কক্সবাজার ইসলামাবাদে সরকারী বনভূমি দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ, কেটে নিচ্ছে সরকারী মহামূল্যবান গাছ
মোঃ নিজাম উদ্দিন, কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ফকিরা বাজারে বনবিভাগের জায়গা দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। প্রকাশ্যে দিবালোকে বেপরোয়া দখল চললেও এসবের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। বিভিন্নভাবে হয়রানির শংকায় দখলদারদের বাঁধা না দিয়ে মুখ বুঝে সহ্য করে আসছেন তারা। এ ঘটনায় এলাকার সর্বসাধারণের মাঝে দখলদার এবং বনবিভাগের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী খোদাইবাড়ী গ্রামের মোহাম্মদ আলম ও চৌফলদন্ডী ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মনছুর আলমসহ একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ফকিরা বাজার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে টিনের বেড়া দিয়ে পাকা বাড়ি নির্মাণ করছে। এ নিয়ে এলাকার সচেতন মহলের মাঝে এক প্রকার ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা বলেন, বনকর্মকর্তাদের যোগ সাজশে প্রায় ২০ একর সরকারী জমি বন কেটে বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। এভাবে দিনের পর দিন বনবিভাগের জায়গা দখল করতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বনবিভাগে জায়গা বলে কিছুই থাকবে না। জায়গা দখলের পাশাপাশি রাতের আঁধারে শত বছরের পুরনো মাদার ট্রি গাছগুলিও কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মনছুর মেম্বার ও আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা প্রথমে সংবাদকর্মীদের টাকা দিয়ে বাগে আনার চেষ্টা করে। এতে সংবাদকর্মীরা রাজি না হলে রেঞ্জ অফিস রাজি থাকলে তোমরা পত্রিকায় লিখে আমাদের কিছুই করতে পারবে না বলে হুমকি প্রদান করে। রেঞ্জ কর্মকর্তাকে কিভাবে রাজি করালেন জানতে চাইলে মনছুর মেম্বার বলেন, যেভাবেই হোক আমি রেঞ্জ অফিসার থেকে জায়গা খতিয়ান করে নিয়েছি। তিনি দখলকৃত জায়গা ক্রয়কৃত ডিগ্রী ইত্যাদি দাবী করলেও এর স্বপক্ষে উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এ ব্যাপারে ভোমরিয়াঘোনার নবাগত রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে মুঠোফোনে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। সূত্রে প্রকাশ, এসব বনভূমি দখলে রেঞ্জ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট হেডম্যান পাহারাদার আর্থিক সুবিধা নিয়ে এসব জমি দখলের সুযোগ দিচ্ছেন। তারা আরো বলেন, ভোমরিয়াঘোনা বনবিভাগের অধীনে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর বনভূমি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছে এ কর্মকর্তা। এলাকাবাসীর প্রশ্ন সরকার এসব বনকর্মকর্তাদেরকে প্রতিমাসে আমাদের টাকা দিয়ে উচ্চ হারে বেতন-ভাতা দিয়ে থাকেন। তারপরেও কেন তারা রাতের আঁধারে টাকার বিনিময়ে বনভূমির জায়গা-জমি বিক্রিতে ব্যস্ত। সরকার এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কি এসব বিষয় চোখে দেখে না? ফুলছড়ি ও ভোমরিয়াঘোনা রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বনকর্মীদের বিরুদ্ধে এর আগেও ব্যাপক অনিয়ম, দূর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে বলে জানা যায়। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, এ বনভূমি এলাকার পাহাড় কেটে বহুতল বিশিষ্ট পাকা ভবন, বাসাবাড়ী, দোকান নির্মাণ করার প্রতিযোগিতা চলছে প্রতিনিয়ত। লুট করা হচ্ছে শত বছরের সৃজিত বন ও বাগানের গাছ। লুটপাটসহ রক্ষিত বনাঞ্চল সংরক্ষণে নিয়োজিত পাহারাদার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহায়তায় বনভুমি দখল করে নানা প্রকার স্থাপনার তৈরির ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জীব বৈচিত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, এসমস্ত দখলের বিরুদ্ধে কিছু করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সিনিয়র বসদের কারণে কিছুই করা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন ভোমরিয়াঘোনা ও ফুলছড়ি রেঞ্জের বনের গাছ ও পাহাড় কেটে শ্রেণী পরিবর্তনসহ বনভূমি দখল বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতেকরে বনভূমিতে গড়ে উঠছে অসংখ্য স্থাপনা। স্থানীয়রা আরো জানান, দখলদাররা বনভূমি উজাড় করতে ৩টি পদ্ধতি অনুসরণ করে। প্রথমে বড় গর্জনের মাদরট্রি গাছের ঢাল কেটে ফেলে। এর কিছুদিন পর গাছের মূল কান্ড কেটে দেয়। সুযোগ বুঝে অথবা বর্ষাকালে হঠাৎ রাতের আঁধারে গোড়া কেটে বিক্রি করে দেয় সরকারী ওই মহামূল্যবান গর্জন গাছ। মাদরট্রি এ গাছ কাটার ঘটনাগুলো এখন ইসলামাবাদ এলাকার জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বনভূমির অবৈধ দখল ও সরকারি মহামূল্যবান গাছ রক্ষার্থে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনিক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।