দক্ষিণাঞ্চলে নারী ও শিশু শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির,(দক্ষিণাঞ্চন থেকে ফিরে) : দক্ষিণাঞ্চলের বাগেরহাটসহ ১০ জেলার উপজেলায় মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন নারীও শিশু শ্রমিকরা। কৃষকের কাজে ফাঁকি না দেয়ার প্রবণতা কম থাকায় দিন দিন বিভিন্ন কাজে নারী ও শিশু শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী ও শিশু শ্রমিকেরা এখন ঘর গৃহস্থলির কাজের গন্ডি পেরিয়ে হাতে হাতুড়ি, কোদাল আর কাস্তে, মাথায় ঝুঁড়ি নিয়ে অভাব অনটন ক্ষুধা আর দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সকাল-সন্ধ্যা কাজ করে চলেছেন। ইট-পাথর ভাঙা, মাটি কাটা, সিমেন্ট বালু মিশ্রণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও চা-মিষ্টির দোকানে পানি টানার মতো কঠিন পরিশ্রম করেও ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নারী ও শিশু শ্রমিকরা। সরেজমিন ঘুরে দেয়া যায়, চলতি বোরো, ভুট্টা, আলু, শাকসবজিসহ পরিচর্যা করতে শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিলে নারী শ্রমিকরা পুরুষের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন শ্রমিকের কাজে। পুরুষ শ্রমিক বেশি উপার্জনের আশায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ায় গৃহস্থের একমাত্র ভরসা নারী ও শিশু শ্রমিক। অসচ্ছল পরিবার, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা ও কোনো কোনো পরিবারে অভাব-অনটনে জড়িয়ে থাকা এসব নারী শ্রম বিক্রি করতে গেলে এ সুযোগ নিয়ে গৃহস্থরা তাদের ন্যায্য মজুরি না দিয়ে স্বল্প মজুরি দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে পুরুষ শ্রমিকরা প্রতিদিন ২ থেকে ৩শ’ টাকা হারে মজুরি পাচ্ছেন। একই কাজে নারী শ্রমিকরা ১শ’ টাকা থেকে ১২০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিকের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও বাড়ছে না তাদের ন্যায্য মজুরি। বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ গ্রামের রজিনা ও ছকিনা বেগম জানান, আমরা ক্ষেত খামারে যেভাবে পরিশ্রম করি সে তুলনায় আমাদের মজুরি খুবই কম। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা পান কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, সরকারের সুযোগ-সুবিধা নিতে গেলে স্থানীয় মেম্বাররা টাকা চায়। টাকা দিতে না পারায় কম মজুরি নিয়ে স্থানীয় গৃহস্থের কাজ করি। এ স্বল্প আয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করা সম্ভব হয় না। স্থানীয় একাধিক এনজিও’তে কর্মরত নারী শ্রমিকেরা জানান, তারা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত হাঁড়ভাঙা খাটুনি খেটে ২শ টাকার বেশি রোজগার করতে পারেন না। দ্রব্যমূল বৃদ্ধির কারণে তাদের পারিশ্রমিকও বাড়ানোর দাবি করেন নারী শ্রমিকরা। বিশেষ করে মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন আলোচনা হলেও নারী শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। মে দিবস আসে আর যায়, কিন্তু নারী শ্রমিকদের ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না। একই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নারী ও শিশু শ্রমিকরাও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।