মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খননে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি সহা¯্রাধীক ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের ২০ লাখ টাকা

Bagerhat News
জাকারিয়া আগুন (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : অপরিকল্পিতভাবে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খনন করে ব্যাক্তিগত মালিকানাধীন ৬-৭ একর জমিতে মাটি ফেলে ভরাট করার ফলে চ্যানেল সংলগ্ন ২ পাড়ের সহ¯্রাধীক পরিবার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো তাদের জীবন-জীবিকা হারিয়ে রিক্ত নিঃশ্ব হয়ে পথে বসেছে। আর্থীকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ছেলে-মেয়েদেয়ের লেখাপড়া অনিশ্চিত ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সম্পুর্নভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ সহ¯্রাধীক পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে ক্ষতিপুরন চেয়ে আবেদন নিবেদন করলেও এক বছরের বেশী পার হলেও পাননি কোন ক্ষপিুরণ। সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামান্য ক্ষতি ! অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খনন সংক্রান্ত ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মৌজা ভিত্তিক আবেদনের তথ্য চকে দেখা যায়, রামপাল সদর মৌজায় ৬১টি, কামরাঙ্গা মৌজায় ৪০টি, বড়দিয়া মৌজায় ২৮টি, পেড়িখালী মৌজায় ৬৯টি, বাঁশতলী মৌজায় ৭টি, হুড়কায় ১৭৯টি, চাড়াখালী মৌজায় ৪৮টি, সিকিরডাঙ্গা মৌজায় ৮টি, কুমারখালী মৌজায় ৩১টি, ছোট কাটালী মৌজায় ৯৭টি ও অন্যান্য মৌজায় ১৫টি মোট ৫৯৬টি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের আবেদনের তদন্ত করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৩-৪ শতাধীক আবেদন পত্র যাচাই বাঁছাই চলছে বলে রামপাল উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও আমলারা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের কাছে তাদের বক্তব্যব্যে বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে চ্যানেল খননে সামান্য ক্ষতি তো স্বীকার করতেই হবে। ৬-৭ শতক একর জমি ব্যাক্তিমালিকানাধীন এরপর ভূমিহীনদের বন্দোবাস্তো দেওয়া জমির পরিমান প্রায় শতাধীক একর। এত বিপুল পরিমান কৃষি জমি, বনজ ও ফলজ গাছপালা, মৎস্য খামার, বাড়ীঘর ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এ বিপুল সংখ্যাক ক্ষতিগ্রস্থরা পায়নি কোন দান অনুদান বা ক্ষতিপুরণ। উল্টো তাদের হয়রানি বা ভয়ভীতি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ক্ষতিগ্রন্থরা জানান, মৎস্য খামার ও অন্যান্য খাতে বিভিন্ন তফসিল ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ওই সব জমির অনুকূলে ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। বড়দিয়ার মোন্তাজ মোল্যা জানান, তার বন্দোবাস্তোকৃত জমির পরে মৎস্য খামারের অনুকূলে ৬০ হাজার টাকা লোন নেওয়া আছে। এছাড়া তার বাড়ীঘর ভেঙ্গে অন্যাত্র চলে যেতে হয়েছে। বর্তমানে তিনি দেনার দায়ে দিশেহারা। এভাবে হুড়কার দুলাল অধিকারী জানান, ৬৮শতক ব্যাক্তিমালিকানা জমি ছিল তা মাটি ফেলে ভরাট করেছে বিআইডব্লিউটিএ। এখন তার আয়ের কোন উৎস নেই। ৬ সদস্যের পরিবার তার। কোন ক্ষতিপুরণ পাননি। এভাবে হুড়কার কালিপদ মন্ডল, নমিতা মন্ডল, তিমির বাছাড় জানান তাদের কষ্টের কথা। ছেলে পুলে নিয়ে তাদের অনিশ্চিত জীবন। কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপুরণ দেবে কিনা সেটিও তারা জানেন না। এ ব্যাপারে কথা হয়, রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব কুমার রায়ের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, সরকারি কিছু বিধিবিধান রয়েছে। প্রায় ৬শতাধীক আবেদনপত্র প্রসেস করা হয়েছে বাকীগুলোও জরিপ কার্যক্রম চলছে। সরকার জমি অধিগ্রহণ করলে ক্ষতিপুরণ দেয় সরকার তো জমি অধিগ্রহণ করেনি কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থরা ক্ষতিপুরণ পাবে? তবে সরকারিভাবে থোক বরাদ্দ হিসাবে ২০ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে ২টি মৌজার ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য। প্রশ্ন করা হয় কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে সেই তুলনায় বরাদ্দ মাত্র ২০ লাখ টাকা এতে কি ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য যথেষ্ট ? এব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা আরও বেশী বরাদ্দ চেয়ে লিখেছি।
এ ব্যাপারে পরিবশেবাদী সংগঠন কোষ্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশীপ (সিডিপি) ’র বিভাগীয় সমন্ময়কারী এস,এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের সঠিক তালিকা করতে হবে। কোন প্রকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া। ক্ষতিগ্রস্থদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ ও পুনর্বাসন করতে হবে। সরকারি জমি বন্দোবাস্তের অপেক্ষায় থাকা বিপুল পরিমান ভূমিহীন যারা নদীর চর ভরাটি জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে তাদেরও ক্ষতিগ্রস্থদের আওতায় এনে ক্ষতিপুরন দিতে হবে। মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন শেখ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে উপযুক্ত ক্ষতিপুরনের দাবি জানিয়ে আসছি কিন্তু জানতে পারলাম থোক বরাদ্দ হিসাবে মাত্র ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা অতি সামান্য। তিনি জরুরী ভিত্তিতে উপযুক্ত ক্ষতিপুরন ও পনর্বাসনের দাবি জানান। অন্যথায় ক্ষতিপুরন পাওয়ার জন্য শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন সংগ্রামের পথ বেছে নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *