নওগাঁর আত্রাইয়ে গম কাটা- মাড়াই শুরু- কৃষকের মূখে সোনালী হাশি।
একেএম কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ-: নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের দিগন্ত জোড়া মাঠে এখন সোনালী রংগের পাকা গমের সম্ভার। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও গম কাটা- মাড়াই শুরু হয়েছে। এদিকে উৎপাদিত গমের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিয়ে উপজেলার গম চাষিদের মাঝে দেখা গেছে চরম উৎকন্ঠা। বর্তমান বাজার দরে গম বিক্রয় করে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় দেড় হাজার টাকার লোকশান গুনতে হচ্ছে। অপর দিকে খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ার এক বুক আশা নিয়ে ইরি- বোরো ধান চাষের আগ্রহ কিছুটা কমিয়ে গম চাষের দিকে কৃষকরা বেশি মনোযোগী হতেই তারা হোচট খাচ্ছে।
গত বন্যার কারণে এই উপজেলায় রোপা- –আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হলেও দ্রুত বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় মাঠে রবিশস্যের উপযোগী জমিতে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম গম চাষে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল চাষিরা। সরকার পর্যায় থেকে কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ, গমের বীজ, রাসায়নিক সার বিনা মূল্যে যথা সময়ে বিতরণ করায় উপজেলার বন্যায় ক্ষতি গ্রস্ত কৃষকদের পক্ষে আগাম জাতের গম চাষ করা সম্ভব হয়েছিল।
চলতি রবি মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেওয়ায় এবং গম চাষের অনুকুল পরিবেশ থাকায় গমের ভালো ফলনের আশা করলেও কাটা –মাড়াই করে বিঘা প্রতি ৭-৮ মণের বেশি পলন না হওয়ায় এবং গমের মূল্য কম হওয়ার কারণে ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে কৃষকেরা। ভরা মৌসুমে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারী ক্রয় কেন্দ্রে যত তারাতাড়ি সম্ভব মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিকট থেকে সরাসরি সরকার ঘোষিত মূল্যে গম সংগ্রহের দাবি জানান কৃষকেরা।
জানা গেছে, চলতি রবি শস্য মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৫শ ৪৫ হেক্টও জমিতে গম চাষের রক্ষ্যমাত্রা নির্দ্ধারন করা হলেও এ বছর উপজেলায় প্রায় ৫শ ৮৫ হেক্টও জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা। শুরুতেই আবহাওয়া অনুকুলে থাকা এবং গমের ক্ষেতে পোকা –মাকড়ের আনাগোনা না থাকায় ও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কৃষকদের মাঝে পরামর্শে নজরদারিও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগতিার কারণে গম ক্ষেত অনেকটা রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় ভালো ফলন ও চরা মূল্যে বিক্রয়ের আশায় বুক বেধেঁছিল উপজেলার কৃষকেরা। এ পর্যন্ত সরকারী পর্যায়ে গম ক্রয় অভিযান শুরু না করায় দিন দিন কৃষকদের ক্ষতির পাল্লা আরো ভারি হচ্ছে।
উপজেলার নবাবের তাম্বু গ্রামের গম চাষি কৃষক এএফএম মুসুর রহমান জানান, এ বছর জমিতে গম চাষ করে প্রতি বিঘাতে ৮-৯ মনের মত গম হলেও গমের দাম বাজারে ৮ শত টাকার বেশি না হওয়ায় আমার বড় অংকের লোকশান হয়েছে। সরকারী গুদামে গম ক্রয় শুরু করলে হয়তো কিছুটা লোকশান কম হতো।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে গম সংগ্রহ অভিযানের কোন নির্দেশনা এখনও পর্যন্ত আমরা পাই নাই। তবে নির্দেশনা পেলেই সরকার ঘোষিত নিদ্ধারিত দরে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে গম সংগ্রহ শুরু করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে এম কাউছার হোসেন জানান, এবারে আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় লক্ষ মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমানে গম চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে পুরোদমে কাটা মাড়া শুরু হয়েছে। কৃষকেরা ভালো ফলন পাচ্ছে বলে তিনি জানান।