বাংলা ছবি’র ফাটা কেষ্ট এখন বাগাতিপাড়ায়

natore-bagatipara_uno_forhad_pic_01
নাটোরের থেকে, আব্দুল মজিদ :নদী মাতৃক বাংলাদেশের পদ্মা নদীর শাখা বড়াল নদীর পাড়ঘেষে অবস্থিত বাগাতিপাড়া নামক জনপদ। কালের আবর্তনে এটি প্রথমে থানা পরে উপজেলায় রুপান্তরিত হয়। বর্তমানে পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের বাস। এ উপজেলায় প্রাচীন ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে জমিদার বাড়ী, শাহ্ মোর্কারম দানেশ মান্দ (রঃ) এর বড়বাঘা মাজার শরীফ, নিল কুঠির, রেন উইক কোম্পানী ভবন, শাখারী পাড়া সহ রয়েছে আদিবাসীদের বাস।
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও নাগরিক সেবায় পিছিয়েছিল এই উপজেলা। নাটোর জেলার মধ্যে বাগাতিপাড়া উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও শিক্ষিতের হার আশানুরুপ বেশী হলেও গুনগতমানের দিক দিয়ে বাগাতিপাড়ার জনগণ ছিল অনেক পিছিয়ে। নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম এর সহযোগিতায় বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোন্দকার ফরহাদ আহমদ যোগদানের পর থেকে বেড়েছে নাগরিক সুবিধা ও গ্রামীন জীবনে পড়েছে নগরের ছোঁয়া এই প্রথম উপজেলাতে ‘পঞ্চবার্ষিকী’ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোন্দকার ফরহাদ আহমদ তাঁর নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে উপজেলাবাসীর আস্থা অর্জন করেছেন। ক্যাব বাগাতিপাড়া উপজেলা শাখা’র পক্ষ থেকে পেয়েছেন সম্মাননা স্মারক। সম্প্রতি নাটোর জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও হিসাবেও মনোনিত হয়েছেন। তিনি এখন এই উপজেলার অপরাধীদের কাছে যেমন আতংকের ইউএনও, তেমনি অধিকার বঞ্চিত সর্বস্তরের নাগরিকের কাছে আস্থা’র ইউএনও হিসাবে পেয়েছেন খ্যাতি। ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষে সকল অন্যায় ও অপকর্মের বিরুদ্ধে সাহসী কর্মকান্ডের জন্য অনেকেই তাকে বাংলা সিনেমার ফাটা কেষ্ট’র প্রতিচ্ছবি মনে করেন ।
তিনি গ্রামীন জীবনে এনে দিয়েছেন নগরের ছোঁয়া। এখন জেলা শহর অথবা যে কোন উপজেলা থেকে বাগাতিপাড়ায় প্রবেশ পথে স্বাগতম ও বেরিয়ে যাওয়ার সময় ধন্যবাদ পাওয়া যায়। এছাড়াও জানতে পারা যায় কোন পয়েন্ট থেকে উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের দুরত্ব কত কিলোমিটার। উপজেলা পরিষদের কোন দপ্তরের কি কাজ, তা জানার জন্য রয়েছে সিটিজেন চার্টার। কোন অফিস কোন ভবনে অবস্থিত চেনার জন্য রয়েছে রাস্তার পাশে দাপ্তরিক দিক নির্দেনা ফলক। উপজেলার মালঞ্চি, তমালতলা, জিগরী, কাঁকফো, দয়ারামপুর, জামনগর, রহিমানপুর, পাঁকা, চিথলিয়া, লোকমানপুর বাজার, ইউএনও পার্ক সহ বিভিন্ন হাট-বাজার ও ধর্মীও উপসনালয়ের সামনে লাগানো হয়েছে সৌর বাতি। উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইউএনও অফিস, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল, থানা, পল্লী বিদ্যুৎ সহ সরকারী বিভিন্ন অফিসের হটলাইন নম্বরের বোর্ড স্থাপন করা হয়। বিশেষ নজরদারীর জন্য পুরো উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরকে আনা হয়েছে সিসি ক্যামেরার আওতায়।
