ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কিস্তির টাকা পরিশোধে ব্যর্থ,সিও এনজিওর মামলায় ঘরছাড়া দুস্থ মহিলারা

pic (7)
প্রতিনিধি ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের শৈলকুপার বিভিন্ন গ্রামে সুদের টাকা আদায় করতে সিও নামে একটি এনজিও জবরদস্তি মুলক ভুমিকায় অবতীর্ন হয়েছে। গ্রামের হতদরিদ্র মহিলাদের ভাগ্য পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়ে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ভিটা ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে। মামলার কারণে ঋন নেওয়া মহিলারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ভুক্তভোগী মহিলাদের অভিযোগ এনজির কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৬০জন হতদরিদ্র মহিলার নামে মামলা করা হয়েছে। কয়েকজন আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। আবার অনেকে গ্রেফতার এড়াতে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীরা জানান, শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ এলাকার লক্ষনদিয়া, গোকুলনগর, কদমতলা, তামিনগর, ব্রাহিমপুর মোল্লাপাড়া, বাহাদুরপুর, দুধসরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের হতদরিদ্র মহিলারা ক্ষুদ্র ঋন নেন এনজিও সোসিও ইকোনমিক হেলথ এডুকেশন অর্গানাইজেশন (সিও) নামে একটি এনজিওর কাছ থেকে। দুর্মুল্যের বাজারে সংসার চালিয়ে অনেকে ঋনের কিস্তি দিতে পারেনি। এনজিও কর্মকর্তা ও সমিতির ম্যানেজারের নিকট সময় চেয়ে কাকুতি মিনতি করে আসছিলো। কিন্তু সিও এনজিও সংস্থার মনিটরিং অফিসার গোলজার হোসেন বাদী হয়ে ঝিনাইদহের একটি আদালতে মামলা ঠুকে দেন। মামলার ওয়ারেন্ট পেয়ে শৈলকুপা থানা পুলিশ উমেদপুর, মিজাপুর ও দুধসর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ২২ মহিলা সদস্যকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠান। পুলিশী অভিযানের খবর পেয়ে স্বামী, সন্তান ও ঘরসংসার ফেলে বাকী মহিলারা আত্মগোপনে চলে যান। গতকাল আদালতে জামিন নিতে আসা শৈলকুপার ব্রাহীমপুর গ্রামের আয়শা খাতুন অভিযোগ করেন তিনি ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করেছিলেন। আসল টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এখন সুদের ২৭০০ টাকা পরিশোধ করা হয়নি বলে মামলা করা হয়েছে। অনেকের টাকা পরিশোধ হওয়ার পর তাদেরকেও হয়রানী করার জন্য মামলার আসামী করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। লক্ষনদিয়া গ্রামের রিজিয়া ও রেহেনা খাতুন অভিযোগ করেন, আমরা আদালত থেকে কোন নোটিশ পায়নি। তাছাড়া টাকার পরিমানও আহামরি বেশি নয়। কারো কারো কাছে ১১’শ থেকে সবোর্চ্চ ৫ হাজার টাকা সুদসহ আসল পাবে। কদমতলা গ্রামের রাশিদা খাতুন অভিযোগ করেন, অনেকে আসল পরিশোধ করেছে। এখন সুদের টাকার জন্য মামলা করে হয়রানী করা হচ্ছে। শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উসমান গনি জানান, এনজিওরা টাকা আদায়ে এমনটি করলে তা হবে দুঃখজনক। তিনি বলেন উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি আছে। মামলার আগে তারা সেখানে জানাতে পারতো। তিনি দুস্থ মহিলাদের বিরুদ্ধে মামলার কথা জানেন না বলে জানান। তিনি এ ব্যাপারে উপজেলা পুশাসনের পক্ষ থেকে মহিলারা যাতে হয়রানী না হন সে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে শৈলকূপা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম হোসেন মোল্লা জানান, এভাবে মামলা করা ঠিক হয়নি। তাদের সময় দেওয়া উচিত ছিল। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এঘটনার নিন্দা জানায়। শৈলকূপা থানার ওসি আলমগীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আদালত থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানা পাওয়ার পর পুলিশ ২২ জন মহিলাকে গ্রেফতার করে তাদের আদালতে পাঠায়। মামলার বিষয়ে সিও এনজিওর নির্বাহী পরিচালন সামছুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ঋণ গ্রহীতাদের কাছে আমার কর্মীরা বারবার তাগাদা দিয়েও যখন টাকা আদায় করতে পারছিলো না তখন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই আদালতের স্মরনাপন্ন হয়েছি। তিনি জানান, ২০১০/১১ অর্থ বছরে এই ঋন দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু ব্যাংক ও সরকারের টাকা আদায়ে আমরা নিয়ম মেনেই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *