জামালপুর সীমান্ত অরক্ষিত অবাধে আসছে গরু, সাথে মাদকও

simanto news pic 20.06.16
ওসমান হারুনী,জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুর সীমান্তের বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের দিঘলকোনা, হারিয়াকোনা ও বাবলা কোনা গ্রামের প্রায় ২কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় গরু, বিভিন্ন ব্যান্ডের মাদক। ফলে গরু থেকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, সম্প্রতি এই সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ৩ শত গরু আসছে। সাথে আসছে বিপুল পরিমান ফেন্সিডিল, মদ, গাজা ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন ব্যান্ডের মাদক। (২০ জুন) রবিবার ভোরে ৩৫ বিজিবির সদস্যরা ৭২ বোতল ভারতীয় মদ উদ্ধার করে।
হাতি আতংকের কারণে বিজিবির টহল না থাকায় এই তিনটি পাহাড়ী গ্রামকে চোরাকারবারীরা নিরাপদ রোড হিসাবে গরুর পাশাপাশি মাদক নিয়ে আসছে।
তবে স্থানীয়রা বলেছে ভিন্ন কথা, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা জানান, প্রতি গরু বাবদ বিজিবিকে ৩০০ টাকা হারে চাঁদা দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে বিজিবি এদিকে আসে না। ফলে গরুর পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যন্ডের মাদক আসছে। চাঁদার তালিকায় শুধু বিজিবিই নয়, সাথে পুলিশ, সরকারী দলের নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকও রয়েছে বলে জানাগেছে।
এদিকে সীমান্ত পার হওয়ার সাথে সাথে ভারতীয় গরু গুলি বৈধ করার সঠিক পন্থা বের করে ফেলেছেন চোরাকারবারীরা। গরু গুলি বৈধ করতে ব্যবহার করা হয় স্থানীয় লাউচাপড়া বাজার ও কর্ণঝোড়া বাজারের ইজরাদারের রশিদ ।
লাউচাপড়াসহ এলাকা প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যাক্তি এই গরু ও মাদক চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে জানাগেছে। এদের মধ্যে ওয়াল, সোনা মিয়া, আব্দুস সাত্তার, আমিজল হক, ফিরোজ মিয়া, সাইদ মিয়া, ইয়ানুস আলী, গোবরা মিয়া, আব্দুল আওয়াল, মিষ্টার রানা, জুয়েল মিয়া, সাইফুল ইসলাম, নুর আলম অন্যতম।
আর স্থানীয় লাউচাপড়া বাজারের ইজারাদার ছামিউল হক পন্ডিত ও কর্নঝোড়া বাজারের ইজারাদার আব্দুর রাজ্জাক লিটন বাজারের স্লীপ দিয়ে অবৈধ গরু গুলি বৈধ করার কাজ করতে সহায়তা করেন।
আর বিজিবি ও চোরকারবারীদের মাঝে সম্বন্বয় করে দেন এলাকার লাইন ম্যান ফিরোজ, জুয়েল ও স্থানীয় নবনির্বাচিত মহিলা ইউপি সদস্যা নুর জাহান বেগম অঞ্জলী।
এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের জানান, ভারত থেকে গরু এনে প্রথমে লাউচাপড়া বাজারে আনা হয়। সেখানে এনে গরু গুলি সুষ্ঠুভাবে প্রাচারের জন্য স্থানীয় ২টি বাজারের স্লীপ সংগ্রহ করে তারা। পরে তাহেরের মোড়, কনেকান্দা মোড়, ছালামের মোড়, হাজীবাড়ী মোড় এলাকা থেকে গরু গুলি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়।
বাজারের স্লীপ দিয়ে গরু বৈধ করার হচ্ছে প্রসঙ্গে লাউচাপড়া বাজারের ইজারাদার ছামিউল হক পন্ডিত স্লীপের বিয়টি নিশ্চিত করে জানান, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এ কাজটি করি। এছাড়া গরু অবৈধ পন্য নয়। আমার নিকট যদি কেউ আসে তবে স্লীপ দিয়ে থাকি।
তবে কর্নঝোড়া বাজারের ইজারাদার আব্দুর রাজ্জাক লিটন স্লীপের বিয়টি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে মহিলা ইউপি সদস্যা নুরজাহান বেগম অঞ্জলী এ প্রতিনিধিকে জানান, এলাকার ছেলেপেলে করে খাচ্ছে। সাংবাদিকসহ সবাই এর ভাগ পায়। এতে এলাকার উন্নতি হচ্ছে। এখানের দোষের কিছু নাই।
৩৫ বিজিবি ব্যাটিলিয় কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল রফিকুল ইসলাম জানান, এই সীমান্ত দিয়ে গরু আসছে সেটি আমি জানি। তবে এলাকাটি ৩৫ ব্যাটিলিয়নের অধিনে নয়। তার পরেও টহল জোরদার করা হয়েছে। ফলে গত রাত ভোরে ৭২ বোতল মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।
এ দিকে ২৭ বিজিবি এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল হাফিজ জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না, আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি ।
এদিকে চোরাচালান রোধে বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন জানান, সীমান্তে চোরাচালান রোধে বিজিবিই কাজ করে। এখনে পুলিশের কোন ভুমিকা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *