মাগুরার মধুমতি নদীর ভাঙন প্রতিরোধে তীর সংরক্ষণ; নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে কাশিপুর গ্রামের মানুষ

Magura modhumoti nodi rokha pic(1)
মাগুরা প্রতিনিধি: মহম্মদপুর সদর ইউনিয়নের মধুমতি নদী তীরে টেকসই ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের’ কাজ হওয়ায় নতুন করে বাচার স্বপ্ন দেখছে কাশিপুর গ্রামের মানুষ। ভাঙনের ভয়ে যারা বসতভিটা জমি বিক্রি করে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তারাও এখন ফিরে আসছেন তীরে।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ভাঙনকবলিত মধুমতি নদীর তীরে কাশিপুর গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘টেকসই ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের’ কাজ শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে শত ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এতে নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে থাকা কবরস্থান, স্কুল মসজিদ ও হাটবাজারসহ বহু স্থাপনা রক্ষা পাবে। একই সাথে স্বাভাবিক জীবন জীবীকা নির্বাহ করতে সক্ষমহবে সর্বস্বান্ত হওয়া নদী তীরবর্তি এলাকার শতাধিক পরিবার। বাকি কাজ দ্রুত শেষ হবে হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় মহম্মদপুর উপজেলার অন্তর্গত কাশিপুরের সংলগ্ন এলাকাকায় মধুমতি নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। তিনটি প্যাকেজে ৩০৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে তীর সংরক্ষণ কাজে ব্যায় হচ্ছে ৩ কোটি ৪১ লাখ ১৮ হাজার ৮৪৯ টাকা। ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল কার্যাদেশ পায় খন্দকার আলী হায়দার নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একই মাসের ১৬ তারিখে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মাগুরা-২ আসনের সাংসদ সদস্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড.বীরেন শিকদার। নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হয়েছে। আরসিসি ব্লক স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। নদী তীরে ব্লক তৈরি করে রাখা হয়েছে। বিশেষ ধরনের কাপড়ে তৈরি বস্তায় বালু ভর্তি করে মেশিন দিয়ে সেলাই করে দ্রুত সেগুলো স্থাপন শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ২৪ মে কাজ শেষ হয়োর কথা থাকলেও নির্ধরিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হয়েছে। মধুমতি তীরবর্তি স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভাঙ্গন রোধে কাজ হওয়ায় তারা নতুন করে স্বাচ্ছন্দে জীবন জীবীকা নির্বাহের পাশাপাশি নিশ্চিন্তে নদী তীরবর্তি এলাকায় বাসবাস করতে পারবেন। বসুরধুলজুড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নদী তীরের বাসিন্দা রিয়াজুর রহমান বলেন, মধুমতি নদী তীরে সংরক্ষণ কাজ হওয়ায় শত শত মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, গত বর্ষায় মসজিদ ঘরবাড়িসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এখন টেকসই ভাবে নদী তীর সংরক্ষণ হচ্ছে। তাই এ এলাকার মানুষের মধ্যে নদীভাঙনের আতঙ্ক কেটে গেছে। এই প্রকল্পের ফলে রক্ষা পেল উপজেলার সবচেয়ে বড় কবরস্থান ও ঈদগাহসহ হাজার হাজার একর জমি ও শহর রক্ষা বাঁধ।’ভাঙন কবলিত এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মকবুল হোসেন মুকুল জানান,‘তার ওয়ার্ড কাশিপুরে নদী ভাঙন ছিল প্রধান সমস্যা। ভাঙনে শতশত পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে গেছে। দেরিতে হলেও তীর সংরক্ষণের কাজ হওয়ায় শতাধিক পরিবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারলো।’ কাশিপুর গ্রামের আসমা বেগম,রইস মোল্যা, নওশের শেখ, অলিয়ার রহমানসহ অনেকে জানান, ‘বছরের পর বছর ধরে নদীর ভাঙনে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়তাম। তিন চারবার নদীভাঙনে বসতবাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। এখন তীরে সংরক্ষণ কাজ হওয়ায় পাড় রক্ষা পেয়েছে। এখন আর নদীভাঙনের ভয় নেই, তাই ফিরে এসেছি। তীর সংরক্ষণ করায় আমাদের আর অন্যত্র যেয়ে বসবাস করতে হবে না।
ভাঙনকবলিত এলাকায় বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে মাগুরা-২ আসনে এমপি মেজর জেনারেল (অবঃ) এ টি এম আব্দুল ওয়াহহাব, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার আমার সংবাদকে বলেন,‘ ৩ কোটি ৪১ লাখ ১৮ হাজার ৮৪৯ টাকা ব্যায়ে মধুমতি নদীর কাশিপুর এলাকার তীর সংরক্ষণের কাজ শেষ পর্যায়ে। অচিরেই নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ এর সুফল ভোগ করবে উল্লেখ করে তিনি জানান- এর আগে মধুমতির তীরবর্তী ঝামা বাজার এলাকায় ৮ কোটি টাকা ব্যায়ে তীর সংরক্ষণ কাজ শেষ হয়েছে। এতে করে ঝামা বাজার রক্ষা পেয়েছে। এ ছাড়া মহম্মদপুর উপজেলাকে রক্ষা করতে আরো ২২ কোটি টাকা ব্যায়ে মধুমতি নদী ভাঙন কবলিত অন্যান্য এলাকায় পর্যায়ক্রমে তীর সংরক্ষনের করা হবে।’ মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ আমার সংবাদকে বলেন, ‘নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ শেষ । উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিবীড় তত্ত্ব¡াবধানে কাজের প্রতিটি স্তরে মান বজায় রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আশির দশকে পদ্মার শাখা মধুমতি নদীর ভাঙন তীব্র হয়। প্রতি বর্ষা মৌসুমে মহম্মদপুর উপজেলার মধুমতি তীরবর্তী তিনটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে ভাঙন আবার ভয়াবহ রুপ ধারণ করে। মধুমতি গ্রাস করেছে আবাদি জমি, বসতভিটা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ গোরস্থান ঈদগাহ ও মাদ্রাসাসহ অসংখ্য স্থাপনা। এসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জায়গা জমি, ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। গৃহহারা এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন বাঁধ ও চরাঞ্চলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *