কৃষিখাতে উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ লোহাগড়ায় বীজ ও সার পৌছায়নি প্রান্তিক চাষিদের কাছে
কাজী আশরাফ, লোহাগড়া(নড়াইল) : নড়াইলের লোহাগড়ায় চলতি রবি মৌসুমে গম ও বারি খেসারী উৎপাদন বৃদ্ধির প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় প্রদত্ত কৃষি উপকরণ হরিলুট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে সরকারের কৃষিখাতে উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়েছে। সম্প্রতি উপজেলা কৃষি অফিস এ মৌসুমে ৩ হাজার ৭’শ ৭৫ জন কৃষককে কৃষি উপকরণ বিতরণ করেছে। প্রতি জন কৃষককে বিঘা প্রতি ২০ কেজি গম বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সব কৃষি উপকরণ প্রান্তিক কৃষকের তুলনায় সাধারণ কৃষকেরা এমনকি যাদের কৃষি জমি নেই, তারাও বীজ ও সার পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভাসহ ১২ টি ইউনিয়নে চলতি রবি মৌসুমে প্রত্যেক কৃষককে বিঘা প্রতি ২০ কেজি গম বীজ, ৩০ কেজি সার সহায়তা দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত ইউনিয়ন কৃষি পূনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে লোহাগড়া পৌরসভায় ২’শ ১০ জন, কাশিপুর ইউনিয়নে ৩’শ ৬৫ জন, ইতনা ইউনিয়নে ৫’শ ৯০ জন, কোটাকোল ইউনিয়নে ১’শ ৯০ জন, মল্লিকপুর ইউনিয়নে ১’শ ৬০ জন, দিঘলিয়া ইউনিয়নে ২’শ ৫ জন, লোহাগড়া ইউনিয়নে ২’শ ২০ জন, জয়পুর ইউনিয়নে ২’শ ৩০ জন, লক্ষীপাশা ইউনিয়নে ২’শ ২৫ জন, নোয়াগ্রাম ইউনিয়নে ৪’শ ৫০ জন, শালনগর ইউনিয়নে ২’শ ৩০ জন, লাহুড়িয়া ইউনিয়নে ২’শ ১০ জন ও নলদী ইউনিয়নে ৪’শ ৯০ জন কৃষক নির্বাচন করে তাদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ করে। কৃষি উপকরনের অধিকাংশই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের পছন্দের লোক পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিতরণকৃত কৃষি উপকরণ বেশিরভাগ প্রান্তিক কৃষকদের ভাগ্যে জোটেনি। ওই সব উপকরণ পাওয়া অনেকেই সার ও বীজ বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। ইতনা ইউনিয়নের কৃষক ইলিয়াস খা জানান, যাদের বীজ ও সার দরকার তাদের দেওয়া হয়নি অথচ যাদের প্রয়োজন নেই তাদের দ্ওেয়া হয়েছে। মল্লিকপুর ইউপির মহিষাপাড়া গ্রামে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১ নং ওয়ার্ডের উপকরণ পাওয়া ৫ কৃষকের মধ্যে মুরশিদ ও আবুল কেরানী, মিলু মৃধা, আবুল কেরানী, নাহিদ শেখ, নোয়াগ্রাম ইউপির চর শামুকখোলা গ্রামের শাহাদত ও জাফর মাষ্টারসহ ৮জন, জয়পুর ইউপির আড়পাড়া গ্রামের খিজাল ও তনুসহ ৫ জন কৃষকই বীজ ও সার বিক্রি করে দিয়েছেন।
ইতনা ইউপির ইতনা মধ্যপাড়ার সহোদর মোমরেজ থান্দার ও মোস্ত থান্দার বলেন, আমরা দুই ভাই উপকরণ পেয়েছি, গম বপনের মতো পর্যাপ্ত জমি আমাদের নাই, তাই কিছু বীজ বপন করেছি, বাকি সব খেয়ে ফেলেছি।
এ বিষয়ে ইতনা ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, দাপ্তরিক অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় গম বীজ ও সার নিয়ে কৃষকেরা কি করেছেন খবর নিতে পারি নাই।
একই প্রশ্নের জবাবে মল্লিকপুর ইউপির উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নীতিশ চন্দ্র বালা জানান, তাঁর ব্যক্তিগত কাজে (হমিওপ্যাথি পরীক্ষা) কৃষকদের খোজ খবর নিতে পারি নাই।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, প্রকৃত প্রান্তিক চাষিদের নামের তালিকা স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সমন্বয়ে তৈরি করার কথা। কিন্তু চেয়ারম্যান এবং মেম্বার-রাই এই তালিকা তৈরি করে আমাদের কাছে দেন। সে জন্যই আমাদের করার কিছু থাকে না। বীজ ও সার বিক্রির বিষয়ে তিনি আরও জানান, কিছু কিছু ইউনিয়নে এ ধরনের খবর পাওয়া গেছে, তবে আগামীতে যাতে এ ঘটনার পুনরাবৃর্ত্তী না ঘটে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।