প্রধানমন্ত্রীর শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত ভূঞাপুরের চরাঞ্চল ও ভাঙা ঘর গুলোও

pic-1(1)
এ কিউ রাসেল, গোপালপুর (টাঙ্গাইল): ঘরের চারদিকে পাটখড়ির বেড়া, উপরে টিনের ছাউনি দিয়ে আবাস্থল তৈরি করেছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের কল্পনা বেগম। স্বামী রফিকুল ইসলাম দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। কিছুদিন আগেও ঘরটিতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে কুপির নিবু নিবু আলোতে সন্তানদের লেখাপড়া, খাওয়া-দাওয়া ও সংসারের নিত্যদিনের কাজ চলতো। আজ সেই ঘরে জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাল্ব ও ইলেক্ট্রনিক পাখা। বিদ্যুতের আলোতে ঘর আলোকিত হওয়ার মধ্য দিয়ে নিজের মনও আলোকিত হয়েছে কল্পনা বেগমের। এখন আর কুপির নিবু নিবু আলোতে খাওয়া-দাওয়া সাড়তে হয়না। ব্যঘাত ঘটেনা সন্তানদের লেখাপড়ায়ও। কষ্ট করতে হয়না গরমের। বিদ্যুতের আলো কল্পনা বেগমের কল্পনায়ই ছিলো। এখন যা বাস্তবে রুপ নিয়েছে। ভাঙা ঘরে থেকেই এক ঝলক তৃপ্তির হাসি হেসে কল্পনা বেগম বলেন, কোনদিন ভাবি নাই ঘরে কারেন্টের আলো জ্বলবে। হুনছি দেশ ডিজিটাল হইছে। ঘরে কারেন্টের আলো পেয়ে মনে হইতাছে, এইডাই ডিজিটাল। দেশ আসলেই উন্নত হইছে। পাটখড়ির বেড়ায় মিটার স্থাপন করা বিদ্যুতের আরেক সুফলভোগী গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়া পাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলাম। কৃষি কাজ করে সংসার চালান তিনি। কল্পনা বেগমের মতো পাটখড়ির বেড়া, উপরে টিনের ছাউনির আবাস্থল তাঁর। ঘরে বিদ্যুৎ পেয়ে বাঁধ ভাঙা আনন্দে আত্মহারা তিনি। জহুরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের আলোতে সন্তানরা লেখাপড়া করবে, রাতের বেলা দু’মুঠো ভাত খাবো এটা কোনদিন ভাবি নাই। বিদ্যুতের আলো পেয়ে মনে হচ্ছে ঘরে চাঁদের আলো পেয়েছি। শুধু কল্পনা আর জহুরুলের বাড়িতেই নয় ভূঞাপুর উপজেলার গোলাবাড়ি, নিকরাইল, নলুয়া, আকালু, আমুলা, নিকলা, সারপলশিয়া, মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া, স্থলকাশি, চিতুলিয়া পাড়া, অলোয়া, গোবিন্দাসী, রাউৎবাড়ি, খানুরবাড়ি, জিগাতলা, গোপিনাথপুর, কয়েড়া, রাজাপুর ভূঞাপাড়া, ডিগ্রীরচর, খনদকার পাড়া, বাসাইলা, রামপুর গ্রাম ঘুরে এরকম অনেক দৃশ্যই চোখে পড়েছে। এখন আর তাদের কুপির নিবু নিবু আলোতে থাকতে হয়না। প্রতিটি ঘরেই জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাল্ব। ঘুরছে ইলেক্ট্রনিক পাখা। ভূঞাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল গোপিনাথপুর, রাজাপুর, ভূঞাপাড়া, ডিগ্রীরচর, খন্দকার পাড়া, বাসাইলা, রামপুর গ্রামের লোকজনের বিদ্যুতের আলো পাওয়া ছিলো কল্পনায়। এখন ওইসব গ্রামগুলোর প্রতিটি ঘরে ঘরেই জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাল্ব। ঘুরছে ইলেক্ট্রনিক পাখা। অধিকাংশ বাড়িতেই রয়েছে ফ্রিজ। ডিসের লাইনে চলছে টেলিভিশন। ল্যাপটপ আর কম্পিউটারও দেখা অনেক বাড়িতে। প্রযুক্তিকে তারা নিয়ে নিয়েছে হাতের মুঁঠোয়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত আজ পুরো এলাকা। মপুর গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী মজিবুর রহমান খান বলেন, স্বাধীনতার পূর্বে জন্মের পর থেকেই এ গ্রামে বেড়ে উঠা। কুপি আর মোমবাতির আলো ছিলো আমাদের নিত্যসঙ্গী। কোনদিন অনুধাবনও করিনি আমার ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলবে, ফ্যান চলবে, ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করবো! বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবেই আজ অসম্ভব সম্ভব হয়েছে। এজন্য দেশের যোগ্য প্রধানমন্ত্রীসহ বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনদের চরাঞ্চলের মেহনতি মানুষের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। গোপিনাথপুর গ্রামের হারুন মিঞা (৪০) বলেন, বিদ্যুত তো নয় যেন সোনার হরিণ পেয়েছি। কখনো ভাবিনি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলবে! দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক সরকার এসেছে। কিন্তু কেউ আমাদের দিকে নজর দেয়নি। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সুফল হিসেবেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপ নিয়েছে। ভূঞাপুর বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৩৪.৪৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ১ লাখ ৯০ হাজার ৯১০ জন লোকসংখ্যার উপজেলায় মোট বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা ২৮ হাজার ৩১২ জন। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা ২৬ হাজার ৪৯৭, বাণিজ্যিক গ্রাহক সংখ্যা ১৫১৩ ও ক্ষুদ্র শিল্পের গ্রাহক সংখ্যা ৩০২ জন। প্রতিনিয়তই বাড়ছে বাণিজ্যিক গ্রাহক সংখ্যা। গড়ে উঠছে কলকারখানা এবং ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগীর খামার। এতে কর্মসংস্থান হচ্ছে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকের।কথা হয় সদ্য স্থাপন করা লেয়ার মুরগীর খামারী বাসাইলা গ্রামের নাসির উদ্দিন (৩০) বলেন, চাঁদে যাওয়ার মতোই দুঃসাধ্য ছিলো এলাকায় বিদ্যুৎ পাওয়া। বর্তমান সরকারের সারা দেশে ডিজিটালের ছোঁয়ার প্রতিফলন হিসেবেই বছর খানেক আগে বিদ্যুৎ পেয়েছি। পড়াশোনা শেষ করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে অনেক আগেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। আজ সেটা কাজে খাটিয়ে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে ব্রয়লার মুরগীর খামার স্থাপন করেছি। দুইজন শ্রমিক কাজ করছে আমার এ খামারে। খরচ বাদে মাস শেষে ৫০ থেকে ৬০হাজার টাকা লাভ হয়। এজন্য চাকরির কথা ভাবছিনা। পেশা হিসেবে এটাকেই বেছে নিয়েছি। এছাড়াও ভূঞাপুর উপজেলায় এক হাজার ৩১৮ জন সেচ পাম্প গ্রাহক রয়েছেন। বিগত বছরগুলোতে বেশিরভাগ সেচ পাম্পগুলো চলতো ডিজেলে। এতে খরচ হতো অনেক বেশি। বর্তমানে সবক’টি সেচ পাম্প চলছে বিদ্যুতে।
আমুলা গ্রামের সেচ পাম্প মালিক কোরবান আলী বলেন, আগে ডিজেলে সেচ পাম্প চালাতাম। খরচ হতো অনেক বেশি। লাভতো দূরের কথা প্রতিবছরই লোকসান গুনতে হতো। এখন বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প চালাই। ফলে সব খরচ বাদ দিয়ে এখন আর লোকসান গুনতে হয়না। লাভই হয়। সরকারের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছানোর সুফল হিসেবেই এ ফল ভোগ করছি। এদিকে এবছরের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূঞাপুর উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। যার সুফল পৌঁছে গেছে ভূঞাপুর উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে। বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত আজ পুরো ভূঞাপুর এলাকা। চরাঞ্চলবেষ্টিত ভূঞাপুর উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনায় পুরো এলাকাবাসী আজ প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
ঘরে ঘরে বিদ্যুতের বিষয়ে ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভূঞাপুরের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়া সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমরা গ্রাহকদের সঠিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে এর মান অক্ষুন্ন রাখতে চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *