টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম
এ কিউ রাসেল, গোপালপুর (টাঙ্গাইল): টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের গুণগ্রাম নামক স্থানে মঙ্গলবার রাতে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৩জনের বাড়ি গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। নিহতদের মধ্যে একজন নারী ও ২জন পুরুষ। ২জন ওই বাসের যাত্রী ও একজন বাসের সুপারভাইজার ছিলো। নিহত মাহফুজা আক্তার আসমা (৪০), পেশায় সেচ্ছাসেবী মাদরাসা শিক্ষিকা। সে উপজেলার নগদাশিমলা ইউনিয়নের বাদে মাকুল্ল্যা গ্রামের ব্যবসায়ী মো. শেখ ফরিদের স্ত্রী ও ২ কন্যা সন্তানের জননী। চন্দন কুমার দাস (১৮), গোপালপুর ডিগ্রী কলেজের বি.কম প্রর্থম বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী ও উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের সাজানপুর গ্রামের কাঠমিস্ত্রী মতিলাল দাসের একমাত্র পুত্র সন্তান অপর দিকে নিহত আরিফ হোসেন (২২), বিনিময় পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার ও উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের বন্ধআজগরা গ্রামের আবদুল বাছেদের ছেলে। সরজমিনে বুধবার সকাল ৯টার দিকে নিহত মাহফুজা আক্তার আসমার বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, মাকে হারিয়ে দুই মেয়ে মাহবুবা আক্তার তমা (২২) ও মাহবুবা তৃষ্ণা (১৬) বিলাপ করছে। তারা বার বার মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। তৃষ্ণা চলতি বছরে গোপালপুর ডিগ্রী কলেজ হতে বিজ্ঞান শাখায় এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করছে। মাহফুজা আক্তার আসমা’র মা অসুস্থ থাকায় নরসিংদী জেলার ভূইয়ম গ্রামে স্বামী শেখ ফরিদকে নিয়ে শনিবার দেখতে গিয়ে ছিলেন। মঙ্গলবার বিকেলে দিকে স্বামীর সাথেই বাড়ী ফিরছিলেন বিনিময় পরিবহনের ওই বাসে করে। চালকের পেছনের তৃতীয় সিটেই বসে ছিলেন তারা। গরমের কারণে জানালার পাশে স্ত্রীকে বসিয়ে ছিলেন স্বামী ফরিদ। দূর্ঘটনার সাথে সাথেই মাথায় প্রচ- আঘাতে নিজের চোখের সামনে স্ত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। স্বামী ফরিদ আহত হলেও, অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বলে জানা যায়। পত্রমিতালীর মাধ্যমে গোপালপুরের ছেলে ফরিদকে ভালোবেসে ১৯৯০ সালে ঘর বেঁধে ছিলেন তারা। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তথা গ্রামের মানুষকে আপন করে নিয়ে ছিলেন আসমা। স্থানীয় জান্নাতুল উলুম নূরানী মাদরাসায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সেচ্ছাশ্রমে বাংলা বিষয়ে পাঠদান করাতেন তিনি। তার অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উপজেলা ধোপাকান্দি ইউনিয়নের সাজানপুর গ্রামে দুপুরের দিকে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের শত শত নারী পুরুষ শেষ বারের মতো দেখতে এসেছে গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের) কলেজ পড়–য়া মেধাবী শিক্ষার্থী চন্দন কুমার দাসের লাশ। বাড়ির ভেতরে চলছে লাশ সৎকারের আয়োজন। মা চম্পারাণী দাস (৪০) ঘরের বারান্দায় বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে আরজি জানাচ্ছেন। মূহূর্তের মধ্যে আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। স্বজনরা হৃদরোগ, ডায়বেটিকসহ নানা রোগে আক্রান্ত চম্পা রাণীর মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করার চেষ্টা করছেন। কাঠমিস্ত্রী বাবা মতিলাল দাস অসুস্থ জনিত কারণে ঘরের ভেতর বিছানায় শুয়ে চিৎকার করছেন। একমাত্র বোন মুক্তিরাণী দাস (১৬), চলতি বছরে গোপালপুর মেহেরুননেছা মহিলা কলেজ হতে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করছেন। ভাইকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছে। চন্দনের স্বপ্নছিলো, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কোন কলেজে অধ্যাপনা করার। সে অসুস্থ দাদীকে দেখার জন্য পহেলা মে ঢাকায় গিয়ে ছিলো। বিনিময় পরিবহনে বাড়ি ফেরার পথে সে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো। তাকে ঘিরে স্বপ্ন ছিলো ওই গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষ গুলোর। একটি দূর্ঘটনায় সে স্বপ্নের মৃত্যু হলো বলে জানান, তার চাচাতো ভাই মিলন চন্দ দাস। অপর দিকে সদ্য বিবাহিত বিনিময় পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার, উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের বন্ধআজগরা গ্রামের আবদুল বাছেদের ছেলে আরিফ হোসেনের লাশ বুধবার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।