সত্যকে আড়াল করতে মিথ্যা তদন্ত রিপোটর্ – অভিযোগ আফসানার মায়ের
আবদুল মতিন বাহার,ঠাকুরগাঁও : ১১ই আগস্ট শুক্রবার রাতে মায়ের সাথে শেষ কথা হয়েছিল আফসানা ফেরদৌসের। মা সৈয়দা ইয়াসমিনের দুঃখ গোছাতে ঢাকা থেকে নিয়ে আসার কথা ছিল গ্যাসের চুলা। ইচ্ছে মাকে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াবে। অভাবের ঘরে আলো জ্বালাতে পড়াশুনা শেষ করে করবে ভাল চাকরী। মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী ভর্তি হন রাজধানী মিরপুর সাইক ইনস্টিটিউট কলেজে। মায়ের স্বপ্ন আর পুরণ হলনা বাড়ী ফিরেছে সে লাশ হয়ে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কানিকশালগাঁও গ্রামে আফসানা ফেরদৌসের বাড়ী। ৬মাস আগে বাবাকে হারান আফসানা। গত শনিবার অঙ্গত নাম্বার দিয়ে আফসানা অসুস্থ্যততার কথা বলে বন্ধু পরিচয় দিয়ে ফোন করে আফসানার মা সৈয়দা ইয়াসমিনকে বলে ঢাকা মেডিক্যালে আফসানা গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে ভর্তি হয়েছে । এর পর থেকে ওই ফোন কল গুলোতে একাধিকবার কল দিলেও সেগুলো আর খোলা পাওয়া যায়নি। অনেক খোজঁ খবরের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাওয়া যায় আফাসানার মরদেহ । রাজধানীর মাকিদী বাসায় ভাড়া থাকতো আফসানা। পরিবারের দাবি ছাত্রলীগ নেতা রবিনের সাথে আফসানার দীর্ঘ্য দিন বন্ধুত্ব ছিল তার নেতৃত্বে আফসানাকে মানিকদীর ওই বাসায় হত্যা করা হয়।
এদিকে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর বলা হয় আফসানা আত্মহত্যা করেছে এমন দাবি মানতে পারছেনা শোকাহত পরিবারটি।তাদের দাবি মোটা অংকের টাকা ও ক্ষমতাসীনদের দলীয় লোক হওয়ায় ছাত্রলীগ নেতাকে বাচাঁতে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট মিথ্যে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আফসানার মা সৈয়দা ইয়াসমিন বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারেনা তাকে হত্যা করা হয়েছে।সত্যকে আড়াল করতে টাকা আর ক্ষমতার বিনময়ে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট মিথ্যে দেয়া হয়েছে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে স্বামীহারা সৈয়দা ইয়াসমিন বলেন, সরকার এমন একটি বিচার করুক যেন আর কোন মা তার সন্তানকে এভাবে আর না হারায়। যেন এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি আর কখন না হয়। ন্যায় বিচারের আশায় সন্তান হারা মা ইয়াসমিন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ভাই ফজলে রাব্বি বলেন,তনু হত্যার মতো যেন আমার বোনকে বার বার কবর থেকে না তুলতে লাগে যেন ফরেনসি রিপোর্ট না করাতে হয়। যেন আর কোন ভাইকে এভাবে তার বোনের লাশ না দেখতে হয় তার জন্য সরকারের কাছে করোজোড় অনুরোধ করি। সঠিক ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মাধ্যমে খুনিদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দেওয়া হোক।
তনু হত্যার মতই যদি আফসানা হত্যাকান্ড ধামাচাপা দেয়া হয় তাহলে দিন দিন এমন অপরাধ প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন ঠাকুরগাঁও মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সুচরিতা দেব। তিনি বলেন যেখানে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বের হওয়ার আগেই পুলিশ বলে দেন এটি আত্মহত্যা সেখানে ন্যায় বিচার কতটুকু আশা করা যেতে পারে। হত্যাকান্ডে জড়িত খুনিরা ক্ষমতাসীন দলের ও প্রভাবশালী হওয়া তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন এ থেকে ন্যায় বিচার পাওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। তিনি আশা করেন প্রকৃত খুনিদের আড়াল না করে দলীয় ছত্র-ছায়া না দিয়ে সুষ্ঠ ভাবে বিচার প্রক্রিয়া সম্পুর্ণ করা হক। তাহলেই মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারাবেনা।
এদিকে আফসানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় রাজধানীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য ছেলে-মেয়েদের পাঠাতে সাহস হারিয়ে ফেলছেন বলে জানালেন ঠাকুরগাঁওয়ের অভিভাকরা। তাদের দাবি এ ঘটনার সঠিক বিচার হলে অভিভাবকদের এমন চিন্তা থেকে কিছুটা দুরে সরে আসতে পারে। তাই সরকারের কাছে দাবি এ ঘটনার সঠিক বিচার যেন অতিদ্রুত সম্পুর্ণ করা হয়।