এলেঙ্গা-ভূঞাপুর পুরাতন সড়কের কাজ দশ মাসেও শুরু হয়নি॥ ড্রেন নির্মাণে ধীরগতি; ব্যবসায়ীরা ধরাসায়ী
বিভাগীয় প্রতিনিধি (ঢাকা): উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেরার এলেঙ্গা সুদীর্ঘ ১০ মাসেও পুরাতন ভূঞাপুর রাস্তার কাজ শুরু হয়নি । অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে সড়কের দুইপাশে ড্রেন নির্মাণ কাজ, ব্যবসায়ীরা ধরাসায়ী। অভিযোগ উঠেছে ড্রেননির্মাণে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করার। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও মূলসড়কের নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র শাফী খানের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী মানুষ। জানা যায়, গতবছরের ৩০ জুন থেকে চলতি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর কাজ শেষ করার চুক্তিতে ১৪৩০ মিটার রাস্তা, ১৪৯৩ মিটার ড্রেন এবং ১৪৩০ মিটার সড়কের বাতি নির্মাণ কাজ শুরু করে যৌথভাবে এসইসিএল-এনসি ও কেসি নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। চুক্তিমূল্য ১০ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ৭৮৭ টাকা।
ড্রেন নির্মাণ কাজ প্রথম শুরু করে। অত্যন্ত ধীর গতিতে কাজ করার কারণে অদ্যাবধি শেষ হয়নি ড্রেন নির্মাণ। ইতিমধ্যে ড্রেন নির্মাণে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। প্রায় অর্ধযুগ ধরে এলেঙ্গা-ভূঞাপুরের পুরাতন সড়ক চলাচলের একবারে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যানবাহন চলাচলতো দূরের কথা পথচারী পর্যন্ত রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারেনা। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাটি পরিনত হয় খালে। তবুও জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে দুর্ভোগ মেনে নিয়েই করতে হয় যাতায়াত। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত এলেঙ্গা হয়ে বাংলাদেশের ২৪টি জেলার যানবাহন চলাচল করে থাকে। এছাড়া এলেঙ্গা সরকারি শামছুল হক কলেজ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এলেঙ্গা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, বালক উচ্চ বিদ্যালয়, হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি এবং বৃহত্তর বাজারে যাবার প্রধান রাস্তা এটিই। সড়কের দুই পার্শ্বে গড়ে উঠেছে ব্যাংক, বীমা অফিস, হাসপাতাল, বিভিন্ন স্বমানধন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, শতাধিক স’মিল, এসপি অফিস (সার্কেল) সহ অনেক কল-কারখানা। এছাড়া মহাসড়কে তিনচাকার যাহবাহন যাতায়াতের নিষেধ থাকায় এলেঙ্গা-ভূঞাপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার লাখো মানুষের চলাফেরার একমাত্র অবল্বন এই সড়ক। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মধ্যে অনেক বড় বড় গর্ত, সামান্য বৃষ্টিতে সড়কটি তলিয়ে যায়, রাস্তা পারাপারে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সময় লাগে। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেক সময় যাত্রীদের বেশি ভাড়া দিয়ে চলাচল করতে হয়। এলেঙ্গা বানিয়াবাড়ীর রাসেল মিয়া নামের এক অটোরিকশা চালক বলেন, ‘আমি হারা দিনে যা কামাই করি তার অর্ধেকই মিস্ত্রিকে দিয়ন লাগে। এই রাস্তায় গাড়ি চালানের কারণে কলকব্জা প্রতিদিনই নষ্ট অয় আর ঠিক করতে অয়।’ হাসিবুল ইসলাম নামের একযাত্রী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, কবে এই রাস্তা ঠিক হবে! কতর্ৃৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই বর্তমানে আমাদের ভোগান্তি পৌহাতে হচ্ছে। এলেঙ্গা সরকারি শামছুল হক কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল কবীর বলেন, আমরা যারা এই সড়কে নিয়মিত চলাচল করি তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। কত কষ্টে যে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রীরা কলেজে যাতায়াত করেন তা বলে বোঝানো যাবে না। এতো দিনেও ড্রেনের কাজ শেষ হয়নি, মূলসড়কের কাজ শুরু হয়নি এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর মূল কারণ ঠিকাদারের গাফিলতি, পৌরমেয়রের তদারকি ও আন্তরিকতকার অভাব। সুন্দর পরিপূর্ণ একটি সড়ক সড়ক আশাব্যক্ত করে কালিহাতী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ব্যবসায়ী সমিতির প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, এলেঙ্গা-ভূঞাপুর পুরাতন সড়কের মেরামত কাজের এই অবস্থার মূল কারণ ঠিকাদারের গাফিলতি ও পৌর মেয়রের আন্তরিকতার চরম অভাব রয়েছে। ড্রেন নির্মাণে যথেষ্ট ত্র“টি রয়েছে, কাজের ধীরগতির ব্যর্থতা মেয়রের। ড্রেন নির্মাণে ধীরগতির কথা স্বীকার করে এলেঙ্গা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী জহুরুল হক বলেন, আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এলেঙ্গা-ভূঞাপুর পুরাতন সড়কের মেরামত কাজের ঠিকাদার শামছুল আলম খান বলেন, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে আমরা সময় মতো কাজ করতে পারি নাই। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাফী খান বলেন, ড্রেন নির্মাণের শুরুতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি থাকলেও বর্তমানে তা নেই। এখন দ্রুত কাজ চলছে। আশা করি যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন হবে। তাছাড়া কাজের তদারকির ব্যাপারে আমার আন্তরিকতার কোনো অভাব ছিল না, এখনও নেই। সব সময়ই তদারকি করা হচ্ছে। সময় মতো কাজ শেষ না হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিল তুলতে পারবে না।