আদমদীঘিতে মাকে কোলে নিয়ে সন্তানের ভিক্ষা

PIC-04.06.16
আদমদীঘি প্রতিনিধি : দশ মাস দশ দিন মায়ের গর্ভে থাকার পর ভুমিষ্ট হয় সন্তান। আর ওই সন্তান মায়ের কোলে পিঠে বড় হয়ে উঠে। কিন্তু ওই মা যখন বৃদ্ধা হয়ে পড়ে তখন কোন সন্তানই মাকে কোলে পিঠে নেয় না। অথচ এক বিরল ঘটনা এক বৃদ্ধা মাকে কোলে পিঠে করে ভিক্ষা করে বাঁচিয়ে রেখেছে হতভাগা এক সন্তান। ওই বৃদ্ধা মা কফিরন বেওয়া। বয়স ৮০বছর। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার কুন্দগ্রাম ইউনিয়নের চেঁচুয়া গ্রামে কফিরন বেওয়ার বাড়ী। কফিরনের স্বামী জহির প্রামানিক প্রায় ৪০ বছর পূর্বে মারা গেছে। কফিরন বেওয়ার দুই সন্তান। বড় ছেলে মমতাজ প্রামানিক (৫২) বিয়ে করে বর্তমানে আদমদীঘির তিলোচ গ্রামে থাকে। ছোট ছেলে মুনছুর প্রামানিক (৪৬) মাকে নিয়ে চেঁচুয়া গ্রামে থাকে। সংসারে তাদের অভাব। জমি-জমা নেই, কোন রকম মাথা গোজার মত সামান্য ভিটে রয়েছে। ওই ভিটেতে টিনের একটি ছাপড়া করে মা ছেলে বসবাস করে। অসহায় বৃদ্ধা মাকে বাড়ীতে রেখে ছেলে মুনছুর কোন কাজেও যেতে পারে না। তাই দু-বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য অভাগা মুনছুর তার মা কফিরন কে কোলে পিঠে করে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে।
মুনছুর জানায়, তার বাবা জহির প্রামানিক প্রায় ৪০ বছর পূর্বে মারা গেছে। তখন মুনছুরের বয়স ছিল ৬ বছর। অভাবের সংসারে তার মা তাকে ভিক্ষা করে দু-বেলা দু’মুঠো খাবার দিয়েছে। আজ সে মা বয়সের ভারে চলাফেরা করতে পারে না। মাকে দেখাশোনার জন্য প্রায় ২৪ বছর আগে মুনছুর বিয়ে করেছিল। সংসারে অভাব অনটন থাকায় বৌ ভাত খায়নি। পরে মুনছুর আর বিয়েও করেনি। এখন মাকে নিয়েই তার জীবন সংসার। সে আরো জানায়, বৃদ্ধা মাকে ঘরে রেখে কোথাও যেতে পারে না । তাই বৃদ্ধা মাকে কোলে পিঠে নিয়ে সারা দিন ভিক্ষা করে। সারাদিন ভিক্ষা করে যা পায় তাই দিয়ে চাল, ডাল কিনে নিয়ে মা ছেলে খায়। কুন্দগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বৃদ্ধা কফিরন বেওয়া কে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। প্রতি মাসে কফিরন বেওয়া বিধবা ভাতার চারশত টাকা করে পান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *