নির্বিঘ্নে পরকীয়া চালাতেই প্রেমিক দিয়ে নিজ স্বামী-মেয়েকে খুন
ঢাকা প্রতিনিধি: নির্বিঘ্নে পরকীয়া চালিয়ে যেতেই রাজধানীর বাড্ডায় প্রেমিক শাহীন মল্লিককে নিয়ে স্বামী জামিল শেখকে হত্যা করেছেন স্ত্রী আরজিনা বেগম। আর তা দেখে ফেলায় ৭ বছরের মেয়ে নুসরাতকেও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর ডাকাতির নাটক সাজান আরজিনা। প্রেমিক শাহীনের কাছে দিয়ে দেন নিজের সব গহনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিনয় শুরু করেন পুলিশসহ সবার কাছে। বাড্ডায় বাবা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডে স্ত্রী আরজিনা বেগম ও তার প্রেমিক শাহীন মল্লিক পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। শনিবার (৪ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি জানান, আরজিনা বেগম ও জামিল ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাড্ডায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। একই বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন শাহীন। ওই বাড়ির প্রথম তলায় থাকতেন আরজিনারা। আর তৃতীয় তলায় থাকতেন শাহীন ও তার স্ত্রী মাসুমা। মাসুমা সারাদিন অন্যের বাসায় কাজ করতেন। জামিল ছিলেন ড্রাইভার। আরজিনা বেগম ও শাহীন দু’জনই সারা দিন বাসায় থাকতেন। সে সুযোগে তাদের মধ্যে নানা কারণে নৈকট্য হয়। শাহীন বিভিন্নভাবে প্রশংসা করায় তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে আরজিনা। কয়েকদিন পর ওই বাড়ি ছেড়ে জামিল ও আরজিনা ময়নারবাগের ৩০৬ নম্বর বাড়ির ছাদে ৭ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নেন। নতুন বাসায় এসেও শাহীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন আরজিনা। নিয়মিত তার সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। শাহীনকে কাছে পেতে নতুন কৌশল অবলম্বন করেন আরজিনা। সংসারের খরচ কমানোর কথা বলে শাহীনের পরিবারকে সাবলেট দেয়ার পরামর্শ দেন স্বামী জামিলকে। পূর্বপরিচিত হওয়ায় শাহীন ও তার স্ত্রীকে ৩ হাজার টাকায় সাবলেট দেন জামিল। নতুন বাসায় এসে আরজিনা ও শাহীনের সম্পর্ক আরও গভীর হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে আরজিনা জামিলকে তালাক দিয়ে শাহীনের কাছে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে শাহীন তাকে তালাক না দেয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে দুজন মিলে জামিলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। উপ-কমিশনার জানান, বুধবার (১ নভেম্বর) রাতে একই বিছানায় ঘুমান জামিল, আরজিনা, নুসরাত ও তার ছোট ভাই। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আরজিনা ঘরের দরজা খুলে রেখে ঘুমান। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শাহীন বাসার নিচ থেকে একটি কাঠ নিয়ে আসেন বাসায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওই দিন রাতের খাবার শেষে রুমের দরজা খোলা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন আরজিনা। মধ্যরাতে শাহীন ঘরে ঢুকে কাঠ দিয়ে জামিলের মাথায় আঘাত করে। জামিল ঘুম থেকে জেগে গিয়ে শাহীনকে বলতে থাকেন, ‘তুই আমাকে মারিস কেন?’ এরপর শাহীন ফের তাকে আঘাত করে। তখন মেয়ে নুসরাত জেগে যায়। সে শাহীনকে প্রশ্ন করে, ‘শাহীন আঙ্কেল, আব্বুকে মারো কেন?’ জামিল অচেতন হয়ে গেলে আরজিনা ও শাহীন রুমের বাইরে চলে যায়। এরপর ঘরে ফিরে নুসরাতের গলা চেপে ধরে শাহীন। মেয়েটি চিৎকার করলে তার মুখে বালিশ চাপা দেয় সে। অন্য কক্ষে থাকা শাহীনের স্ত্রী চিৎকার শুনে আরজিনাদের রুমে চলে আসে। এরপর শাহীন তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বলে, ‘ঘটনা একটা ঘটে গেছে। এখানে থাকা যাবে না।’ ভোরে বাড়ির গেট খুললে স্ত্রী মাসুমাকে নিয়ে খুলনায় চলে যান শাহীন। শাহীনের কাছে আরজিনা নিজের গহনা দিয়ে দেন। আর বাসায় স্বামী ও মেয়ের লাশ নিয়ে ডাকাতির নাটক সাজান। তিনি বাসার সিঁড়ির সামনে বসে থাকেন। ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় ওই বাড়ির এক লোক আরজিনাকে দেখে যায়। নামাজ পড়ে ফেরার সময়ও একই জায়গায় আরজিনাকে দেখতে পেয়ে, তিনি তার স্ত্রীকে খোঁজ নিতে বলেন। তখন প্রতিবেশী সবাই জেনে যায় এই হত্যাকাণ্ডের কথা। প্রতিবেশীদের কাছে আরজিনা দাবি করেন, ৩-৪ জন ডাকাত তার ঘরে ডাকাতি এবং স্বামী-সন্তানকে হত্যা করেছে। এমনকি তাকে ধর্ষণও করেছে। মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘এ ঘটনা তদন্তে আশপাশের অনেকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা শিশুও কিছু তথ্য দিয়েছে। সব মিলে এ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই দু’জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হবে। এর সঙ্গে আর কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। আর কোনও উদ্দেশ্য ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে।’ গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ময়নারবাগের পাঠানভিলা নামের একিট বাড়ির তৃতীয় তলায় ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় বাবা জামিল শেখ ও মেয়ে নুসরাত জাহানের মরদেহ। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় মামলা করেন নিহত জামিল শেখের ভাই শামীম শেখ। নিহত জামিলের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের করপাড়া ইউনিয়নের বনপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম বেলায়েত শেখ। তিনি তেজগাঁওয়ে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক ছিলেন। পাঠান ভিলার তৃতীয় তলায় দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি।