ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফন আত্রাইয়ে পুলিশের নির্যাতনে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর আত্রাইয়ে পুলিশের নির্যাতনে জালাল হোসেন (৪০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পারকাসুন্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের দাবি পুলিশের নির্যাতনে জালাল মারা গেছে। আর পুলিশের দাবী সে হার্ডঅ্যাটাকে মারা গেছে। নিহত জালাল উদ্দিন জেলার রাণীনগর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিনের ছেলে। সোমবার গ্রামের বাড়িতে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়। ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।
এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে সোমবার দুপুরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় নিহতের পরিবারকে ঘটনা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।
জানা গেছে, রবিবার সকালে পার্শ¦বতী রাণীনগর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রাম থেকে অসুস্থ মামা আসকানকে দেখতে আত্রাই উপজেলার দক্ষিন পারকাসুন্দি গ্রামে গিয়েছিলেন জালাল হোসেন। সারাদিন মাঠ থেকে কাটা গম বহনের কাজ শেষ করে মামা রাতে বাড়িতে ছিলেন। গভীর রাতে পুলিশ ওই বাড়িতে মোস্তফা নামে এক আসামী ধরতে যায়। এ সময় বাড়ির সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নাম জিজ্ঞাসাবাদ করে। আসকান অসুস্থ থাকায় তার স্ত্রী জোসনা বানু পুলিশের সাথে কথা বলছিলেন। এসময় পুলিশ বারবার বাড়ির মালিকের নাম এবং জমির দলিল দেখতে চাইছিলেন। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে পাশের ঘর থেকে নিয়ে আসতে যান জোসনা বানু। জোসনা বানু পাশের ঘরে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসতে গেলে এরই এক ফাঁকে ভাগিনা জালাল হোসেনকে কোন কারন ছাড়াই বেদম মারধর করে পুলিশ। এরপর চিৎকার শুনে জোসনা বানু ঘরে এসে দেখেন জালাল অজ্ঞান অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে। এসময় জোসনা বেগমের চিৎকারে গ্রামবাসীরা এগিয়ে আসলে পুলিশ সেখান থেকে চলে যায়।
মামি জোসনা বানু বলেন, পাশের ঘরে জাতীয় পরিচয়পত্র আনতে গেলে একটা শব্দ শুনতে পায়। দৌড়ে এসে দেখি জালাল মাটিতে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। পুলিশ আমাকে দ্রুত পানি নিয়ে জালালের মাথায় ঢালতে বলে। আমার চিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসলে পুলিশ তড়িঘড়ি করে চলে যায়। এ সময় গ্রাম্য ডাক্তারকে নিয়ে আসা হলে জালাল মারা গেছে বলে জানায়। স্বামীর সামনেই পুলিশ বন্দুকের নল দিয়ে জালালের বুকে ও পিঠে আঘাত করায় ঘটনা স্থলেই মারা যায়। পুলিশ একটি ওয়ারেন্টে কপি ভুল করে ফেলে রেখে যায়। সেখানে দেখা যায় আশপাশের গ্রামের কোন আসামীর নাম নাই।
এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলার পাঁচুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফছার আলী বলেন, আসকানের পরিবার খুবই অসহায়। ভাংড়ির দোকান করে কোন মতে সংসার চলে। এমনকি অন্যের জমিতে বাড়ি। গত কয়েকদিন থেকে সে অসুস্থ থাকায় ভাগিনাকে দেখতে চেয়েছিল। পুলিশের নির্যাতনের কারণেই জালালের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে বলে তিনি জানান।
আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুদ্দোজা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই বাড়িতে পুলিশ আসামী ধরতে গিয়েছিল। তখন আসামীকে না পাওয়া পুলিশ ফিরে আসে। তবে ওই যুবককে পুলিশ কোন নির্যাতন করেনি। ভয়ে হার্ডঅ্যাটাক করে মারা গেছে। এ ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়নি।