উপজেলা ভূমি অফিসকে নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন থাকলেও বর্তমানে তা সুশৃংখল অফিসে পরিনত হয়েছে। সেবা গ্রহিতাদের বসার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে “ঠিকানা” নামক একটি অপেক্ষাগার, নথি সংরক্ষণ করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে রেকর্ড রুম, তৈরি করা হয়েছে হেল্পডেক্স, শুনানীর জন্য এজলাস। ভূমি অফিসকে দালাল মুক্ত করার জন্য সকল নিয়মাবলী তালিকা তৈরি করে জনস্বার্থে উন্মুক্ত করা আছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন তহসিল অফিসে দেয়া হয়েছে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ।
উপজেলা ভূমি অফিস সংলগ্ন হাসপাতাল গেটে অবৈধ দোকান অপসারণ করায় উপজেলা চত্ত্বরে কমেছে দালাল ও মাদকসেবীদের উৎপাত। তমালতলা মোড় সংযোগ সড়কের উপরে থাকা কয়েকটি অবৈধ বাড়ী ও দোকান উচ্ছেদ করে পুনরায় সড়ক তৈরি করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন হাট-বাজারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখল মুক্ত করা অব্যাহত আছে। খাদ্যে ভেজাল মুক্ত, সন্ত্রাস ও মাদক নিয়ন্ত্রনে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা তাঁর যেন রুটিন ওয়ার্ক। ভেজাল গুড় তৈরির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযান করায় তা বর্তমানে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার গর্ভবতী মা ও শিশুদের বিনা মূল্যে জরুরী চিকিৎসা সেবার জন্য সকল ইউনিয়নে একটি করে অটোভ্যান ও চালককে মোবাইল দেয়া হয়। বিভিন্ন স্কুলে উঁচু-নিচু ব্রেঞ্চ ও জামনগর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসারের ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে ফার্নিচার ও সৌর বাতি। অত্র উপজেলায় শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ নজরদারীর কারনে গত বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনি পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের ডিজিটাল কনটেইন এর মাধ্যমে পাঠদানের জন্য প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টি মিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নিতে বাধ্য করা হয়। ইতোমধ্যে উপজেলাবাসীর বিনোদনের জন্য বড়াল নদীর উপরে নির্মিত রেল ও সড়ক ব্রীজ সংযোগ স্থলে লক্ষনহাটী মৌজায় প্রায় তিন একর জমিতে “ইউএনও পার্ক ” নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেছেন নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম। যা এখন দর্শনার্থীদের পদভারে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে। চলমান রয়েছে গ্রামীন রাস্তা সংস্কার ও বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন।
নাগরিক সুবিধা সুনিশ্চিত করার ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোন্দকার ফরহাদ আহমদ জানান, ‘সরকারী সেবা জনগনের দারে পৌছে দিয়ে, সরকারী প্রতিটি দপ্তরকে জনবান্ধব হিসাবে গড়ে তুলতে চাই।’ তিনি আরো জানান, সরকারী সম্পত্তিতে অবৈধ দখল অপসারণ অব্যাহত থাকবে । খাদ্যে ভেজাল মুক্ত করনের বিষয়ে কনজুমারস্ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর বাগাতিপাড়া উপজেলা শাখা’র প্রশংসা করে বলেন, ‘ক্যাব এর সদস্যদের জনসচেতনতায় বিভিন্ন প্রচার কার্যক্রম ও তাদের অংশ গ্রহনে আগামীতেও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন অব্যাহত থাকবে।’ জনগনের কাছে সকল দপ্তরের জবাব দিহিতা নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সর্বস্তরের দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য বাগাতিপাড়া ইউএনও পার্ককে একটি আধুনিক পিকনিক স্পট করার কথা জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *