যশোর আমন সংগ্রহ : কথিত নেতা-জনপ্রতিনিধিদের পকেটে চাষিদের মুনাফা
কে এম রফিক, যশোর : সরকার চলতি আমন মৌসুমে ২লক্ষ মেট্রিক টন চাল ৩১ টাকা কেজি দরে সংগ্রহের সিন্ধান্ত নিয়ে আমন চাল ক্রয় ও সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে । এর মধ্যে খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন। ইতিমধ্যেই শুরু করা হয়েছে এই অভিযান। চাষিদের সুফল ও মধ্যসত্বভোগিদের ত্যাগ করার লক্ষ নিয়ে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলেও এ অভিযানের সুফল বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক চাষিরা লাভ ভোগ করে চলেছে মধ্যসত্বভোগিসহ কথিত নেতা, জনপ্রতিনিধিরা। এর ফলে চাষি ও মিল মালিকগণ শুধু আর্থিক ক্ষতির চিন্তাই অসহায় হয়ে পড়ছেন। খুলনা বিভাগের সংশ্লিষ্ট খাদ্য কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে পুরো ফায়দা লুটে নিচ্ছেন নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। তাদের বেপরোয়া অর্থালিপ্সুতায় খাদ্য বিভাগে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যপক ঘুষ বাণিজ্য। ক্ষমতাসীন নেতা, জনপ্রতিনিধিদের এভাবে অর্থ আয়ের এ প্রক্রিয়ায় খুলনা বিভাগে হরিলুট হতে যাচ্ছে প্রায় ৬ কোটি টাকা!
সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে, সরকার চলতি আমন মৌসুমে খুলনা বিভাগের যশোর জেলায় ৩ হাজার ৬৯২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে চুক্তি সম্পাদনের পর মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করা নিয়ে চলছে নেতা, জনপ্রতিনিধিদের হিস্যা আদায়। ক্ষমতাসীন দলের নেতা জনপ্রতিনিধিদের চাহিদা ও নির্দেশনা মোতাবেক খাদ্য কর্মকর্তারা উৎপাদক কৃষককে বঞ্চিত করে পুরো ফায়দা লুটে নিচ্ছেন। কার্যত আপদকালীন মজুদবৃদ্ধি এবং উৎপাদক কৃষককে উৎপাদিত খাদ্য শর্ষ্যরে ন্যায্য মুল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্যই চলে খাদ্য সংগ্রহ অভিাযান। কিন্তু কৃষকবান্ধব দাবিদার সরকার কৃষকদের কাছ থোকে ধান সংগ্রহের কোন বরাদ্দ রাখেনি। প্রতারণামূলক এই আচরণে আমন চাষিরা হতবাক, বঞ্চিত। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করার জন্য চালের দাম প্রতিকেজি ৩১ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মিলাররা ১৯ টাকা ৫০ পয়সা কেজি দরে কৃষকের ধান কিনবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাজার দর এর ধারে কাছেও নেই। শুকনা ধান প্রতি মন ৫৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি ১৪ টাকা ৭৫ পয়সাা। এতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমুল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এর পর যোগ হয়েছে কর্মকর্তাসহ কথিত জনপ্রতিনিধিদের নামে নেতাদের হিস্যা আদায় কার্যক্রম। যশোর সদর থেকেও এরকম ভাবে চলছে হিস্যা আদায়। এব্যাপারে সরেজমিনে দেখা গেছে যশোর আমন সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে ও মিলারদের কাছ থেকে নিয়মিত হিস্যা নিয়ে পৌছে দেওয়া হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের লোকজনের কাছ থেকে। অনেকের নামে এরুপ বদনাম থাকলেও যশোর ৩ আসনের সংসদ সদস্যকে নিয়ে এরুপ বদনাম পূর্বে শোনা না গেলেও বর্তমানে তার নামে হিস্যা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন তার কাছের কয়েকজন নেতা কর্মী যারা নব্য আওয়ামীলীগার হয়েছেন ও সংসদ সদস্যর বাড়িতেই সারাদিন বসে থাকেন তাদের মধ্যে লাবু ও তৌফিকের নাম সবার উপরে বলে কথা উঠেছে।
চাল সংগ্রহ অভিযানের এই সমস্যায় বিশেষ করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের লোভের খায়েশ মিটাতে তাদের লাভের সবটুকু চলে যাচ্ছে মিলারসহ কৃষকদের। বাড়তি দামে ধান কিনবে কিভাবে। চুক্তি থেকে শুরু করে মিলারদের পদে পদে গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। চুক্তির পর চাল সংগ্রহের সময় শুধু নেতা জনপ্রতিনিধিদের বাবদ ২ হাজার টাকা পর্যন্ত টনে আদায় করা হচ্ছে। তাছাড়া, সংশ্লিষ্ট খাদ্য কর্মকর্তাদের পিসি তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে কেজিতে ২টাকা হিসেবে ধরলেও লুটে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এভাবেই দাপ্তরিক ও সরকার দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে পুরো ফায়দা লুটে নিতে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট খাদ্য কর্মকর্তা ও নেতা জনপ্রতিনিধিরা। সবাই লুটপাটে ব্যস্ত থাকায় চাল সংগ্রহ অভিযানের সুফল বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত চাষিরা। কারণ, বেপরোয়া এই হিস্যার পর পরিবহন লেবার ও অন্যান্য খাতের হিসেব তো আছেই। সব মিলিয়ে খাদ্য সংগ্রহ নিয়ে চলছে ব্যপক লুটপাট। এমনকি স্বশরীরে উপস্থিত থেকে মিলারদের বা তাদের প্রতিনিধিদেরকে আগাম টন প্রতি ২০০০টাকা পরিশোধ না করলে ও,সি.এল,এস,ডি বা গুদাম রক্ষককে চাউল গুদামে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে।