিন বিকেলে পরাজয়ের দলিলে সই করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনির জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী। একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন। ওই সময় তার সেই ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতা সংগ্রাম’ শুনে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি। বাঙালির যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই শত্রুর মোকাবেলা করার নির্দেশনা দেন তিনি। আপামর জনতা তার ডাকে সাড়া দিয়ে তখন থেকেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতা নিজ নিজ এলাকায় সাধারণ মানুষকে বাঁশের লাঠি দিয়ে প্রশিক্ষণ দেন। ঝাপিয়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধে। ছিনিয়ে আনেন স্বাধীনতার লাল সূর্য। সেদিন জাতি যে বিজয়তিলক মাথায় ধারণ করে তা এ দেশের জনগণের অর্জন। তা এ দেশের ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবীর অর্জন। গ্রামের কৃষক-শ্রমিক-দুরন্ত তরুণের কীর্তি। শহরের সংস্কৃতিসেবী-বুদ্ধিজীবী-সাধারণ মানুষে কীর্তি। তারাই রক্ত দিয়েছেন। তারাই স্বাধীনতার অগ্রপথিকের ভূমিকায় ছিলেন। তাদেরই হৃদয় নিংড়ানো রক্তধারায় সৃষ্টি হয়েছে স্বাধীনতার মহান সৌধটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *