জামালপুরে এক অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন

Jalal
ওসমান হারুনী,জামালপুর প্রতিনিধি
জামালপুরের ইসলামপুরের এক অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
জানাগেছে, কম্পানী কমান্ডার শাহ্ মোঃ জালাল উদ্দিন জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে অকুতোভয় সময়ের সাহসী তরতাজা যুবক ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়।
ওই সময় পূর্ব পাকিস্থান সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা মুজাহিদ বাহিনীর ‘কোম্পানী কমান্ডার’ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে এপ্রিল মাসে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল জেলার মুধুপুরে বিভিন্ন এলাকায় প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। ১১নং সেক্টরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ‘যুদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডার’ হিসেবে দীর্ঘ ৯ মাস বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ৭১এর ৬ ও ৭ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একটানা দুইদিন যুদ্ধ করেন ইসলামপুর থানাকে পাক হানাদার মুক্ত করেন এবং সর্বপ্রথম তিনিই ইসলামপুরের বুকে স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন। স্বাধীনতার পর কর্মজীবনে এসে টিআই বাংলাদেশ আনছার/ভিডিপি পদে ০১/০৬/৮০ইং তারিখে নিয়োগ পেয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেন। চাকরিরত অবস্থায় ১৫/০৫/৯১ইং তারিখে আনছার ও ভিডিপি’র মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে ১,৪০,১৯৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আনছার সদস্য পরিবারের জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশের ন্যায় হ্রাসকৃত মূল্যে সর্বোচ্চ ৪ ইউনিট পর্যন্ত রেশন সামগ্রী মঞ্জুরী প্রদানের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব প্রেরণ করেন। সচিবালয় হতে পাশ করানোর জন্য পরিচালক (প্রশাসন) কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা টিআই শাহ্ মোঃ জালাল উদ্দিনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষের দিকনির্দেশনা নিয়ে সেনাবাহিনী, বিডিআর বর্তমান ও পুলিশ বাহিনীর ন্যায় হ্রাসকৃত মূল্যে রেশন সামগ্রী প্রদানের আদেশ অনুমোদনের জন্য খাদ্য, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে যান। খাদ্য মহাপরিচালক ২০/০৭/৯১ তারিখে, খাদ্য সচিব ১২/০৮/৯১ইং ও স্বরাষ্ট্র সচিব ১৭/০৬/৯২ইং তারিখে হ্রাসকৃত মূল্যে ৪ ইউনিট পর্যন্ত রেশন মঞ্জুরীর আদেশ অনুমোদন করেন। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস, তার জীবনে নেমে আসে পশ্চিমাকাশের কালো মেঘ। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে অজ্ঞাত কারণে ০৮/০৮/৯২ইং তারিখে অর্থ সচিব কর্তৃক নাকচ হলে শাহ্ মোঃ জালাল উদ্দিন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে প্রতিদিন রেশন মঞ্জুরীর কাজে সচিবালয়ে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কয়েকজন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ও জেলা এ্যাডজুটেন্ট, ঢাকার যোগশাজসে তার বিরুদ্ধে ০১/০৮/৯২ইং তারিখ থেকে অনুপস্থিতির মিথ্যা অভিযোগ এনে কোন প্রকার প্রশাসনিক তদন্ত ছাড়াই মহাপরিচালক কর্তৃক স্মারক নং-৯৪৭, তারিখ-২৪/১১/৯২ইং স্মাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
কর্মকর্তারা তার অজান্তে ষড়যন্ত্র করে তাকে চাকরিচ্যুত করে। তার কোন অপরাধ পরিলক্ষিত হলে নিয়োগ কর্মকর্তা ডিজি মহোদয় তাকে সাসপেন্ড/চাকরিচ্যুত করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন। অতীব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, একটি মহলের চক্রান্তে হীনস্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্যে অতি উৎসাহে তৎকালীন আইন কর্মকর্তা জনাব শফিকুর রহমান কোন শোকজ নোটিশ ও তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়েই মহাপরিচালকের পক্ষে তিনি নিজ স্বাক্ষরিত পত্রে বিগত বিএনপি সরকারের আমলে ১৬/১১/৯৩ইং তারিখে তাকে চাকরিচ্যুত করে। আনসার-ভিডিপি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের ১,৩১,১৯৮ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী ও আনসারদের জন্য এক ইউনিট হতে দুই ইউনিট পর্যন্ত হ্রাসকৃত মূল্যে রেশন সামগ্রী প্রতি বছর অতিরিক্ত ৬.৪৮ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও নগদ ৩.৬৫ কোটি টাকা ভর্তূকী বরাদ্দসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের নোট অনুচ্ছেদ-৭৪, তারিখ-২৯/০৫/৯৪ইং তারিখে অর্থ সচিব কর্তৃক অনুমোদনে সক্ষম হওয়ায় কর্মকর্তা/কর্মচারী ও আনসার সদস্যগণ হ্রাসকৃত মূল্যে রেশন সুবিধা ভোগ করে আসছে। আরো জানা যায়, গোপনে তাকে ১৬/১১/৯৩ইং চাকুরীচ্যুত করা হয়। উপরন্তু জারী নং-৪৩৮, তারিখ-১৮/০৭/৯৪ইং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফটোকপিতে ২২নং পাতায় ১৭/০৭/৯৪ইং তারিখে তৎকালীন সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয় এর সহকারী সচিব, উপ-সচিব ও যুগ্ম সচিব মহোদয়ের স্বাক্ষরকৃত কাগজে তার উপস্থিতি হিসেবে তার নাম অন্তভুক্ত আছে।অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করার পর চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর একাধিকবার আবেদন করেও চাকরি পুনর্বহাল হতে ব্যর্থ হয়ে পুনঃতদন্ত করে চাকরি পুনর্বহালের মাধ্যমে চাকরিকাল পর্যন্ত বেতন, আনুতোষিক ও পেনশন প্রাপ্য টাকা পরিশোধের নিমিত্তে সর্বশেষ বিগত ০৫/০৫/১৫ইং তারিখে সুষ্ঠু বিচার তথা সুফল পাওয়ার আশায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদনপত্র দাখিল করে। আবেদনপত্রটি পৌঁছার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে স্মারক নং-০৩০৭৯.০২৭.০৪৪.০০.০১. ২০১৪.৫২২(২), তারিখ-১২/০৭/১৫ইং মোতাবেক বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিনিয়র সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মহোদয়কে নির্দেশ দিয়ে অনুলিপিপত্র দিয়ে তাকে অবহিত করা হয়েছে। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর, খিলগাঁও, ঢাকা হতে ইতিপূর্বের ন্যায় অন্যায়ভাবে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত এর স্বপক্ষীয় কোন কারণ উদঘাটন না করে আবারও বিষয়টি নাকোচ করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর ধারা ৪(৩)ডি মোতাবেক ১৬/১১/৯৩ইং তারিখে চাকুরী হতে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন।
চাকরিচ্যুত হওয়ার পর থেকে প্রাণপন চেষ্টা করেও সুফল পাননি। বর্তমানে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বাকি জীবনটুকু ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রাপ্য বেতন ও পেনশন পাওয়ার জন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের সদয় হস্তক্ষেপ মাধ্যমে বিষয়টির প্রতিকার ও সুফল আশা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *