সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের সহকারীর বদলির আদেশ নিয়ে বিপাকে
রেজওয়ান ভ্রাম্যমান রিপোর্টার: সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারীর দফায় দফায় বদলির আদেশ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সিভিল সার্জন। বদলি ঠেকাতে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রতিষ্ঠানের দলীয়প্রধান পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছে প্রধান সহকারী। জানা যায়, প্রধান সহকারী আশেক নওয়াজ সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসে যোগদান করেন ২০১৪ইং সালের ১৪ মে। সেখান থেকে প্রধান সহকারীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রাক্তন সিভিল সার্জন উৎপল দেবনাথ সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসে যোগদান করেন ০১/০২/২০১৬ইং ও ০২/০৬/২০১৭ইং সালে কর্মস্থল থেকেই অবসর গ্রহণ করেন। দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে জাইকা সাহায্য সংস্থা সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে হাসপাতালের উন্নয়নমূলক কাজ ত্বরান্বিত করতে ১০টি মোটরসাইকেলসহ কয়েক লক্ষ টাকার চিকিৎসাকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অনুদান হিসাবে প্রদান করেন সিভিল সার্জন বরাবরে। মটরসাইকেলসহ সকল মালামাল সরকারী সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করে সরকারী খাতাপত্রে লিপিবদ্ধ করার কথা থাকলেও তা তিনি করেননি, প্রধান সহকারীর যোগসাজশে অফিস সূত্র থেকে জানা গেছে। অফিস সূত্র থেকে আরও জানা যায়, প্রধান সহকারীর যোগসাজশে প্রাক্তন সিভিলসার্জন একটি হিরো হোন্ডা ১০০ সিসি মটরসাইকেল তার নিজের বাড়ি বাগেরহাটের চুনকাটি গ্রামে পাঠান। সিভিল সার্জন ডা. তওহীদুর রহমান যোগদান করার পর সরকারী মালামাল কোথায় কি অবস্থায় আছে খোঁজখবর করাকালীন সময়ে জানতে পারেন, জাইকা থেকে দেওয়া অনুদানের কোনো মালামালের সঠিক হিসাব-নিকাশ সরকারী খাতাপত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়নি বলে দায়িত্বরত সিভিল সার্জন নিশ্চিত হন। সিভিল সার্জন তাওহিদুর রহমান প্রধান সহকারীর কাছে জানতে চান ১০টি মটরসাইকেল কাকে কীভাবে দেওয়া হয়েছে? তখন প্রধান সহকারী জানান, প্রাক্তন সিভিল সার্জন একটি হিরো হোন্ডা ১০০ সিসি মটরসাইকেল তিনি তার নিজ বাড়ি বাগেরহাটের চুনকাটি গ্রামে পাঠিয়েছেন বাকি নয়টি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ অফিসের কাজে ব্যবহার করছে। বিষয়টি জানাজানির পর প্রধান সহকারী চাপের মুখে প্রাক্তন সিভিল সার্জনকে অবগত করেন এবং কয়েক দিন পরই তিনি মটরসাইকেলটি লোক দ্বারা সিভিল সার্জন অফিসে ফেরত পাঠান। প্রধান সহকারী প্রাক্তন সিভিল সার্জন থাকাকালীন সময় থেকে অত্র জেলা শহরের ৬৬টি ক্লিনিক ও ১০টি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। জেলা শহরের ক্লিনিকগুলো জুন হতে জুন প্রতি বছর রেজিস্ট্রেশন করতে তাদের ১০ বেডের জন্য সরকার নির্ধারিত ৫০০০ টাকা, ১৫ বেডের জন্য ৭০০০ টাকা, ২০ বেডের জন্য ১০,০০০ টাকা, ৩০ বেডের জন্য ১৫,০০০ টাকা ও জেলা শহরের ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলোর রজিস্ট্রেশন করতে সরকারী ফি ১০০০ টাকা জমা করার কথা থাকলেও প্রধান সহকারী কাগজেকলমে নিয়ম মাফিক জমা দেখিয়ে ক্লিনিক মালিকদের নিকট থেকে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিকদের নিকট থেকে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করেন। অপরদিকে জেলার সাতটি উপজেলা শ্যামনগর ১৫, কালিগঞ্জ ১৪, আশাশুনি ৯, তালা ৬, পাটকেলঘাটা ৮, কলারোয়া ২৯, দেবহাটায় ৬টি; মোট ৮৭টি ক্লিনিক থেকে অনুরূপভাবে উৎকোচ নেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলার ক্লিনিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান। তার মুঠোফোনে কথা বললে তিনি অভিযোগগুলো তুলে ধরেন। তিনি আরও জানান, প্রধান সহকারী বিগত ২-৩ বছরের ব্যবধানে ব্যবসায়ীদের চাপ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, প্রধান সহকারীকে তার দাবিকৃত উৎকোচ না দিলে বিভিন্ন অজুহাতে ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান ও রেজিস্ট্রেশন রিনিউ না করার ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকেন। ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে সাতক্ষীরার কাটিয়া লস্কর পাড়ায় চারতলা একটি বিলাসবহুল বাড়ি বানিয়েছেন তিনি। এসব বিষয়ে তার মুঠো ফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি ফোনটি কেটে দেন। তার এই দুর্নীতি জানাজানি হলে কর্তৃপক্ষ তাকে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস হতে বদলি করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অভয়নগর যশোরে অর্ডার করেন, সেখানে তিনি যোগদান না করে অর্ডার চ্যালেঞ্জ করে অর্থের বিনিময়ে এ অর্ডার পরিবর্তন করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রধান সহকারী হিসাবে অর্ডার করান, সেখানে কর্মকর্তা কর্মচারীদের আপত্তির মুখে যোগদান করতে না পারায় পুনরায় সাতক্ষীরার কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি হন। সেখান থেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পুনরায় সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসে অর্ডার করিয়ে গত ৬/১১/২০১৭ইং তাং যোগদান করেন। এদিকে দায়িত্বে থাকা প্রধান সহকারী মোহাঃ শওকত হোসেন এমকে, আশেক নওয়াজ যোগদানের পূর্বেই ছুটি নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। ফলে আশেক নওয়াজ স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব নিতে না পারায় সে সিভিল সার্জন-এর চেম্বারে বসে তাকে পরামর্শ দেন যে, বোর্ড করে রুমের দরজার তালা ভেঙে ও আলমারির তালা ভেঙে জরুরি খাতাপত্র ও কাগজপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু সিভিল সার্জন তওহিদুর রহমান ভাঙ্গাভাঙ্গি না করে অপেক্ষা করতে বলেন। তিনি আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে তাকে রেজিস্ট্রি ডাকে চিঠি দিয়ে অবগত করি, এর পর যদি সে না আসে তখন নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবেÑ একথা বলায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে চেম্বার ত্যাগ করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, কলারোয়া উপজেলা হাসপাতালে যোগদান করার পর ক্ষিপ্ত হয়ে রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতার ডিও লেটার নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে পুনরায় সিভিল সার্জন অফিসে বদলির অর্ডার করান। ফলে বিপাকে রয়েছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। অভিযোগ উঠেছে, তার আচরণে সিভিল সার্জন অফিসের কর্মচারীরা সকল সময়ে ত্রাসের মধ্যে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। অপরদিকে যদি কেহ পিআরএলএ যায় তাহলে তাকে উৎকোচ হিসাবে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা দিতে হয়। উৎকোচ দিতে না পারলে তার পিআরএল মঞ্জুর হয় না এমনটি অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট দাপ্তারিক সূত্র থেকে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জনের সাথে তার মুঠো ফোনে কথা বললে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।