সুন্দরগঞ্জে টাকা চুরি সন্দেহে মধ্যযুগীয় কায়দায় শিশু নির্যাতন
সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে টাকা চুরির সন্দেহে মধ্যযুগীয কায়দায় এক কাজের শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতিত শিশু নয়ন (১২) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় শিশুর মা থানায় মামলা দায়ের করেছে। ঘটনাস্থল সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার রামভদ্র কদমতলা গ্রামের মৃত- আব্দুল আউয়ালের ছেলে নয়ন (১২) প্রতিবেশি মৃত আব্দুল বাতেনের ছেলে কবির হোসেনের মুরগীর খামারে কাজ করত। গত শনিবার (৪ নভেম্বর) সকালে কবির হোসেনের বসত ঘর থেকে ১০ হাজার টাকা চুরি হয়। এ টাকা চুরির জন্য কবির হোসেন নয়নকে সন্দেহ করে সারাদিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু নয়ন টাকা চুরি করেনি বলে জানায়। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে কবির হোসেন তার ভাই আব্দুল আজিজ ও প্রতিবেশি আলহাজ্ব ফরিদের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলাম এবং বাবলু চন্দ্রের ছেলে রিপন চন্দ্রসহ ৪জন শিশু নয়নকে মুরগীর খামারের পিছনে থাকা গাছের সাথে রশি দিয়ে হাত বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। শিশুটিকে প্রথমে চর থাপ্পর ও লাঠি দ্বারা আঘাত করে। এছাড়া ডান হাতের আঙ্গুলে পিন ঢুকে দিয়ে গলা চেপে হত্যার চেষ্টা করে। এসময় শিশুটি গুরুতর আহত হলে মাটিতে ফেলে রাখা হয়। নয়নের মা নুরজাহান জানান, ছেলেকে নির্যাতন করার খবর পেয়ে ৩/৪জনকে সাথে নিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি। তিনি আরো জানান ছেলে হাসপাতালে নিতে চাইলে তারা বাঁধা দিয়ে হুমকি প্রদান করে। বাধ্য হয়ে নুরজাহান বেওয়া বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ফোন দেয়। সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মুমূর্ষ অবস্থায় নয়নকে ভর্তি করে দেয়। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় শিশু নয়ন ব্যাথার চোটে কাতরাচ্ছে। এসময় নয়নের মা জানান, নয়নের বাবা ছিল শ্রমিক। গত ৩ বছর আগে তিনি মারা যান। মারা যাবার পর থেকে অতি কষ্টে নয়নকে খাওয়াইতেছি। এমতাবস্থায় ৫/৬ মাস আগে নয়ন মাসিক আড়াই হাজার টাকা মজুরিতে কবির হোসেনের মুরগীর খামারে কাজ নেয়। তিনি আরো জানান, আমার ছেলে সরল সোজা। সে কারো টাকা চুরি করতে পারে না। হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন নয়ন জানান, আমি টাকা চুরি করিনি। কিন্তু আমার কথা বিশ্বাস না করে গাছের সাথে আমাকে বেঁধে নির্যাতন করেছে। এ ঘটনায় নয়নের মা নুরজাহান বেওয়া বাদি হয়ে গতকাল রোববার ৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্যে আসামী জহুরুল ইসলাম বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ৪ পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন নাশকতার ডজন খানিক মামলার আসামী। থানার ওসি আতিয়ার রহমান জানান, আসামীদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চলছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম গোলাম কিবরিয়া চিকিৎসাধীন শিশু নয়নকে দেখতে হাসপাতালে যান এবং তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। তিনি জানান, শিশু নয়নের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন তার পাশে থাকবে।