ছাতকে বিয়ের হোতা লন্ডনীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

CHHATAK LONDONI MAHBUB-01
নাজমুল ইসলাম, ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : ছাতকে অর্ধশতাধিক বিয়ের হোতা বহুরূপী মাহবুব লন্ডনীর জমজমাট বিয়ে বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪জুলাই কালারুকা ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের নোয়াব আলীর পুত্র খালেদ মিয়া ছাতক থানায় দেয়া একলিখিত অভিযোগে মাহবুব লন্ডনীর বিরুদ্ধে একের পর এক বিয়ে ব্যবসার অভিযোগ করেন। এটি সুনামগঞ্জ পুলিশ সূপারও ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দফতরে প্রেরণ করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের কুর্শী গ্রামের মৃত আনোয়ারুল হক চৌধুরী ওরফে আলতাব আলীর পুত্র আবু আছাদ চৌধুরী মাহবুব ওরফে সমশেদ আলী লন্ডন নেয়ার কথা বলে একের পর এক বিয়ে ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন। এর মধ্যে গত বছরের ১২নভেম্বর পৌরসভা মেয়র বরাবরে একই সাথে চার স্ত্রীর নামে ডিভোর্স লেটার দেয়ার পর তার প্রতারনার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে পড়ে। এভাবে একই সাথে আরো একাধিক স্ত্রীর ডিভোর্স লেটার দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তার পিতা আলতাব লন্ডনী খেলুয়া নাও, ষাঁড় ঘোড়াসহ বহু বিয়েতে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। এ পথেই হাটছেন এখন পুত্র মাহবুব। তথ্য গোপন করে তার পরিচালিত কুর্শী মদিনাগঞ্জ মাদরাসার সূপার পরিচয়ে হাফেজ আব্দুল্লাহ ও পীরপুর গ্রামের ঘটক রাজনের মাধ্যমে লন্ডন নেয়ার প্রলোভনে এসব বিয়ে করা হয়। আব্দুল্লাহ দক্ষিণ সুনামগঞ্জের হাসকুড়ি-শিবপুর গ্রামের তেরাব আলীর পুত্র। তবে বিয়েগুলো ৫/৬মাসের বেশী সময় স্থায়ীত্ব পায়নি। বিয়ের পর সিলেটের পলাশ হোটেল ও হিমেল হোটেলসহ বিভিন্ন হোটেলও বাসায় কয়েকমাস সংসার করে বিদেশে গিয়েই দেয়া হয় ডিভোর্স। এসময় নতুন স্ত্রীর উপর কৌশলে আনা হয় অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ। এক্ষেত্রে আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট মাহবুবের স্ত্রীদের নামে সাজানো অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ এনে ডিভোর্স ও ঘটনা ধামাচাঁপা দেয়ার ব্যবস্থা করে। আব্দুল্লাহ এসব মহিলার নামে লন্ডনের ভূঁয়া কাগজ-পত্র তৈরী করে। এসব দেখিয়ে শ্বাশুড়বাড়ি থেকে আদায় করা হয় লাখ লাখ টাকা। মাহবুব-আব্দুল্লাহর এসব অপকর্মের প্রতিবাদ কারীকে হতে হয় মামলা-হামলা ও হয়রানীর শিকার। এভাবে তার অপকর্মে সহযোগিতা না করায় তালাকনামার মাধ্যমে ৬মাস আগের ডিভোর্সী মঈনপুর গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে শাপলা বেগমকে টাকার বিনিময়ে স্ত্রী সাজিয়ে ছাতক থানার মামলা (নং- ২০, তাং- ২১.০৬.২০১৬ইং) রুজু করে তার ভগ্নিপতি হাসনাবাদ গ্রামের নোয়াব আলীর পুত্র খালেদ মিয়াকে আসামী করে। টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ঘটক রাজনকেও এতে আসামি করা হয়। খালেদসহ জড়িতরা এ মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। জানা গেছে, মাহবুবের চাচা লন্ডন প্রবাসী সুন্দর আলী ওরফে মজুমদার আলীর দুু’মেয়েকে তাদের নিকটাত্মীয় রহমত আলীর পুত্র হেলাল ও মজমিল আলীর পুত্র আব্দুল কাদিরের সাথে বিয়ের কথাবার্তা পাকাপাকি হয়। কিন্তু আব্দুল্লাহর দাবির ১০লাখ টাকা না দেয়ায় হেলালও কাদিরের বিয়ে ভন্ডুল হয়ে যায়। এছাড়া বিয়ে করে মাহবুব আর তালাকনামায় স্বাক্ষর করে ডিভোর্স দেয় আব্দুল্লাহ। এভাবে আব্দুল্লাহ স্বাক্ষর দিয়ে সেলিনা বেগম, শাপলা বেগম, ফাতেমা বেগমসহ অনেককে ডিভোর্স দিয়েছে। এছাড়া মাহবুবের ২য় স্ত্রী মাছুমা বেগম বসবাস করতো সিলেট এয়াপোর্টস্থ বড়শালা গ্রামে মাহবুবের আলীশান ফুলতলী বাগানবাড়ি নামের বাসায়। বাসা থেকে মাছুমাকে বের করতে প্রাননাশের হুমকি দিলে আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে সিলেট বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডাইরী নং-১০৭, তাং-৩.৩.২০১৬ইং করা হয়েছে। তার প্রথম স্ত্রী ৬সন্তানের জননী জাহানারা বেগম লন্ডনে অবস্থান করছেন। অন্যান্যরা হলেন, ২য় স্ত্রী চরমহল্লা ইউনিয়নের কামরাঙ্গি গ্রামের মাহমুদ আলীর মেয়ে ১সন্তানের জননী মাছুমা বেগম, ৩য় স্ত্রী ছাতক পৌরসভার বৌলা গ্রামের আজাদ মিয়ার মেয়ে আসমা আক্তার লিমা, ৪র্থ স্ত্রী সিলেটের দক্ষিণ সরমার খালপার গ্রামের মকবুল আলীর মেয়ে ফাতেমা বেগম, ৫নং স্ত্রী জালালাবাদ থানার রাজারগাঁও গ্রামের মৃত সমর আলীর মেয়ে সেলিনা বেগম, ৬নং স্ত্রী মঈনপুর গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে শাপলা বেগম, ৭নং স্ত্রী হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গ থানার মাজের মহল্লা গ্রামের আরজু মিয়ার মেয়ে সিপন বেগম। এছাড়া সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় হালিমা বেগম, সাহানা বেগম, আকলিমা আক্তার, মরিয়ম বেগম, জোসনা বেগম, লিবিয়া আক্তার, মিনা আক্তার, লাইলী আক্তারসহ তার বিয়ের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক।
এছাড়া ঘটক রাজন আসমা আক্তার লিমার ৮০হাজার, মাছুমা বেগমের কাছ থেকে ৩লাখ টাকাসহ অন্যান্যের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। এতে অনেক নিরাপরাধ মেয়ে এখন জীবনের সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। এব্যাপারে আব্দুল্লাহ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, লন্ডনীর মাদরাসায় চাকুরী বাঁচাতে তিনি এসব অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন। ঘটক রাজন ঘুষের টাকা এনে মাহবুবকে দিয়েছেন বলে জানান। এব্যাপারে ছাতক থানার ওসি আশেক সুজা মামুন অভিযোগ তদন্তের মাধমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *