আত্রাইয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন গোয়ালঘরে পরিণত
রুহুল আমিন,আত্রাই (নওগাঁ) সংবাদদাতা : নওগাঁর আত্রাইয়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন গোয়ালঘরে পরিণত হয়েছে। সরকারের অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে একটি দৃশ্যমান ভবন তৈরি করা হলেও ভবনটি এখন পাঠশালার পরিবর্তে জনগণের খড়িঘর ও ছাগল গরু রাখার ঘরে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ এখানে কোন শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা এ বিদ্যালয়ে যায় না। ফলে অঘোষিত ভাবে দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে এ বিদ্যালয়। সরেজমিনে তথানুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার বিশা ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন একটি গ্রাম তেজনন্দী। প্রায় সাড়ে চার হাজার লোকের বাস এ গ্রামে। এখানে নেই কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেই কোন হাইস্কুল, নেই কোন মাদ্রসা। এ গ্রামের দুই শতাধিক শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য নদী পারি দিয়ে তাদের যেতে হয় বৈঠাখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অথবা ২ কিলোমিটার মেটোপথ অতিক্রম করে যেতে হয় সমসপাড়া না হয় যেতে হয় শ্রীধর গুড়নই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গ্রামের শিশুদের এ দুর্দশা লাঘবে ১৯৯০ সালের দিকে ওই গ্রামের মোশারফ হোসেন, ফয়েজ উদ্দিন, রনজিৎ কুমার সরকার ও নাজমা বেগম একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য নিজস্ব অর্থায়নে বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতক জায়গা ক্রয় করে চাটাইয়ের বেড়া ও টিনের ছাউনি দিয়ে ঘর নির্মাণ করে পাঠদান শুরু করেন। তারা ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিনা বেতনে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসেন। এরই এক পর্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরটি বিধ্বস্ত হলে অর্থাভাবে এটি আর সংস্কার করতে না পারায় সেখানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যায়। এদিকে বর্তমান সরকার ২০১২ সালে বিদ্যালয় বিহীন এলাকায় ১৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের একটি প্রকল্প গ্রহন করেন। সে প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ সালে স্থানীয় সাংসদ ইসরাফিল আলমের প্রচেষ্টায় প্রায় ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে তেজনন্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি দৃশ্যমান ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবন নির্মাণ করা হলেও সেখানে কোন শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ায় বর্তমানে সেটি গোয়ালঘরে পরিণত হয়েছে।
ওই গ্রামের বাবু বলেন, এত সুন্দর ভবন থাকলেও শিক্ষক না থাকায় আমাদের শিশুদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়ে বৈঠাখালী স্কুলে যেতে হয়। প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক রনজিত কুমার সরকার বলেন, আমরা চেষ্টা করেছিলাম বিদ্যালয়টি চালু রাখতে। কিন্তু ভবন হওয়ার পর আমাদেরকে শিক্ষকতার আর সুযোগ দেয়া হয়নি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রোখছানা আনিছা বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। বিদ্যালয়টি এভাবে পরিত্যক্ত এটি আমার জানা ছিল না। অবশ্যই আমি এব্যাপারে উপরে লিখব এবং দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের মধ্যদিয়ে বিদ্যালয়টি পুনঃচালুর চেষ্টা করবো।