নীলফামারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে খোলা দরপত্রে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
মোতালেব হোসেন, নীলফামারী: চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরের নীলফামারী জেলা পুলিশের দরপত্র বিজ্ঞপ্তির ১৯নং ক্রমিকে বর্ণিত খাত সমূহের মালামাল সরবরাহ ও মেরামতের কাজের নিমিত্তে ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারী ঠিকাদারের নিকট হইতে প্রতিযোগিতা মূলক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। মোট কাজ ছিল ৮টি, (১) নীলফামারী জেলার ডোমার থানাধীন চিলাহিট তদন্ত কেন্দ্র মেরামত, (২) ডোমার থানাধীন চিলাহাটি কনস্টেবল কোয়াটার মেরামত, (৩) নীলফামারী পুলিশ লাইনের ৪ ইউনিট কোয়াটার মেরামত, (৪) নীলফামারী পুলিশ লাইনের ১৬ ইউনিট কোয়াটার মেরামত, (৫) নীলফামারী পুলিশ লাইনের এস.আই কোয়াটার মেরামত, (৬) ডিমলা থানার ভবন মেরামত, (৭) সৈয়দপুর থানার ভবন মেরামত, (৮) চিলাহাটি থানাধীন এস.আই কোয়াটার মেরামত।
উক্ত কাজ গুলির দৈনিক সমকাল ও দি নিউ নেশন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে পত্রিকায় ঠিকাদারের যোগ্যতা অনুযায়ী সৈয়দপুর উপজেলাধীন কয়েকজন ঠিকাদার ২৬-০১-২০১৬ইং তারিখে সিডিউল ক্রয়ের জন্য নীলফামারী পুলিশ সুপার অফিস সহকারী বাবু বিরেন চন্দ্রের কাছে গেলে অফিস সহকারী বলেন যে, সিডিউল এখনও তৈরী হয়নি, আপনারা আগামীকাল আসেন। ঠিকাদাররা বলেন যে, আগামীকাল সিডিউল বিক্রির শেষ তারিখ। আমরা সিডিউল ক্রয় করে রেট কোর্ড করতে সময় লাগবে, অতএব আজকেই সিডিউল দিলে ভালো হয় কিন্তু অফিস সহকারী সিডিউল দিতে সম্পূর্ণ অপারগতা প্রকাশ করেন। পরের দিন ২৭ তারিখ আবারো অফিসে গিয়ে সিডিউল নিয়ে আসেন সৈয়দপুরের কয়েকজন ঠিকাদার ২৭ তারিখ রাত ১২টা থেকে বিভিন্ন নম্বর হইতে সৈয়দপুরের ঠিকাদারের নম্বরে হুমকি ধমকি আসতে থাকে। তারপরের দিন ২৮ তারিখে সৈয়দপুরের ঠিকাদার খলিল এন্টারপ্রাইজ তার ব্যবসায়িক বন্ধু একজন সাংবাদিক কে সঙ্গে নিয়ে তিনি নীলফামারী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে দরপত্র ফেলতে গেলে দেখেন যে, সৈয়দপুরের আর একজন ঠিকাদারকে নীলফামারীর টেন্ডার বাজরা তাদেরকে না জানিয়ে সিডিউল বাক্সে ফেলার কারণে তাকে লাঞ্চিত করেছেন। তখন খলিল এন্টারপ্রাইজ আতঙ্কের মধ্যে পড়ে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দরপত্র বাজদের মধ্যে ২ গ্র“প হওয়ার কারণে একটি সুযোগ আসলে খলিল এন্টারপ্রাইজ দরপত্র বাক্সে ফেলে দ্রুত নীলফামারী ত্যাগ করেন। পরের দিন সিডিউল খুললে জানা যায় খলিল এন্টারপ্রাইজ ৫টি কাজে নিম্ন দরপত্র দাতা ও সৈয়দপুরের মাহবুব এন্টারপ্রাইজ অন্য ২টি কাজে নিম্ন দরপত্র দাতা হিসাবে দেখা যায়। এটি হওয়ার পরের দিন থেকে উক্ত নীলফামারীর টেন্ডার বাজরা বিভিন্ন ভাবে সৈয়দপুরের ঠিকাদারকে হুমকি ধামকি, ভয়ভীতি ও দরখাস্ত দিয়ে দরতত্র তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে এবং আরও বলেন না তুললে পুলিশ সুপার কে দিয়ে আপনাদের কাজ বাতিল করিয়া দেওয়া হবে। পরবর্তীতে খলিল এন্টারপ্রাইজ ও মাহবুবার রহমান বিভিন্ন সময়ে নীলফামারী এস.পি অফিস গিয়ে খবরা খবর নিতে শুরু করেন। এই ভাবে দুই মাস পার হওয়ার পরেও সৈয়দপুরের ঠিকাদাররা জানতে পারেনি যে তারা কাজ পাবেন কি না। অফিস গিয়েও তারা অফিস সহকারীর কাছে জানতে পেয়েছেন যে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। খলিল এন্টারপ্রাইজ এস.পি সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি বলেন আমি কোন ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলিনা। দুই মাস পর উক্ত অফিস সহকারী জানান যে, সৈয়দপুরের ঠিকাদারকে কোন কাজ দেওয়া হয়নি। কি কারণে হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, আপনাদের ভ্যাটের সংখ্যা ১০ ডিজিট তাই বাতিল করা হয়েছে। এ ব্যাপারে খলিল এন্টারপ্রাইজ অভিযোগ করেন যে, আমি দপরত্র বিজ্ঞপ্তির সময় চলাকালীন ১০ ডিজিটের ভ্যাটেই ২টি কাজ নীলফামারীতে করেছি। প্রথমটি জেলা পরিষদের অধীনে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের নামে ৭২ লক্ষ টাকার শেখ মসজিদের কাজ আর একটি নীলফামারী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় অতিরিক্ত স্কুল সম্প্রসারণের কাজ। জেলা পরিষদ ১০ ডিজিটের কারনে আমার কাজগুলি বাতিল করেননি। আমি যখন ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন করেছি তখন ছিল ১০ ডিজিট। ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন মানুষের জীবনে একবারই হয়। এটি সরকার ১১ ডিজিটে উন্নীত করলেও আমি সেটিরও আবেদন করে রেখেছিলাম এবং সেটি প্রক্রিয়াধীন ছিল। সেই কাগজও আমি এসপি সাহেবের অফিস সহকারীকে সরবরাহ করেছি। গভর্নমেন্ট অব দি পিপল রিপাবলিক অব বাংলাদেশ, লোকাল গভমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অব বাংলাদেশ তাদের নীতিমালায় ওপেন টেন্ডারে সরকারের সর্বনিম্ন দরদাতাকেই প্রাধান্য দিতে বলেছেন এবং (ডি ডেন্ডার প্রিপারেশনে) কোথাও বলেননি যে, ভ্যাট ১১ ডিজিট বা ১০ ডিজিট এটি না হলে কাজ বাতিল করে দেওয়া হবে। উক্ত ঠিকাদার আরও অভিযোগ করেন যে, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির ১৬ নম্বর কলামে ঠিকাদারের যোগ্যতা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে যা বলা আছে আমি তাই দিয়েছি। কি কারনে আমি নিম্ন দরদাতা হয়ে সরকারের আর্থিক সাশ্রয় করেও কাজ পেলাম না। অথচ বেশী দর দিয়ে নীলফামারীর ঠিকাদার কাজগুলি পেলেন। এ ব্যাপারে আমি কার কাছে বিচার আশা করবো। তারাতো পুলিশের লোক। বেশী বাড়াবাড়ি করলে আবার অন্যায়ভাবে যদি আমাকে ভিন্ন ভিন্ন মামলায় ফাসিয়ে দেয় এই ভয়ে আতঙ্কে আছি। তাই পত্রিকার মাধ্যমে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে নীলফামারী পুলিশ সুপার জাকির হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন যে, কাগজপত্র ত্র“টি থাকার কারনে কয়েকজনের কাজ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ঠিক কয়জনের বাতিল করা হয়েছে বা কার কার করা হয়েছে সেটি জানতে চাইলে তিনি বলেন এই মুহূর্তে আমার মনে নেই। পরবর্তীতে অফিসে জানতে পারবেন।