সৎ মায়ের দেয়া আগুনে ঝলসে যাওয়ার অভিযোগ পত্নীতলার ফারুকের বিনা চিকিৎসায় নিজ গৃহে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে!!! পত্নীতলার-ধামইরহাট থানায় মামলা না-নেয়ার অভিযোগ
মো: আব্দুর রহিম,পত্নীতলার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর পত্নীতলার সৎ মায়ের দেওয়া আগুনে পুড়ে জীবণ-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কাতরাচ্ছে ফারুক হোসেন (২০) নামে এক দিনমজুর যুবক। আগুনে ঝল্সে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও ওষুধ কেনার প্রয়োজনীয় অর্থ ও ভালদেখাশুনার করার কেউ না থাকায় বাড়িতে ফিরে গিয়ে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। এদিকে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার প্রতিকার লাভের আশায় ভুক্তভোগি ফারুকের নিজের মা ফাইমা বেগম পত্নীতলার ও ধামইরহাট থানায় মামলা দিতে গেলে দুই থানার গড়িমশির কারণে কেহই মামলা গ্রহণ করেননি। আর মামলা না হওয়ায় বড় ধরণের অপরাধ করার পরও এলাকায় বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে ফারুকের সৎ মা মর্জিনা বেগম বলে ভুক্তভোগি ও তাঁর নিজের মায়ের অভিযোগ। সরেজমিনে গিয়ে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে আহত ফারুক পেশায় একজন দিনমজুর। পিতা-মাতার সাথে মায়ের ছাড়াছাড়ি হওয়ায় সে তাঁর মায়ের সাথে নওগাঁ জেলার পত্নীতলার উপজেলার ঘোষনগর ইউনিয়নের ঘোষনগর গ্রামে বাস করতেন। অপর দিকে ফারুকের পিতা আজিজার রহমান ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুণ ইউনিয়নের তালন্দর কাটিপাড়া গ্রামে ২য় বিবাহ করে সেখানে বসবাস কওে আসছেন। ফারুকের সহিত তাঁর পিতার সম্পর্ক ভালো থাকায় সে মাঝে মধ্যেই পিতার সানিধ্যে নেয়ার জন্য পিত্রালয়ে গিয়ে দেখা সাক্ষাত করতেন। আহত ফারুক তালন্দর কাটিপাড়া গ্রামের কাছাকাছি দারকাদিঘী নামক একটি পুকুরে পাহারাদারের কাজও করতেন। ফারুক দিঘীর পাহারাদারের কাজ করে ২৮ হাজার টাকা জমা করেন আর এ টাকা ওপর কু-নজর পড়ে ওই পিতা-সৎ মা মরজিনা বেগমের। তাঁরা বোরো ধানের ওঠারপর টাকা শোধ করার কৌশল ও শর্তে ফারুকের কাছ থেকে উক্ত ২৮ হাজার টাকা প্রায় তিন মাস আগে নিয়ে নেয়। ফারুক সরল বিশ্বাসে পিতা-মাতাকে সমদয় টাকা ধার দেয়। গত ২২ এপ্রিল ফারুক তাঁর পাওনা ২৮ হাজার টাকা চাইতে গেলে রাতে সৎ মা মর্জিনা বেগম, পিতা আজিজার রহমান, প্রতিবেশী এনামুল হক, আতোয়ার হোসেন, জয়নাল মিলে ফারুককে বেদম প্রহার করে এবং একটি ঘরে আটকে রাখে। ওই রাত ভোরের দিকে তন্দ্রাভাব আসলে সৎ মা মর্জিনা বেগম তাঁর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের লেলিহান শিখায় মুহুর্তের মধ্যে গলা থেকে পেট পর্যন্ত শরীরের সম্মুখ ভাগ ঝলসে যায়। দগ্ধ হয়ে ফারুক চিৎকার শুরু করলে গ্রামবাসীরা ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার কওে ওই দিনই সকালেই পতœীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। ফারুকের অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। কিন্তু ফারুকের আর্থিক অসংগতি ও সাথে গিয়ে রাজশাহী মেডিক্যালে গিয়ে সাথে কেউ না থাকায় সে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেনি। কিছুটা বিনা চিকিৎসায় ১৬ দিন পতœীতলা হাসপাতালে বেডে পড়ে থাকার পর গত ৮মে তাঁর নিজের মা ফাইমা বেগম তাঁকে নিজ গ্রাম ঘোষনগরে নিয়ে যায়। আর সেখানেই বর্তমানে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন ফারুক হোসেন। এখন তাঁর বুকে শুধু কখান হাড়।
এ বিষয়ে ফারুকের মা ফাইমা বলেন, হাসপাতালে ফারুককে ১৬ দিন রাখলেও তেমন কোন চিকিৎসা হয়নি। ডাক্তার ও নার্সরা ভালো ব্যবহার করেনি। ছেলের চিকিৎসার আর্থিক সহায়তা নেওয়ার জন্য তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ কাহারো নিকট থেকে সহযোগিতা মিলেনি। থানায় মামলা করার জন্য গেলে সেখানেও মামলা নেওয়া হয়নি। পতœীতলা থানায় গেলে তাঁরা বলেছে ধামইরহাট থানায় যান, আর ধামইরহাট থানায় গেলে তাঁরা বলেছেন পতœীতলা থানায় যান। এমন পরিস্থিতিতে তিনি ভাগ্যের ওপর সন্তানের জীবণ তুলে দিয়ে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে বাড়িতে রেখেছেন। অন্যদিকে ফারুকের সৎ মা মর্জিনা বেগম বলেন, ফারুক নিজের গায়ে নিজে আগুন দিয়ে আতœহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন ওই দিন। এ বিষয়ে পতœীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রঞ্জন কুমার জানায়, রোগীর শারিরীক অবস্থা উন্নত হওয়ায় এবং রোগী বাড়ি যেতে চাওয়ায় তাঁকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ধামইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো: সানোয়ার হোসেন গতকাল শুক্রবার এ প্রতিবেদককে জানায় বিষয়টি তাদের জানা নেই। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানায়। পত্নীতলার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো: জহুরুল হক একই ধরণের অভিমত ব্যাক্ত করেন। পত্নীতলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আব্দুল মালেক জানায় ভুক্তভোগি পরিবার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নিকট আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করলে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।