খুলনায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২০ কোটি টাকার কাজ ভাগবাটোয়ারা পুলিশের উপস্থিতিতে দফায় দফায় মহড়া : ভিড়তে পারেনি সাধারণ ঠিকাদাররা
মোঃ নজরুলইসলাম, জেলা ব্যুরো চীপ, খুলনাঃ খুলনা বিভাগীয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১৯ কোটি ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকার কাজ স্থানীয় ক্ষমতাসীনরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পুলিশের উপস্থিতিতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা মহানগরীর দৌলতপুরস্থ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে দফায় দফায় মহড়া দেয়। তাদের বাধার কারণে সাধারণ ঠিকাদাররা দপ্তরে যেতে পারেননি। সিন্ডিকেটকারীরা সরকার দলীয়রা নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে খুলনার ৯টি কলেজ ও সাতক্ষীরার ৪টি কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণের পৃথক ১৩টি কাজ ভাগিয়ে নেয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ নভেম্বর খুলনায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রেজাউল ইসলাম বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে টেন্ডার আহ্বান করেন। কাজগুলো হচ্ছে খুলনার বটিয়াঘাটা কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য এক কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার, দাকোপ কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে এক কোটি ৮০ হাজার, রায়েরমহল কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে এক কোটি ৪৩ লাখ ২০ হাজার, শহীদ জিয়া কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে এক কোটি ৪৩ লাখ ২০ হাজার, তেরখাদা নর্থ খুলনা ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে এক কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার, ডুমুরিয়া পল্লীশ্রী কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে এক কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার, কপিলমুনি গার্লস কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে এক কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার, লক্ষ্মিখোলা কলেজিয়েট স্কুলের একাডেমিক ভবন নির্মাণে এক কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার, হরিঢালি কপিলমুনি গার্লস কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে এক কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার এবং সাতক্ষীরার আব্দুর রহমান কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে এক কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার, আশাশুনি মহিলা কলেজের একডেমিক ভবন নির্মাণে এক কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার, দেবহাটা কিয়ামউদ্দিন মহিলা কলেজের একডেমিক ভবন নির্মাণে এক কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ও কালিগঞ্জ কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে এক কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জানা গেছে টেন্ডারের নোটিশ অনুযায়ী শিডিউল বিক্রির তারিখ ছিল ২ ডিসেম্বর ও জমা দেয়ার তারিখ ছিল ৩ ডিসেম্বর। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বাধার মুখে কেউ টেন্ডার কিনতে পারেনি। বিধায় অফিস থেকে শিডিউল বিক্রির তারিখ ৯ ডিসেম্বর ও জমা দেয়ার তারিখ ১০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেন। এরপর থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সাধারণ ঠিকাদারদের সিডিউল কিনতে বাধা দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ সিডিউল বিক্রির শেষদিনে গত বুধবার সিন্ডিকেটকারীদের সমঝোতায় টাকার ভাগ পাওয়া যাবে বলে খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের চার শতাধিক ঠিকাদারের কাছ থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্যাড ও ৬০০ করে টাকা প্রায় আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। সংশ্লি¬ষ্ট দপ্তরের লটারীর আগে আওয়ামী লীগ নেতারা লটারী করে এ সব ঠিকাদারদের মধ্যে কাজ ও টাকার ভাগ পাইয়ে দেবে বলে ঘোষণা দেন। এমনকি তারা স্থানীয় দুই এমপি কাজের মধ্যস্থতা করবেন বলে ঠিকাদারদের আশ্বস্ত করেন। কাজ যেই পাক না কেন তার কাছ থেকে সিন্ডিকেটকারীরা ২০ শতাংশ হারে প্রায় ৪ কোটি টাকা নেবে। আর তা থেকে সাধারণ ঠিকাদারদেরও দেয়া হবে বলে প্রতিশ্র“তি দেয়। তবে সিডিউল ক্রয়ের সময় শেষ হয়ে গেলে সিন্ডিকেটকারীরা মারমুখী আচরণ শুরু করে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিডিউল কিনতে না পারা ঠিকাদার আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হামিদ সিডিউল বিক্রির সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে ৬০/৭০ জনের স্বাক্ষরসহ নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করলে সিন্ডিকেটকারীরা তা নিয়ে ছিড়ে ফেলেন এবং তাকে লাঞ্ছিত করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পুলিশের উপস্থিতিতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা নগরীর দৌলতপুরস্থ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে দফায় দফায় মহড়া দেন। তাদের বাধার কারণে সাধারণ ঠিকাদাররা দপ্তরে ঢুকতে পারেননি।