সচিবালয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের ছড়াছড়ি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার চলছে বছরের পর বছর হয়রানি
লালন মণ্ডল ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ছোট্ট কামার কুণ্ডু গ্রামের মৃত আবু বকরের ছেলে আবু জাফর (ফিরোজ) একজন মুক্তিযোদ্ধা কালীন কমান্ডার। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়ে ছুটে গিয়েছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের চাকুলিয়া। সেখান থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসাবে ট্রেনিং নিয়ে দেশে ফিরে ৮ নং সেক্টরে একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসাবে যুদ্ধ করেন। ইনি ২০১৫ সালে ঝিনাইদহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়, কিন্তু মজার বিষয় এই মুক্তিযোদ্ধার কোন সনদ নাই।
দেখা গেছে ইন্ডিয়ান তালিকা ও মুক্তিবাত্রায় তার নাম রয়েছে। তার পুরা নাম আবু জাফর (ফিরোজ) কিন্ত ইন্ডিয়ান তালিকায় শুধু আবু জাফর এবং পিতার নাম আবু বকরের স্থানে আবু বাকের। মুক্তিবাত্রায় নাম ২ ভাবে লিপিবন্ধ হয়েছে এক খানে ফিরোজ এর একখানে ফিরোজ আহামেদ পিতার নাম এক খানে আবু বক্কর অন্য এক খানে আবু বাকের হয়েছে। তিনি সেখানে ফরম পূরণ করেছিলেন ইংরাজিতে । এই মুক্তিযোদ্ধা ২০১২ সাল থেকে নিজের এবং পিতার নাম সংশোধনের জন্য ঘুরছেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্ট ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়। এই দুই কার্যালয়ে প্রায় ৩ বছর ঘুরার পর শেষ পযুন্ত মুক্তিযোদ্ধা মিউজিয়াম ও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে রক্ষিত রেকড অফ ট্রেনিস এ ১৯৭১ সালের পূরণ কৃত ফরমটা খুজে পাওয়া যায় পরিষ্কার ভাবে আমার পিতার নাম লেখা আছে আবু বক্কর । এই ফরমটা দেখার পর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট পিতার নাম সংশোধন করে তাকে একটি চিঠি দেয়। সেই চিঠি রেকড অফ ট্রেনিস এর ১৯৭১ সালের পূরণকৃত ফরম, মুক্তিবাত্রার কপিসহ আবার সনদ পত্রের জন্য আবেদন করেন।
এই মুক্তিযোদ্ধার ভাষ্য মতে তিনি ২০১২ সাল হতে এই দিয়ে ৪ বার আবেদন করেছেন। ৪ বছরে ২০ বার সচিবালয়ে গেছেন। বর্তমান সচিব সহ ৫ জন যুগ্ন সচিবের সাথে কথা হয়েছে। প্রথম দিকে কথা বাত্রায় একটু আন্তরিক সবাই বলে আপনার মত একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার জন্য আমারা সব কিছুর করব, কিন্তু আস্তে আস্তে সুর পাল্টে যায়। পিয়নরা বলে স্যার কিছু খরচ পাতি না করলে কি ফাইল মুভ হয় ? তারপর দেখা যায় সেই সচিব পরিবর্তন হয়ে যায় সেই সাথে ফাইলটা হাওয়া হয়ে যায়। আসে নতুন সচিব আবার আমাকে নতুন ভাবে আবেদন করতে হয়। এই ৪ বছরের অভিজ্ঞাতায় আমার ধারনা জন্মেছে মুক্তিযোদ্ধা সচিবালয় আমার মত একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে সাহায্যের ব্যপারে আগ্রহী নয়, তারা অনেক বেশি আগ্রহী কি ভাবে আরও একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে সনদ দেওয়া যায়, কারন সেখানে তো টাকার থলি।
এই মক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের খুব কাছের লোক ছিলেন এবং স্নেহ করতেন যেখানেই দেখতেন বলতেন কি রে দুষ্টু কেমন আছিস। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পযুন্ত কলেজ জীবন বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের একজন মানুষ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বর্তমান বর্তমান সিকদার মেডিক্যাল কলেজ ও ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জয়নুল হক শিকদারের বাড়িতে কাটিয়েছেন। উনি তাহাকে ১০ বছর পিতৃ স্নেহে পালন করেছেন। সেখানে ভাইল ছিলেন বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে স্বপরিবারে নিহত হলে এই মুক্তিযোদ্ধার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। যাহার কারনে বাধ্য হয় দেশ ছাড়তে ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে একটি ব্রিটিশ জাহাজে চাকুরী নেয়। তারপর এ জাহাজ থেকে ও জাহাজে করে নানা দেশ ঘুরে অবশেষে ১৯৮১ সালে আমেরিকার নরফোক বন্দরে এসে পৌঁছান।তারপর জাহাজ থেকে পালিয়ে চলে যান ইমিগ্রান্টের স্বপ্নের শহর নিউইয়াকে। তিনি ১৯৮৮ সালে শেষের দিকে গ্রীন কার্ড পাওয়ার পর আবার আমেরিকায় পড়াশুনা শুরু করে ১৯৯২/৯৩ সালের ন্যাশনাল ডিনস লিস্টে জাইগা করে নেন এবং ১৯৯৬ সালে আমেরিকার ফরেন সার্ভিস পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন।এই কৃতিত্বের জন্য আমেরিকার ততকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন মার্কিন সিনেটে অনুমোদন করে ফরেন সার্ভিসের মনোনয়ন দেন। যাহার কারনে বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণকারী প্রথম ব্যাক্তি আমেরিকার ডিপ্লেম্যাট হিসাবে সার্ভিসে যোগ দিয়ে কুয়েত, জেনাভা, তিউনিশিয়া সহ নানা দেশে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন শেষে ২০১১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এখন তিনি বেশির ভাগ সময় দেশেই কাটান। ২০১৫ সালে ঝিনাইদহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন। তাহাছাড়া তিনি মুক্তিযোদ্ধা কালীন ৮ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর মনজুর আহমেদ ও বানপুর ক্যম্প্রের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজুর রহমানের (পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনির প্রধান) অত্যন্ত সুপরিচিত ছিলেন
এই জীবন সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, আমার মত একজন সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধাকে যদি দিনের পর দিন এই ভাবে ঘুরান হয় তাহলে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের কি অবস্থা? আমি ধিক্কার জানাই এই মুক্তিযোদ্ধা সচিবালয়। প্রকৃত পক্ষে এই মুক্তিযোদ্ধা সচিবালয় কার জন্য?