শমিনার চর হাদীবাসী উচ্ছেদ আতংকে শংকিত
ইয়াকুব হোসেন, দশমিনা (পটুয়াখালী) থেকে ঃ পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চর হাদীবাসী উচ্ছেদ আতংকে শংকিত হয়ে পরেছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর অধীনস্থ চর বাশঁবাড়িয়ার বীজ বর্ধণ খামার বর্ধিত করনের জন্য এ চরের জমি বরাদ্ধ করার দাবী জানান। এ খবর চরবাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে পরলে চরবাসীরা উচ্ছেদ আতংকে দিশেহার ও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরেছে। বীজ বর্ধণ খামারের নামে ভূমি অধিগ্রহন করা হলে ওই চরের বসতিরা গৃহহীন হয়ে পরার দুচিন্তায় ভূগছে। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য মতে জানা গেছে, গত বছরের ৪ মার্চ তারিখে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)’র সচিব মোঃ দেলওয়ার হোসেনের স্বাক্ষরিত এক স্মারকের মাধ্যমে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকারের কাছে উপজেলার বীজ বর্ধণ খামারের জন্য প্রস্তাবিত ৪হাজার একর ভূমির মধ্যে চর হাদীর ভূমি বরাদ্ধ চান। ইতিমধ্যে চর বাশঁবাড়িয়া, চর ফতেমা ও চর ভূথামের ১০৪৪ একর ভূমি অধিগ্রহন করে বীজ বর্ধণ খামার স্থাপন করা হয়েছে। ওই চরের ভূমি অধিগ্রহনের দেনাপাওনা নিস্পত্তি হতে না হতেই বিএডিসি কর্তৃপক্ষ চর হাদীর জমি বরাদ্ধের তাগিদ দেন। যা নিয়ে এলাকায় বিরুপ পরিবেশ ও সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। অত্র উপজেলার চর বাশঁবাড়িয়ার বীজ বর্ধণ খামারটি সম্প্রসারন করার লক্ষ্যে আরো ২৯৫৬ একর ভূমির প্রয়োজন রয়েছে বলে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকের কাছে ভূমির দাবী জানান। বিএডিসি’র দাবীকৃত চর হাদীর ভূমি বরাদ্ধ করা হলে ওই চরে বসবাসরত প্রায় ৭শতার্ধিক পরিবারের সদস্যদের শতভাগ বসতিরা গৃহহীন ও কর্মহীন হয়ে পরবে। বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করবে এমন সংশয় রয়েছে। উপজেলার চর বাশঁবাড়িয়া, চর ভূথাম, চর ফতেমা, চর আজমাইন, চর হাদী, লাল চর, চর শাহ জালাল, চর বোরহান, কালীর চর, চর সামাদ, চর সায়মনসহ ছোট বড় বিভিন্ন চরাঞ্চলে ১৩ হাজার ৪৪৮.৬৪ একর খাস ভূমি রয়েছে। এর মধ্যে কৃষি ১৩হাজার ৪৪৫.৭৭ একর এবং অকৃষি ২.৮৭ একর ভূমি রয়েছে। এ যাবৎ ওই সব ভূমির ১২হাজার ৯১২.৫ একর ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৫৩৩.২৭ একর ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য ভূমিহীনদের কাছ থেকে দরখাস্ত জমা নেওয়ার কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। দশমিনা সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, চর হাদীতে ৪৩৪ একর রের্কডে দেখা যায়। অপর দিকে, উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র উপজেলার চর হাদীর ভূমির মোট পরিমান এ স্থানীয় সাংবাদিককে জানাতে পারেনি। তবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃপক্ষ ওই চরের ভূমি বরাদ্ধে দাবী করলে সংশ্লিষ্টরা ৩৩০.৭৫একর ভূমির একটি সূচিপত্র তৈরি করেন। এখনও ৫৩৫একর ভূমি সংশ্লিষ্টরা ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে নানান জটিলতার কারনে ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করতে পারেনি। উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার ভূমিহীন কৃষকদেও খাসভূমি বন্দোবস্ত নীতিমালা আলোকে পরিবার প্রতি আড়াই একর ও দেড় একর কওে সর্বমোট ১২হাজার ৯১২.৫একর ভূমি বিভিন্ন সময়ে বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে ভূমিহীন কৃষকদের বসতবাড়ি ও ফসলী ভূমি রয়েছে। ভূক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, চর হাদীর অধিকাংশ জমি ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ এবং বিভিন্ন সালের দিকে বন্দোবস্ত প্রদান করায় ভূমিহীন কৃষক পরিবারবর্গ ওই চরে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছে। এদের মধ্যে শতকরা ৯৫ভাগ বসতিরা মূল ভূখন্ডের বাপদাদার ভিটামাটি ও ঝি, বৌদের ব্যবহৃত গহনা অলংকার বিক্রি করে শেষ সম্ভল হিসেবে এক খন্ড ভূমি বন্দোবস্ত প্রাপ্ত হন। ভূমিহীন কৃষকরা ভূমি বন্দোবস্ত প্রাপ্ত হলেও টাকার অভাবে তা নতুন খতিয়ান খুলে দাখিলা কাটতে পারেনি। আবার অনেকে তালিকা ভূক্ত হয়েও কবুলিয়ত রেজিষ্টারীও করতে পারেনি। কিন্তু ওই ভূমিহীন কৃষকরা দীর্ঘ বছর যাবৎ বসবাস করছে। এখন ওই চর থেকে উচ্ছেদ হলে ভূমিহীন কৃষকদের মাথা গোজার ঠাঁই হবে না। কিন্তু ঘন বসতি এ চর হাদীর ভূমি বীজ বর্ধণ খামার স্থাপন করার উপযোগী এমন কথা প্রধানমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রীসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে যে আকারে ও প্রকারে বুঝানো হচ্ছে বাস্তবে তা নয়। তবুও বিএডিসি কর্তৃপক্ষ এ চরের ভূমি বীজ বর্ধণ খামারের আওতায় নেওয়ার পদক্ষেপ নেন।