জাদুঘরে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের বাইসাইকেল

Narail-04 (26.02.17)
কাজী আশরাফ, (লোহাগড়া)নড়াইল প্রতিনিধি : জাদুঘরে হস্তান্তর করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের বাইসাইকেল। ৪৫ বছর পর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ব্যবহৃত বাইসাইকেলটি জাদুঘরে সংরক্ষিত করা হয়েছে। রোববার (২৬ ফেব্র“য়ারি) দুপুরে নড়াইলের নূর মোহাম্মদ নগরে স্মৃতি জাদুঘর চত্বরে বাইসাইকেলটি হস্তান্তর করা হয়েছে। সাইকেলটির ব্যবহারকারী এমদাদুল হক জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফের কাছে বাইসাইকেলটি হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, নূর মোহাম্মদের স্ত্রী ফজিলাতুন নেসা, নূর মোহাম্মদ ট্রাস্টের সদস্য সচিব ও চন্ডিবরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান ভূঁইয়া প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ব্যবহৃত বাইসাইকেলটি এখন থেকে দর্শনার্থীরা জাদুঘরে দেখতে পারবেন। এর ব্যবহারকারীকে (এমদাদুল) একটি নতুন সাইকেল কিনে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সাইকেলটির ব্যবহারকারী এমদাদুল হক (২৭) বলেন, সাইকেলটি প্রথমে আমার বাবা ব্যবহার করতেন। বাবার মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন ধরে সাইকেলটি আমি ব্যবহার করে আসছি। জাদুঘরে হস্তান্তর করতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। তবে, আমি টাকা বা নতুন কোনো সাইকেল চাই না। আমার যোগ্যতা অনুযায়ী (এসএসসি পাশ) সরকারি চাকুরি পেলে দারিদ্রতা ঘুচাতে পারতাম।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের আত্মীয় (শ্যালক) নড়াইলের ডৌয়াতলা গ্রামের মশিয়ার রহমান জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পরিবারের সাথে দেখা করতে যশোর থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে নূর মোহাম্মদ একবার নড়াইলের মহিষখোলা বাড়িতে আসেন। পরে যশোরে ফিরে যাওয়ার সময় সাইকেলটি আমার (মশিয়ার) বড় ভাই অলিয়ার রহমানের কাছে রেখে যান নূর মোহাম্মদ। মশিয়ার রহমানের ভাই সে সময় দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে নূর মোহাম্মদ শহীদ হওয়ায় তার আর বাড়ি ফেরা হয়নি। পরে বাইসাইকেলটি সযতেœ সংরক্ষণ করা হয়। মশিয়ার রহমান বলেন, আমার বড় ভাইয়ের (অলিয়ার) মৃত্যুর পর ভাতিজা এমদাদুল হক সাইকেলটি ব্যবহার করে আসছিলো। গতকাল রোববার (২৬ ফেব্র“য়ারি) সাইকেলটি জাদুঘরে হস্তান্তর করতে পেরে আমরা খুশি হয়েছি। এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন পর ২০১৬ সালের প্রথম দিকে নূর মোহাম্মদের ব্যবহৃত বাইসাইকেলটি সম্পর্কে ব্যাপক জানাজানি হলে তা জাদুঘরে সংরক্ষণের দাবি উঠে। এরপর জেলা প্রশাসন বাইসাইকেলটি জাদুঘরে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন।
জানা যায়, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে ‘মহিষখোলা’র নাম পরিবর্তন করে ‘নূর মোহাম্মদ নগর’ করা হয়। নির্মাণ করা হয় নূর মোহাম্মদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরসহ স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শাহাদাতবরণ করেন নূর মোহাম্মদ। যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *