শিক্ষকরা আদর্শচ্যুত হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে : রাষ্ট্রপতি

2

মোঃ নজরুল ইসলাম : দেশে শিক্ষার হার বাড়লেও গুণগতমান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছায়নি মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ২৫ নভেম্বর বুধবার বিকেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে সভাপতির ভাষণে বক্তৃতা করছিলেন। সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, শিক্ষকরা যখন তাঁর মহান আদর্শ থেকে দূরে চলে যান, তখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে জ্ঞান অর্জন ও বিতরণে শিক্ষকমণ্ডলী নিবেদিত থাকবেন-জাতি তা প্রত্যাশা করে। শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের মধ্যে শিক্ষকদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ না রেখে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। রাষ্ট্রপতি গবেষণালব্ধ ফল সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি সফল গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত জ্ঞান মানবজাতির অশেষ কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। তবে গবেষণা যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় এবং জীবনমুখী ও মানবকল্যাণে নিবেদিত হয় সেদিকে সবিশেষ নজর দিতে হবে। গবেষণার ফল যাতে লাইব্রেরিতে বন্দী না থেকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজে লাগে তা নিশ্চিত করতে হবে। গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গবেষণা নিরন্তন সাধনার বিষয় এবং তাতে প্রচুর অর্থেরও প্রয়োজন। আমি সরকার এবং বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের আহ্বান জানাই। এ সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা জোরদার করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। “খুলনা অঞ্চলে রয়েছে জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী সুন্দরবন ও সামুদ্রিক সম্পদ সমৃদ্ধ বিশাল উপকূল। আমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এ জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় মূল্যবান সম্পদ বিষয়ে গবেষণা জোরদারের আহ্বান জানাই।” যোগ করেন তিনি। সমাবর্তনে সনদপ্রাপ্তদের দেশের প্রতি দায়িত্ব পালনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “তোমাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। সে প্রত্যাশা পূরণে তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও সৃজনশীলতাকে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত উত্তরসূরী তোমরা। মনে রাখবে, এ দেশও সমাজ আজ তোমাদের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও মনন দিয়ে দেশ মাতৃকার কল্যাণ করতে পারলে সে ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে।” সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জনসহ গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করে বক্তৃতা করেন। এছাড়া ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন ট্রেজারার খান আতিয়ার রহমান। উল্লেখ্য, ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্তযে সমস্ত শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে তারা এই ৫ম সমাবর্তনে সনদপত্র পেয়েছেন। এর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। ১৫ জনকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন আইটি (পিজিডিআইটি) ও ০১ জনকে পিএইচ ডি ডিগ্রি প্রদানসহ বিভিন্ন স্কুলের (অনুষদ) পরীক্ষার ফলাফলে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য এবার ১৪ জন শিক্ষার্থীকে গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রজত জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, তালুকদার আব্দুল খালেক, এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা, আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান, পঞ্চানন বিশ্বাস, এড. শেখ মোঃ নূরুল হক, জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ হারুনুর রশিদ, কেসিসি’র ভারপ্রাপ্ত মেয়র অনিছুর রহমান বিশ্বাস এবং প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদের জন্য নির্মিত ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’ উদ্বোধন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *