শারীরিক অক্ষমতা দাবাতে পারেনি মণিরামপুরের রবিউলকে
আনোয়ার হোসেন,মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: রবিউল ইসলাম (৩৭) জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। মা মরিয়াম বেগমের ভাষায় জন্মের পর বাতাস লেগেই ছেলে পঙ্গু হয়েছে। রবিউল ইসলামের দু’পা বিকলাঙ্গ। স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারেন না তিনি। ছোট টুলের ওপর দু’হাত ভর করে নিজের প্রয়োজন সারেন তিনি। তবে হাঁটতে না পারলেও বসে বসে যে কোন কাজ করতে পারেন রবিউল। ছোট্টবেলা থেকে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী ছিলেন তিনি। তাইতো বন্ধুদের সাইকেলে চড়ে স্কুল জীবন পেরিয়ে ১৯৯৮ সালে ভর্তি হয়েছিলেন রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে। পরে অবশ্য যাতায়াতের অসুবিধার কারণে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা হয়নি তার। লেখাপড়ার কাছে হার মানলেও জীবন সংগ্রামে হারেননি রবিউল। যেখানে একজন বিকল প্রতিবন্ধীর পরিবারের বা সমাজের বোঝা হয়ে থাকার কথা,অন্যের দয়ায় জীবন চলার কথা,সেখানে জীবনের সাথে সংগ্রাম করে নিজে উপার্জন করে টিকে আছেন তিনি। হস্তচালিত ইঞ্জিন ভ্যানে করে মণিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে চা পাতা,জিরা ও মসলা বিক্রি করেন রবিউল। নিজের আয়ের ওপর পরিবারের ৬ জনের আহার জোটে। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামের মোকাম সরদারের ছেলে এই রবিউল। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক মেয়ে ও এক ছেলের জনক। মেয়ে তামান্না (৯),তৃৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী আর ছেলে আসিফের বয়স ২ বছর। সম্প্রতি মণিরামপুর বাজারে দেখা মেলে বরিউলের। শোনান তার জীবন সংগ্রামের গল্প। রবিউল বলেন,‘মেট্রিক পাশের পরে অনেক কষ্টে সংসার চলত। আমি প্রতিবন্ধী হলেও জীবনে কোন দিন অন্যের কাছে হাত পাতিনি। আগে বাজারে একটি দোকান ছিলো। দোকানের আয়ে সংসার চলত না। খুবই কষ্ট হতো। চাকুরির জন্য জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে আবেদন করেছিলাম। তারা মোটা অংকের ঘুষ চাওয়ায় চাকুরি করা হলো না। ভাবলাম,কিছু একটা করতে হবে। বসে বসে দোকানদারিতে সংসার চলবে না। তাই গত ৫ বছর আগে ৩৭ হাজার টাকা ব্যয়ে এই গাড়িটি তৈরি করেছি। এখন খুলনা ও কলারোয়া হতে জিরা,মসলা ও চা পাতি কিনে এনে স্থানীয় নেংগুড়াহাট,রাজগঞ্জ ও মণিরামপুর বাজারসহ আশপাশের বাজারে তা বিক্রি করি। মাল নিয়ে বেরুলে দিনে ১০-১৫ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। তাতে যা লাভ হয় সংসার ভালই চলে।’ রবিউল আরও বলেন,‘নিজের বলতে ভিটাবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পাইনা। তাতে কোন কষ্ট নেই আমার।’ মণিরামপুর বাজারের দোকানদাররা জানান,এই লোকটির কষ্ট দেখে তারা তার কাছ থেকে মাল কেনেন। অনেক সময় দুই দশ টাকা ধরেও দেন। তবে ব্যবসায়ীরা লোকটার প্রশংসা করেন এই জন্য যে, সে ভিক্ষা করে না,পরিশ্রম করে খায়। রবিউলের সাথে আলামকালে তিনি প্রতিবন্ধী ভিখারিদের উদ্দেশ্যে বলেন,‘ আপনারা অন্যের কাছে হাত না পেতে কিছু একটা করার চেষ্টা করুন। আমার বিশ্বাস ভিক্ষা বাদে অন্য কিছু করার চেষ্টা করলে সমাজের দশজনও আপনাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবেন।’