তিন চাকার বৃত্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক

Lohagara pic 15 12 15
কাজী আশরাফ, লোহাগড়া(নড়াইল)প্রতিনিধি : ভ্যানের চাকা ঘুরিয়ে পরিবারের চাকা সচল করার চেষ্টা করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি রাজ্জাকের। স্বদেশ প্রেমের টানে সবকিছু উপেক্ষা করে, দেশকে শত্র“মুক্ত করার প্রত্যয়ে, যে হাতে একদিন অস্ত্র তুলে নিয়ে বীরত্বের সাথে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, জীবিকার টানে সেই হাতেই আজ জাপটে ধরেছেন ভ্যানের হ্যান্ডেল। বেঁচে থাকার জন্য এখন এই জরাজীর্ণ ভ্যানটিই তাঁর একমাত্র অবলম্বন। নড়াইল জেলার লোহাগড়া পৌরসভাধীন রাজুপুর গ্রামের মৃত আলতাফ হোসেন শিকদারের একমাত্র ছেলে আব্দুর রাজ্জাক(৬৫) দেশমাতৃকার টানে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। জানা গেছে, তিনি যুদ্ধকালীন সময়ে ভারতের পশ্চিম বাংলার টালিখোলায় ট্রেনিং ক্যাম্পে ভর্তি হয়ে পর্যায়ক্রমে বারাকপুর এবং বিহারে অস্ত্র ট্রেনিং শেষ করে বয়রা বর্ডার দিয়ে দেশে প্রবেশ করেন। ৮নং সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জুরের অধীনে দেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। ৮ ডিসেম্বর লোহাগড়া থানা আক্রমণের দিন অত্যান্ত বীরত্বের সাথে রাজ্জাক সহযোদ্ধাদের সাথে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে লোহাগড়াকে হানাদার মুক্ত করেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় অথচ, জীবদ্দশায় কেউ একবার খবরও নেয় না। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভেবেছিলাম মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমার ভাগ্যের পরিবর্তন হবে, জুটবে একখন্ড বসবাসের জমি। কিন্তু বিধিবাম! আজও আমার জন্য একটুকরো জমিও জোটেনি। উল্টো বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত যে ৬ শতক জমির উপর বাস করছি তা নিয়েও চলছে মামলা মোকর্দ্দমা”। বর্তমান সরকারের কাছে তিনি বসবাসের জন্য একখন্ড জমির দাবি জানান । স্ত্রী সহ দুটি বিবাহযোগ্য কন্যা সন্তান নিয়ে খেয়ে-না খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে তিনি। বড় মেয়ে তহমিনাকে পার্শ্ববর্তী রামচন্দ্রপুর গ্রামে বিয়ে দিলেও সে বিয়ে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। স্বামী পালিয়ে ভারত চলে যাওয়ায় তহমিনা বর্তমানে আব্দুর রাজ্জাকের সংসারে ফিরে এসেছে। ছোট মেয়ে লাইজু লক্ষ্মীপাশা বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। তাঁকেও বিয়ে দিতে হবে-সেই চিন্তায় আব্দুর রাজ্জাকের রাতে ঘুম আসে না। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদ নং- ৩২০১৫। আব্দুর রাজ্জাক সরকারী ভাবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছাড়া আর কিছুই পান না। প্রাপ্ত ভাতার টাকায় সংসার চলে না। তাই বাঁচার তাগিদে এই বৃদ্ধ বয়সেও আব্দুর রাজ্জাককে ভ্যান চালনার মত কঠিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! মুক্তিযোদ্ধা হয়েও ভ্যান চালনা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই মুক্তিযোদ্ধার শরীরে রোগ-ব্যাধি বাসা বেঁধেছে। প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। বন্ধ থাকে ভ্যান চালনা। আয় না করলে সংসার চলে না। চরম অভাব আর অনটনের মধ্যেই কেটে যাচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাকের যাপিত জীবন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *