নড়াইলের মুক্তিযুদ্ধ

গোবিন্দ কুন্ডু : ১০ই ডিসেম্বর নড়াইল মুক্ত দিবস। এ দেশে অবস্থানরত পাক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক লেঃ জেঃ নিয়াজির আত্মসমর্পনের ছয় দিন পূর্বেই ১৯৭১ এর এই দিনে পাকহানাদার মুক্ত হয় নড়াইল। নড়াইলের স্বাধীনতাকামী বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাধারন জনতার সহায়তায় ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর সম্পুর্ণভাবে শত্রুমুক্ত করে নড়াইলকে। এ দিনটিকে স্মরনে রাখার জন্য নড়াইলবাসী বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করে আসছে। মুক্ত দিবস উদযাপন পরিষদ দিনটি উদযাপন করে আসছে সেই সাথে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আজ হতহ্বিল হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শ্মরন করছে সে দিনের কথা আর স্মৃতি চারন করছে স্বাধীনতার জন্য রক্ত দেওয়া সাথী শহীদদেরর কথা। এই স্বাধীন দেশে বর্বর সেই রক্ত পিপাসু রাজাকার আলবদর আলসামস মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারি হানাদারদের দোসর হায়েনারা ও তাদের অধস্তনরা কথিত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ এমন কি অসহায় পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা সেজে সরকারের ভাতা গ্রহন না করতে পরে, পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পরবর্তী কার্যক্রম ত্বরান্বিত করে জাতিকে অভিশাপ মুক্ত করার জন্য বর্তমান মুক্তি যুদ্ধের সরকারের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছে। এই অমুক্তিযোদ্ধা হায়েনার দল এবং তাদের উত্তরসুরিরা মুক্তিযোদ্ধা সেজে এবং স্বাধীনতার পক্ষের লোক হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মানসহ দেশকে অরাজকতার দিকে না নিতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখার জন্য স্বাধীনতার পক্ষের সরকার সহ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্বাধীনতার জন্য কম কষ্ট করতে হয়নি নড়াইল বাসীকে। এক দিকে লুটেরাদের উৎপাত অন্যদিকে দেশীয় রাজাকার সহ পাক-সেনাদের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক বিভিষিকাময় রাত দিন পার করে এ দিনটি পেতে হয়েছিল নড়াইল বাসীকে। ১৯৭১ এর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষন অসহযোগ আন্দোলন থেকে শুরু করে কোন আন্দেলনে পিছিয়ে ছিলনা নড়াইল বাসী। ঐ সময়ের আন্দোলনে কি ঘটতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে তৎকালীন প্রশাসন যন্ত্রের কর্তাব্যাক্তিরা ছাড়া নড়াইলের সাধারন জনগন কিছুই জানত না। এই অজানার মধ্যদিয়ে কিছু বাঙ্গালী সরকারী কর্মকর্তা এখানকার মুক্তিকামী জনগনদের নিয়ে যখন হানাদারদের মোকাবেলা করতে ব্যস্ত তখন এ দেশীয় পাকিস্তানী দোসররা স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে থাকে। একই সাথে তারা এলাকায় এলাকায় পিস কমিটি গঠন করে লুটপাঠ, জ্বালাও পোড়াও, খুন, ধর্ষনের মত জঘন্য কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ে। প্রথম দিকে নড়াইল শহরের জলিল মোক্তারের পুত্র টগরের নেতৃত্বে একটি পিস কমিটি গঠন করে এলাকায় লুটপাঠ, ধর্ষন, খুন শুরু করে। পরে নড়াইল সদরের তুলারামপুর গ্রামের মৃতঃ মৌ আঃ রহমানের পুত্র মাওলানা সোলাইমানের নেতৃত্বে এবং তাকে চেয়ারম্যান করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি নড়াইল মহাকুমা শান্তি কমিটি গঠন করে। এ কমিটিতে যারা ছিলেন এরা হল ভাইস চেয়ারম্যান নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলা গ্রামের এডঃ খায়রুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল পৌরসভার মহিষখোলা গ্রামের মৃতঃ ইসমাইল খানের পুত্র হারুন-অর-রশিদ (হারুন মোক্তার), সহ-কারি সেক্রেটারি জেনারেল পৌরসভার আলাদাৎপুর গ্রামের মৃতঃ আঃ হাকিমের পুত্র ডাঃ আবুল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ পেড়লী গ্রামের মৃতঃ নেছার মোল্যার পুত্র ওবায়দুর রহমান, সহ-কোষাধ্যক্ষ বাকসাডাঙ্গা গ্রামের মৃতঃ জলিল মোল্যার পুত্র মাওঃ তবিবর রহমান, সদস্য যথাক্রমে জামরিলডাঙ্গা গ্রামের মৃতঃ আঃ মালেকের পুত্র আশরাফ আলী, চাঁদপুর গ্রামের আঃ ওয়াজেদ মোল্যা, শিমুলিয়া গ্রামের জশা মোল্যার পুত্র ডাঃ সব্বত মোল্যা, চরমল্লিকপুর গ্রামের মৃতঃ ফজলু শেখের পুত্র আঃ হক শেখ, আমডাঙ্গা গ্রামের আসাদুজামানের পুত্র কুদ্দুস খা, তুলারামপুর গ্রামের সদরউদ্দীন। এ সব স্বাধীনতা বিরোধী হায়েনার দল শান্তি কমিটি করে বসে থাকেনি। পর্যায়ক্রমে থানা ও ইউনিয়ন কমিটি করে সাধারন মানুষদের ধরে বিভিন্ন প্রকারের নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে। এতেও শান্তি কমিটির শান্তি হয়নি হিংস্র হায়েনাদের। সাধারন শান্তি প্রিয় মানুষদের বাড়ি ঘরে আগুন, খুন, ধর্ষন লুটপাঠ করে তাদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করে। এতো কিছুর পরেও জালিম হিংস্র হায়েনার দল শেষ রক্ষা করতে পারেনি পূর্ব পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের। অবশেষে হায়েনাদের হাত থেকে মুক্ত হয় নড়াইল। সে দিন ছিল ১০ ডিসেম্বর। এ দিনটি পেতে স্বাধীনতা কামীদের অনেক রক্ত ঝরিয়ে স্বজনদের হারিয়ে অনেক ত্যাগতিখিক্ষা সহ্য করতে হয়েছে। দীর্ঘ ৯ মাসের রয়েছে অনেক ইতিহাস। একদিকে নকশালদের অবাধ বিচরন অন্যদিকে স্বাধীনতা বিরোধী পাক-গোলামদের অস্ত্রের ঝনঝনানি। এদের প্রতিহত করতে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক শ্রম-ঘাম-রক্ত দিয়ে শুরু করতে হয় স্বাধীনতার যুদ্ধ। ৭১‘এর প্রথমদিকে আবু ওসমান চৌধুরী পরবর্তীতে মেজর মঞ্জুরের নেতৃত্বে নড়াইল ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৮ নং সেক্টরের অধীন। দেশের সামগ্রিক মুক্তিযুদ্ধের বিশাল রনক্ষেত্রের এটি একটি ক্ষুদ্র এলাকা হলেও মুক্তিযুদ্ধে নড়াইলের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। মহাকুমা অস্ত্রগারের তালা ভেঙ্গে অস্ত্র সংগ্রহের মাধ্যমে প্রাথমিক ভাবে প্রতিরোধ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে নড়াইলের মুক্তিকামী জনতা। পাক-হনাদারদের দোসর স্থানীয় এদেশীয় রাজাকার আল-বদর আল-সামসদের প্রতিহত করতে এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ বাহিনী গড়লেও তাদের কাছে টিকতে পারেনি তারা। একদিকে নকশালদের অবাধ বিচরন অপরদিকে পাক-হনাদারদের দোসর স্থানীয় এদেশীয় রাজাকারদের উৎপাত। শুরু হয় বিভিন্ন স্থানে তাদের সাথে খন্ড যুদ্ধ। এ সব খন্ড যুদ্ধে অংশ নিয়ে নেতৃত্ব দেয় শরীফ খসরুজ্জামান, দারোগা শামছুর রহমান, আমীর হোসেন,নজির হোসেন,আবুল কালাম আজাদ, ইউনুস, খোকন,রাজ্জাক,মাহমুদ, কবীর,কামরুল,মতিয়ার, বাদশা ও নড়াইলের পাশ্ববর্তী থানা গোপাল গঞ্জের হেমায়েত বাহিনীর হেমায়েত প্রমূখ। অপতৎপরতাকারিদের শক্তি কিছুটা স্তিতিমিত হলে মুক্তিযোদ্ধারা শুরু করে পাক হানাদারদের সাথে গেরিলা যুদ্ধ। মার্চের শেষ দিকে যশোর সেনানিবাস থেকে হানাদার বাহিনী নড়াইলে এসে এদেশীয় দোসরদের সহযোগীতায় নিরীহ গনমানুষের উপর নির্বিচারে অত্যাচার চালায়। সেনাবাহিনী নড়াইলে এসেছে এ কথা শুনে ভয়ে অন্যদের মত নড়াইল গ্রামের ফকির দাস পাশ্ববর্তী বেতবাড়িয়া গ্রামে আশ্রয় নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি ফকির দাসের। ঐ গ্রামের একটি বট তলায় ফকির দাসকে দেখে হানাদার বাহিনীর দোসররা তাকে গলা কেটে হত্যা করে। এই হায়েনার দল ননীক্ষির (নুনক্ষির) গ্রামের কালি পদ বিশ্বাসের বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে তাকে তার পরিবারের সামনে নির্মম ভাবে হত্যা করে। এ বীভৎস্য দৃশ্য দেখে তার স্ত্রী ভানুমতি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় তিনি দীর্ঘদিন অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় ২০০৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়িতে মৃত্যু বরন করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে শহরের পঞ্চানন সরদার, সরসপুর গ্রামের প্রফুল্ল মিত্র,বেতবাড়িয়া গ্রামের সুরেন বিশ্বাস,ভাটিয়া গ্রামের কালু মিত্র,কিরন মাষ্টার সহ নাম না জানা আরো অনেককে এদেশীয় দোসররা পাক হায়েনাদের হাতে তুলে দেয়। এর মধ্যে কিরন মাষ্টার কৌশলে জীবন্ত রাঘবদের হাত থেকে রক্ষা পেলেও বাকি দের আজো কোন সন্ধান মেলেনি। স্বাধীনের পর তাদের পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন নিখোঁজদের আশায় পথ চেয়ে বসে থাকার এক পর্যায়ে তারা নিরাশ হয়ে পড়ে। এছাড়া এ দোসরদের হাতে এলাকার অনেক মা, বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছে। ৬ এপ্রিল জঙ্গী পাক হানাদারদের ২ টি বিমান নড়াইলে এসে বোমা বর্ষণ করে। এ ঘটনায় নড়াইলের ৩ জন নিরীহ মানুষ প্রান হারায়। ১৩ এপ্রিল হানাদাররা যশোর সেনানিবাস থেকে নড়াইলে এসে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায়নিরীহ গন-মানুষের উপর হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মুক্তি যোদ্ধারা শুরু করে গেরিলা যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করার কারনে ২৭ এপ্রিল পাকবাহিনী দোসরদের সহযোগীতায় নড়াইলের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে কয়েক শত নিরাপরাধ ব্যক্তিদের ধরে নড়াইলের ওয়াপদা ডাক বাংলা ক্যাম্পে নিয়ে আসে । এদের মধ্যে তুলারামপুর গ্রামের তরফদার পরিবারের অনেক লোক ছিল। জীবন্ত হিংস্র রাঘবরা তরফদার পরিবারের লোকদের দিয়ে একটি গর্ত খুড়িয়ে তাদের সেই গর্তে ঢুকিয়ে তরফদার পরিবারের ৮ সদস্যদের জীবন্ত কবর দেয় হিংস্র পশুরা। এ ছাড়াও তৎকালীন মোনসেফ কোর্টের পিছনে এবং পোষ্ট অফিস সংলগ্ন লঞ্চ ঘাটে অবস্থিত পল্টনে নিয়ে হিংস্র রাঘবরা শত শত নিরিহ মানুষদের হত্যা করে চিত্রা বক্ষে ফেলে দিয়েছে। এ সবের নির্দেশদাতা হিসেবে ছিল মাওলানা সোলাইমান এবং জল্লাদ হিসেবে কাজ করেছে বরাশুলা গ্রামের ওমর আলী, কাগজীপাড়ার মমরেজ, ভাঁশগ্রামের ওহাব, …. গামের ইলিয়াছ, ….গ্রামের মানিক মিয়া ও …..গ্রামের আশরাফ।
২৩ মে ভোরে ভাটিয়াপাড়ার পাক ক্যাম্প থেকে এ দেশীয় দোসর সহ পাক সেনারা মধুমতি তীরবর্তী ইতনা গ্রামে প্রবেশ করে ৩৯ জন সাধারন মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ঐ এলাকায় আরো ১১ জনকে হত্যা করে এ দেশীয় দোসররা। ১ জুলাই কালিয় থানার মুক্তি যোদ্ধারা কালিয়া থানাস্থ রাজাকার ক্যাম্পে দুঃসাহসিক হানা দিয়ে পিস কমিটির অন্যতম নেতা খলিল মোল্যার ভাই সহ ৯ জন কে হত্যা করে। এর প্রতিশোধ হিসেবে ৯ জুলাই গভীর রাতে রাজাকার বাহিনী ট্রাকযোগে চাঁচুড়ি বাজারের নিকট লক্ষীপুর গ্রামের জিন্দার আলী খার বাড়িতে অতর্কিতে হামলা চালালে জিন্দার আলী খা তার নিজস্ব লোকবল নিয়ে তা প্রতিহত করে। এতে কয়েক জন রাজাকার নিহত হলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এর পর পাক বাহিনী দোসরদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে ১০ ও ১১ জুলাই কালিয়াতে দুই দফা আক্রমন চালিয়ে বেশ কয়েকজন সাধারন মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। জুন মাসের শেষ দিকে ভারতের প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনীর বীর যোদ্ধারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে নড়াইলে প্রবেশ করতে থাকে। এ সব যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মুক্তি বাহিনীতে নড়াইলে উজির আলী, লোহাগড়ায় মোক্তার হোসেন ও কালিয়াতে ওমর ফারুক এবং মুজিব বাহিনীতে নড়াইলে শরীফ হুমায়ুন কবীর, লোহাগড়ায় শরীফ খসরুজ্জামান এবং কালিয়াতে সরদার আঃ মজিদ কে কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ সময় নড়াইল মহাকুমার কমান্ডার হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন কমল সিদ্দিকী ও সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের দায়ীত্বে ছিলেন দারোগা শামছুর রহমান। ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় লোহাগড়া থানা। ৮ ডিসেম্বর লোহাগড়া থানা মুক্ত হলেও এর আগের দিন নড়াইল শহরে ঘটে যায় এ অঘটন। ৭ ডিসেম্বর নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের সিদ্দিক প্রফেসরের একটি সাজানো ফাঁদে পা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তার বাড়িতে যায়। এ সময় ঐ সিদ্দিক প্রফেসরের কুটজালে মুক্তিযোদ্ধারা পা দিলে পূর্ব থেকে ওঁত পেতে থাকা রক্ত পিপাসু রাজাকার হায়েনার দল ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি যোদ্ধাদের উপর। অনেক মুক্তিযোদ্ধা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও পালাতে পারেনি নড়াইলের লোহাগড়ার জয়পুর গ্রামের মিজানুর রহমান ও মোঃ সায়েম। তারা তাদের সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে ব্যর্থ হয় এ দেশীয় রক্ত পিপাসু পাক হানাদারদের দোসর রাজাকারদের কাছে। অবশেষে অর্দ্ধ মৃত মিজানুরকে একটি বাঁশে বেঁেধ ও সামান্য আহত সায়েম কে পিঠমোড়া করে বেঁেধ মুক্তিযোদ্ধা ধরেছি মেরেছি এই বলে বীভৎস্য অবস্থায় সমস্ত নড়াইল শহরময় প্রদক্ষিন করেছিল এমনকি সেই বর্বর দোসর কুখ্যাতরা সদর্পে ছবিও তুলেছিল। মৃত মানুষও রেহায় পায়নি এসব রক্ত পিপাসুদের হাত থেকে। ৯ ডিসেম্বর চিত্রা নদীর পূর্ব পাড় থেকে মুক্তি ও মুজিব বাহিনী বীর যোদ্ধারা সন্মিলিত ভাবে আক্রমন করে নড়াইল শহরে। এ সময় নড়াইলের রপগঞ্জস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা ডাক বাংলা মিলিশিয়া ক্যাম্প লক্ষ্য করে মূহুর্মূহু গুলি ছুড়তে থাকে বীর যোদ্ধারা। ১০ ডিসেম্বর খুব ভোরে বীর যোদ্ধারা ত্রিমুখি আক্রমন চালায় ওয়াপদা ডাক বাংলাতে । মুক্তি সেনাদের আক্রমন সহ্যকরতে না পেরে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখে শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বরে অবস্থানরত বিপুল পরিমান অস্ত্র সহ পাকবাহিনীর অধিনায়ক বেলুচ কালা খানের নেতৃত্বে ২২জন পাকসেনা ও ৪৫ জন রাজাকার অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে নড়াইল পাক-হানাদার মুক্ত হয়। এক দিকে আত্মসমর্পন এর কাজ চলছে অন্যদিকে এদেশীয় কিছু দোসর ডাকবাংলার পশ্চিম দিক দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মুক্ত হয় নড়াইল। একই দিনে মুক্ত হয় কালিয়া। নড়াইলের আকাশে উড়ে স্বাধীন দেশের স্বাধীন পতাকা। বাঁধ ভাঙ্গা শ্রোতের মত সাধারন মানুষ বেরিয়ে আসে নড়াইলে। সরকারি ভাবে নড়াইলে ৩ হাজার ৬ শত ২৩ জন শহীদ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে শহীদ হয়েছে তার দ্বিগুন। পাক সেনারা সহ তাদের এদেশীয় দোসরদের নির্যাতনে মা হারিয়েছে সন্তানকে পুত্র হারিয়েছে মাকে, বোন হারিয়েছে ভাইকে, ভাই হারিয়েছে বোনকে স্বামী হারিয়েছে তার স্ত্রীকে, স্ত্রী হারিয়েছে তার স্বামীকে, আবার কারো সর্বস্ব হারানোর এই স্বাধীনতা। তাই বর্তমান স্বাধীনতার পক্ষের সরকার তাদের দেওয়া পূর্ব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন এটায় সবার প্রত্যাশা।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *