যমুনার নদী ভাঙন অব্যাহত টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিরব ভূমিকা

Bhuiyanpur Photo 11-07-2016-3
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ৪টি ইউনিয়ন যমুনা নদীতে ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ভাঙনরোধে কোন কাজ করছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি), টাঙ্গাইল। প্রকল্পতেই আটকে আছে যমুনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধের কাজ। জোয়ার ও মৌসুমের বন্যায় প্রতি বছর বাস্তুহারা হচ্ছে সহশ্র মানুষ। ইতোমধ্যে চলতি বর্ষায় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বেশ ক’টি গ্রাম ।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা জানান, যমুনা নদী ভাঙন রোধে একাধিক প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলেও সেগুলো অজ্ঞাত কারনেই অনুমোদন হচ্ছে না। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদী ভাঙনরোধে ভূঞাপুর উপজেলার নলীন থেকে অজুর্না পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঁধ নির্মাণে ১শ ৬৪ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় আনুমানিক ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকায় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে যমুনা নদীতে বাঁধ নির্মাণ কাজের প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে। সেটিও বর্তমানে স্টাডিতে।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভয়াবহ ভাঙনে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ী-কষ্টাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দুই বছর আগেই নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পিকনা-জোকারচর বাঁধের অংশ। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ক্রমশঃ পূর্ব দিকে ধাবিত হচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে নতুন নতুন ঘর বাড়ি। মানচিত্র থেকে লুকিয়ে যাচ্ছে কয়েকটি গ্রামের নাম।
কয়েকদিনে অর্জুনা ইউনিয়নের কুঠিবয়ড়া, চুকাইনগর ও অর্জুনা গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ি, ভালকুটিয়া, কোনাবাড়ি চর চিতুলিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। নিকরাইল ও গাবসারা ইউনিয়নেও চিত্র একই ভাঙনের। এছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে গোবিন্দাসী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি, কয়েকটি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দির, পোল্ট্রি খামারসহ গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। এছাড়া ফসলী জমিসহ কয়েক হাজার পরিবার নতুন করে গৃহহীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্জূনা গ্রামের হাবিবুর রহমান ও চুকাইনগর গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, একশ বছর যমুনা নদীর ভাঙনে বাড়ি ঘর হারাতে হলো। গত বছর বাড়ির জমি ভেঙে গেছে। এবছর ঘর বাড়িসহ ভেঙে নদী গর্ভে চলে গেছে। সর্বস্ব হারিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু সে বাড়িও দু একদিনের মধ্যে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গোবিন্দাসী, নিকরাইল, অজূর্না ও গাবসারা ইউপির জনপ্রতিনিধিরা জানান, কয়েক বছরে যমুনা নদীর ভাঙনে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে হাজার হাজার পরিবার তাদের ঘর-বাড়ি হারিয়ে সহায় সম্বলহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। ফসলী জমি হারিয়ে কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে গেছে। নতুন করে ভাঙনের কবলে পড়েছে আরো বেশ কয়েকটি গ্রাম। বর্তমানে নদীতে পানি বাড়াতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে অথচ ভাঙনরোধে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকরী কোন প্রদক্ষেপ গ্রহন করছে না। তারাও দর্শক হিসেবে নিব্ব ভূমিকা পালন করছেন। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবি) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ জানান, ভূঞাপুরে যমুনা নদী ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। বড় প্রকল্প অনুমোদন না হওয়াতে প্রকল্পগুলো ছোট ছোট আকারে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করা হবে। তিনি আরো জানান, প্রকল্পগুলো অনুমোদন করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদারকি না থাকায় সেগুলো ফাইলেই আটকে থাকছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *