মহেশপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
মহেশপুর ঝিনাইদহ সংবাদদাতা: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার চিত্র পাল্টাতে গিয়ে তদবিরবাজ,টেন্ডারবাজ ও বদলী বানিজ্যকারী দালাল চক্রের রোষানলে পড়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশাফুর রহমান। এলজিইডি,প্রকল্প অফিস,প্রাথমিক শিক্ষা অফিস,রেজিষ্ট্রি অফিস ,সেটেলমেন্ট অফিস ও খাদ্য গুদামকে ঘিরে একটি দালালচক্র বছরের পর বছর তদবির,টেন্ডার ও বদলী বানিজ্য করে আসছে।এদের অত্যাচারে সাধারন মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল।ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় এরা মানুষকে এমন ভাবে জিম্মি করে ফেলেছিল যে, সম্মানহানীর ভয়ে কেহ প্রতিবাদ করতে সাহস পেতো না।
আশাফুর রহমান যোগদান করার পর উল্লেখিত অফিস সমূহ হতে দালাল চক্র উচ্ছেদের কাজ শুরু করেন।এত ক্ষিপ্ত হয়ে একটি কুচক্রি মহল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রÍ শুরু করেছে। এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে যোগদানের পর আশাফুর রহমান প্রথমে শিশু মৃর্ত্যুর হার সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনার জন্য বাল্য বিবাহ বন্ধের উদ্দোগ গ্রহন করেন।উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন,নির্বাহী কর্মকর্তার তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহনের ফলে গত ৬মাসে৭২টি বাল্য বিবাহ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছেন।এ সময় আশাফুর রহমান বর,কাজী ও ঘটক সহ ১৫জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন।অনেক ঘটনায় জরিমানা করা সহ মুচলেখা নিয়ে বাল্য বিবাহের সাথে জড়িতদের সাবধান করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মহেশপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ড.আব্দুল মালেক গাজী জানান,ইউএনও আশাফুর রহমান যোগদানের পর মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব ভবন নির্মানের জন্য জমির ব্যবস্থা,অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা,গ্রাম থেকে কাজে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের দুপুরে খাবারের জন্য তিনি নিয়মিত চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন।তিনি ২বছর মহেশপুরে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলে এই উপজেলা বাংলাদেশে মডেল হবে। এর পর তিনি উপজেলা প্রকল্প অফিসের মাধ্যমে বাস্তবায়নকৃত প্রকল্প পরিদর্শন করে কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য সাধারন মানুষকে সচেতন করতে শুরু করেন। প্রকল্প কর্মকর্তা মেহেরুন্ছেনা বলেন,নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতার কারনে প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেক সহজ হয়েছেন। এখন দালালদের অত্যাচার অনেকাংশে কমেছে। এছাড়া এলজিইডি ও পিআইও অফিসের কাজের টেন্ডারে স্বচ্ছতা আনার জন্য লটারী চালু করেছেন।ভুমি সংক্রান্ত বিষয়ে সাধারন মানুষ যাতে হয়রানীর স্বীকার না হন সেজন্য তিনি সেটেলমেন্ট,ভুমি অফিস ও রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় করে থাকেন। বদলী বানিজ্যের অন্যতম স্থান মহেশপুর প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।এক শ্রেনীর শিক্ষক স্কুলে না গিয়ে শিক্ষা অফিসে ঘুর ঘুর করতেন।টাকার বিনিয়ে শিক্ষকদের পছন্দের স্থানে বদলী করানো ও পেনশনের টাকা পাইয়ে দেওয়ার কাজে এরা সারাদিন অফিসের পাশে বসে সময় কাটাতেন। এতদিন স্কুলে না গেলেও বেতন তুলতে কোন সমস্যা হয়নি।বর্তমান ইউএনও শিক্ষকদের বদলীর জন্য সরকারী নীতিমালার আলোকে উপজেলা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে একটি কমিটি করেছেন। ফলে বদলীর জন্য তদবিরকারীরা বেকার হয়ে পড়েছে। বদলীবাজ তদবিরকারীদের পয়সা কামানোয় বিঘœ সৃষ্টি হয়েছে।অপরদিকে ইউএনও’র কারনে স্কুলের রিপিয়ারিং ও অন্যান্য কাজের টাকা তছরুপের কোন সুযোগও হাতছাড়া হয়ে গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন,তিনি যোগদানের পর হতে কমিটির মাধ্যমে শিক্ষকদের বদলী করানো হয়। প্রশাসনের বিরুদ্ধে যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন,স্কুল ফাকি দিয়ে কেও রেহায় পাবে না। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন,ইনএনও,র সহযোগিতার কারনে এবার নকল মুক্ত পরিবেশে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব আবুল হোসেন লিটন বলেন,দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতনতামুলক কর্মকান্ডে ইউএনও অংশ গ্রহন করে সততা সংঘের কার্যক্রমকে গতিশীল করার ব্যপারে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন।উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আবু জাফর বলেন,ইউএনও’র নিজস্ব অর্থে একজন পঙ্গু বিদ্যুত কর্মীকে মটর ভ্যান করা হয়েছে।নাটিমা গ্রামের একজন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাড়ীর নির্মান কাজ চলছে। ইউএনও’র দক্ষতার কারনে জামায়াত বিএনপি অধ্যুূষিত এলাকায় ইউপি নির্বাচন কোন দাঙ্গা হাংগামা ছাড়াই শেষ হয়েছে।
উল্লেখিত নানা কারনে একটি মহল ইউএনওকে বদলী করানোর জন্য জোর তদবির চালাচ্ছেন। ইউএনওর বিরুদ্ধে ফেসবুকে বানোয়াট কথাবার্তা লিখে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশাফুর রহমান বলেন, ২০১৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার জন্য বর্তমান সরকার কার্য্যক্রম হাতে নিয়েছেন। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বাল্য বিয়ে বন্ধে কাজ শুরু করেছি ।বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন ইউনিয়নের জন প্রতিনিধি , মসজিদের ইমাম ও সমাজসেবক দের নিয়ে মত বিনিময় করেছি। বর্তমানে বল্যবিবাহ অনেকাংশে কমে এসেছে। টেন্ডারবাজ ও তদবিরকারী দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছি।কাজ করতে গিয়ে নিন্দুকের ষড়যন্ত্রেÍর মখোমুখি হচ্ছি,তার পরেও সরকারের ভাবমুর্তি বৃদ্ধির জন্য দালালমুক্ত মহেশপুর উপজেলা গড়েতোলার কাজ করে যাব।