গোপালপুরে নির্বাচনের হাওয়া, প্রার্থীদের পালে
এ কিউ রাসেল, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : নির্বাচনকে সামনে রেখে আগে থেকেই চলছিল সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। তফসিল ঘোষণার পর নতুন করে নির্বাচনের হাওয়া লেগেছে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে পৌরসভা প্রার্থীদের পালে। এখন পর্যন্ত মেয়র পদে মহাজোট তথা আওয়ামী লীগের ৬জন, বিএনপি ও ২০দলীয় জোটের একজন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একজন প্রার্থী ও অর্ধশত সংরক্ষিত মহিলা এবং সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীরা জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন লাভে শীর্ষ নেতাদের আর্শীবাদ পাওয়া চেষ্টা, নিজের অবস্থান তুলে ধরাসহ ভোটারদের মন জয় করতে সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন ও মিছিল শুরু করেছেন। অনেকে আবার দলীয় মনোনয়নের তোয়াক্কা না করে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করে গণসংযোগ করে ফিরছেন।
১৯৭৪সালে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় শ্রেণির গোপালপুর পৌর সভার নির্বাচনী এলাকায় পুরুষ ১৮হাজার ১৯জন ও মহিলা ১৮হাজার ২০৭জনসহ মোট ৩৬হাজার ২৮৯জন ভোটার রয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত মেয়র পদে ৮জন, সংরক্ষিত মহিলা পদে ৬জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৮জন প্রার্থী মনোনয়ন ক্রয় করেছেন বলে উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারি রিটানিং অফিসার, গোপালপুর পৌরসভা নির্বাচন-২০১৫, মো. শামছুল হুদা এ তথ্য জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন শীর্ষে আছেন ’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পরিবহন ব্যবসায়ি মো. রকিবুল হক ছানা। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মাঠে বিরামহীনভাবে কাজ করছেন। রকিবুল হক ছানা ইতিপূর্বে মেয়র পদে দুই দুইবার নির্বাচনে লড়ে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামানের কৃপা নজর তার উপর রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। শুধু মাত্র দলীয় কোন্দেলেই গত দুই নির্বাচনে তিনি হেরেছেন বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। তবে এবার তার অবস্থান অনেক শক্ত বলে সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, গোপালপুর-ভূঞাপুরের সাবেক সাংসদ, গোপালপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, গোপালপুর পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আলহাজ হাতেম আলী তালুকদারের ভাতিজা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এবং গোপালপুর কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও জিএস মো. সাইফুল ইসলাম তালুকদার সুরুজ নবীণ প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন। গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মো. গিয়াস উদ্দিন। তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। ১৯৮৮ সালে এরশাদের শাসনামলে উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক এবং মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দার আলী তালুকদার (বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হালিমুজ্জামান তালুকদারের বড় ভাই) জাসদ ও জাপার সন্ত্রাসীদের হাতে পৌরশহরের সূতী এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হলে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মো. গিয়াস উদ্দিন আওয়ামী লীগের দুর্দিনে দলের হাল ধরেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দলকে সুসংগঠিত করেছিলেন। তিনিও দলীয় মনোনয়নের জন্য কাজ করছেন।
গোপালপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. বেলায়াত হোসেনও দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলে নাগরিক সমাজের ব্যানারে নির্বাচন করবেন বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। গোপালপুর পৌর শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. শামীম আল মামুন ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. এনামুল হক মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে গ্রাম-মহল্লায় গণসংযোগসহ রাজনৈতিক গ্রুপিং, লবিংসহ সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন ও মিছিল সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। গোপালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা মো. আব্দুল কাদের কবীর উজ্জল তিনিও মাঠে নেমেছেন। তিনি হেভিওয়েট প্রার্থী। তিনি সম্ভবত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। ভোটারদের একটি অংশের উপর তার প্রভাব বলয় রয়েছে। বিএনপির একক প্রার্থী সাবেক উপমন্ত্রী ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আটক আবদুস সালাম পিন্টু এবং সাবেক ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকুর আস্থাভাজন পৌর মেয়র এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম রুবেল। দলের গ্রীন সিগনাল নিয়ে মাঠে বিরামহীন ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মনোনয়ন সংগ্রহ, যাছাইবাছাই এবং দলীয় সিদ্ধান্তের পরই জানা যাবে নিরপেক্ষ ভোট হলে কার ভাগ্যের চাকা সামনে আগাবে।