আত্রাইয়ের ময়েন উদ্দিন হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী

1ao93kjxdf4uu[1](1)
রুহুল আমিন, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর আত্রাইয়ে বিলের খোলা জলাশয়ে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে উপজেলার দমদমা গ্রামের ময়েন উদ্দিন। অভাবের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। তার এ সফলতা দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক বর্তমানে হাঁস পালন শুরু করেছে। উপজেলা থেকে ৪ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে একটু পশ্চিম দিকে তাকালেই দেখা যাবে বিলে ঘেরা দমদমা গ্রাম। আর এ বিলের বাঁধ এখন হাঁসের খামারে পরিণত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক যুবক বিলের বাঁধে গড়ে তুলেছে হাঁসের খামার। এদের মধ্যে ময়েন উদ্দিনের হাঁসের খামার সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। বর্তমানে তার হাঁসের খামারে হাঁসের সংখ্যা রয়েছে ৫ শত থেকে ৬শত মতো। সরেজমিনে খামার পরিদর্শন শেষে ময়েন উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, অভাবের সংসারে আমি পড়াশুনা করতে পারিনি। নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিছু করার। কিন্তু অর্থের অভাবে সেই স্বপ্নটা সত্যি হয়ে উঠে না। সে অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করেন হাঁসের খামার গড়ে তুলেন। কিন্তু হাঁস পালন সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না তার। উপজেলার মাধাইমুড়ি এলাকায় খোলা জলাশয়ে বিলের মাঝে হাঁস পালন করা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আহসানগঞ্জ হাট থেকে মাত্র ৫০টি হাঁস কিনে শুরু করেন হাঁস পালনের যুদ্ধ। কঠোর পরিশ্রম করে ৩ বছরের মধ্যে হাঁস পালন করে ব্যাপক লাভবান হন তিনি। এরপর থেকে তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এতে থেমে থাকেনি ময়েন, নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছে হাঁসের হ্যাচারী। নিজের হ্যাঁচারীতে তিনি এখন তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করছেন। তিনি আরও জানান বিলের বাঁধে হাঁসের খামার গড়ে তুলতে তেমন খরচের প্রয়োজন পড়ে না। অল্প খরচে লাভও হয় দ্বিগুন। খামারে একটি হাঁসের জন্য যে পরিমান খরচ হয়, খোলা বিলে সে খরচ অর্ধেকেরও কম। কারণ বিলে হাঁস শামুকসহ বিভিন্ন খাবার সহজেই পায়। ফলে হাঁসের জন্য বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। বিলের খোলা জায়গায় খাবার খাওয়ার জন্য হাঁস ডিমও দেয় অনেক বেশি। এছাড়া হাঁস রাখার জন্য কোন ঘর বানাতে হয় না। বাঁধের উপর পলিথিন দিয়ে সামান্য খরচে হাঁস রাখার জায়গা বানানো যায়। খোলা বিলে একটি হাঁসের জন্য খরচ হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ৪ থেকে ৫ মাস পর হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। ক্যাম্বেল জাতের প্রতিটি হাঁস ২৫০ থেকে ২৮০ টি পর্যন্ত ডিম দেয়। নিজের হ্যাচরীতে বাঁচ্চা উৎপাদনের কারণে ময়েনের হাঁস পালনের খরচ অন্যদের তুলনায় অনেক কম। বর্ষা মৌসুমে তার ৬ মাস কাটে বিলের বাঁধে। বাঁকি সময় থাকে সে হ্যাচারী নিয়ে। হাঁসের ডিম যখন আকারে ছোট হয়ে আসে বা ডিম দেয়া একেবারে কমে গেলে সেই হাঁস বিক্রয় করে দেয়া হয়। তা থেকে লাভ হয় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। ময়েনের হাঁস পালনের সাফলতা দেখে এলাকার অনেকেই গড়ে তুলেছেন বিলের বাঁধে হাঁসের খামার। সবাই কম-বেশি লাভবান হচ্ছেন সেই সাথে দুর হচ্ছে এলাকার বেকারত্ব। ময়েনের পাশাপাশি অন্যদের খামারে হাসের পরিমান ৩ থেকে ৪ শত। অপর একজন হাঁস পালনকারী জাকারিয়া জানান, লেখাপড়া শিখে চাকরির আশায় বসে না থেকে অল্প খরচে হাঁসের খামার গড়ে তুলে সহজেই স্বণির্ভর হওয়া যায়। তার মতে লেখাপড়ার পাশাপাশি হাঁস পালন করাটা কোন কষ্টের নয়। তাই এখন তাদের সবার মুখে মুখে একটি-ই শ্লোগান, “করবো মোরা হাঁসের চাষ-থাকবো সুখে বারো মাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *