নারায়ণগঞ্জে জমি দখলে ওসির ‘সহায়তা’

Narayanganj+land+grabber
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানোর পাশাপাশি জমি দখলে ভূমিদস্যুদের সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসির বিরুদ্ধে। তবে ওসি সরাফত উল্লাহ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জেলার পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সানারপাড় এলাকার মোহাম্মদ হোসেন আলী সাউদের বিধবা মেয়ে আসমা বেগমের অভিযোগ, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত তাদের ৪৯ দশমিক ৫০ শতাংশ জমির একাংশ জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার এলাকার আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছেলে সাকিব বিন মাহমুদ ও মো. মহসিন এবং নূর মোহাম্মদের ছেলে মনির। “ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন ধনু হাজি রোড এলাকায় সিদ্ধিরগঞ্জ মৌজার এই জমি আমরা সাত ভাইবোন গত ৫৭ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছিলাম। ওই তিনজন আমাদের সম্পত্তি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলে আমি গত ২৫ এপ্রিল আদালতে আবেদন করি। আদালত ওই জমিতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসিকে আদেশ দেয়। আমি আদেশের নথি নিয়ে ওসির সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে হুমকি দিয়ে থানা থেকে বের করে দেন।” আসমা আরও অভিযোগ করেন, “পরদিন আমি আদালতের আদেশের নথি নিয়ে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল হোসেনের সঙ্গে দেখা করি। তিনি সেটা রাখার জন্য আমার কাছে পাঁচ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। তখন আমি দুই হাজার টাকা দিই। তিনি জমি দেখিয়ে দেওয়ার জন্য লোক পাঠাতে বলেন। “আমি আমার ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী (৩৫), কর্মচারী মো. ওমর ফারুক ও ইমরানকে পাঠাই। সে সময় বিবাদীপক্ষ পুলিশের উপস্থিতিতে ওই জমিতে ঘর তৈরি করছিল। এসআই জাহাঙ্গীর আলম আমার ভাই মোহাম্মদ আলী ও দুই কর্মচারীকে আটক করেন সে সময়। পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে গিয়ে জানতে পারি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের প্রত্যেককে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে।”
ওসি সরাফত উল্লাহ বন্ড সই করতে চাপ দিচ্ছেন বলেও আসমা বেগম অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “ওসি আমাকে জায়গার দাবি ছাড়ার জন্য বন্ড সই করতে বলেন। আমাকে হুমকি বলেছেন, যদি ওই জায়গায় ফের তোরে দেখছি, তোর মাজায় রশি দিয়া তিনটা প্যাঁচ দিয়া গাড়িতে তুইল্লা চিটাগাং রোডে তিনটা ঘুরানি দিব। পরে তোর পাছায় লাথি দিয়া লকআপের ভেতরে ঢুকায়ে রাখব। থানার ভেতরে পুলিশসহ অন্য লোকজনের সামনেই তিনি এ হুমকি দেন।”
মাদকদ্রব্য আইনে সাজাপ্রাপ্ত মোহাম্মদ আলী কখনও মাদকসেবন করেননি বলে স্থানীয়দের দাবি। সিদ্ধিরগঞ্জ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন ওই এলাকার রুবেল।
তিনি বলেন, “মোহাম্মদ আলীকে অনেক দিন ধরে চিনি। তিনি নামাজ-রোজা করেন। তাবলীগ জামাত করেন। তিনি পুলিশকে ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে।” পরিবহন ব্যবসায়ী গৌতম বাবু বলেন, “মাদকসেবন তো দূরে, মোহাম্মদ আলী বিড়ি-সিগারেটও খায় না। তাদের পৈতৃক সম্পত্তি দখল করার জন্য ওসি প্রভাবশালীদের পক্ষ নিয়ে তাদের হয়রানি করছেন।” অভিযোগ বিষয়ে ওসি সরাফত উল্লাহ বলেন, “আমি আসমার কাছে কোনো টাকা দাবি করি নাই। তাকে কোনো কাগজে সই করতে বলি নাই। তার সব অভিযোগ মিথ্যা। “আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকই বলতে পারবেন তিনি কিসের ভিত্তিতে সাজা দিয়েছেন।”
সাজা প্রদানকারী বিচারক সিদ্ধিরগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সারাওয়াত মেহজাবিন বলেন, “গত ২৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার অফিসে সাতজনকে নিয়ে আসেন ওসি। সাথে কিছু ফেনসিডিলের বোতল দেখানো হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই বশির উদ্দিন প্রসিকিউশন দাখিল করেন। আসামিরা মাদকসেবী বলে দোষ স্বীকার ফরমে সই করলে তাদের সাজা দেওয়া হয়।” তবে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নারায়ণগঞ্জের সভাপতি আইনজীবী মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, “ভ্রাম্যমাণ আদালত যারা পরিচালনা করেন তারা ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু এখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক অফিসে বসে সাজা দিয়েছেন। পুলিশের কথায় সাজা হয়েছে। এটা আইনের সম্পূর্ণ বরখেলাপ।” ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *