পৌর নির্বাচন ভূঞাপুরে আওয়ামী লীগে হাফ ডজন বিএনপিতে একক
এ কিউ রাসেল, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে জোরেসোরে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। সম্ভাব্য প্রার্থীরা পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক ও মোড়ে ব্যানার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন লাগিয়ে নিজেদের প্রার্থী হওয়ার কথা জানান দিচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের হাফ ডজন নেতা ইতিমধ্যেই জোর লবিং শুরু করেছেন। তারা দ্বারস্থ হচ্ছেন কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের যারা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মেয়র ও ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ন আহবায়ক আমিরুল ইসলাম তালুকদার বিদ্যুৎ, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আজহারুল ইসলাম ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম চঞ্চল, ভূঞাপুর উপজেলা সিএনজি অটোরিক্শা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি খায়রুল ইসলাম তালুকদার বাবলু ও ইব্রাহীম খাঁ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন মিন্টু। এদিকে এ পর্যন্ত বিএনপি’র একক প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। ভোটারদের নজর কাড়তে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা যে যার আঙ্গিকে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা। ভোটারদের সাথে বিনিময় করছেন আদাব-সালাম। গত পৌর নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণে একক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছিল বড় দু’টি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। উভয় দলেই ছিল একাধিক প্রার্থী। দলীয় মনোনয়নের বাইরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন আমিরুল ইসলাম তালুকদার বিদ্যুৎ ও বিএনপি’র আব্দুল খালেক মন্ডল। কিন্তু সবাইকে টেক্কা দিয়ে ওই নির্বাচনে পৌর পিতা নির্বাচিত হয়েছিলেন মাসুদুল হক মাসুদ। তবে এবারের বিষয়টা একটু ভিন্ন। আওয়ামী লীগের মধ্যে দলীয় কোন্দল থাকলেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা ওঠার পর নেতা-কর্মীরা একটু নড়েচড়ে বসেছেন। গোপনে গ্রুপিং থাকলেও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলছেনা। দলীয় মনোনয়নের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। তবে নিজ পছন্দের ব্যক্তির পক্ষে গোপন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে কর্মীরা। পৌর এলাকার সকলের মুখে একটাই কথা কে পাবেন ভূঞাপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন? এদিকে বিএনপিতে দলীয় কোন্দল না থাকলেও নির্বাচনী মাঠে তাদের তেমন কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। তবে গোপনে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দলটির স্থানীয় একাধিক নেতা জানিয়েছে। গত নির্বাচনে পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দলীয় মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নিলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আবদুল খালেক ম-ল। যার কারণেই ভরাডুবি হয়েছিল উভয় প্রার্থীর। আর তাই এবার নড়েচড়ে বসেছে দলটি। একক প্রার্থী দেয়ার লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে তারা। ইতিমধ্যে আবদুল খালেক মন্ডল নির্বাচনে না আসার ঘোষণা দেয়ায় পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দলীয় প্রার্থী অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছেন। বর্তমান মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, মেয়র হিসেবে আমার মেয়াদকালে পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ভূঞাপুরবাসীর প্রাণের দাবী বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করেছি। বিশুদ্ধ পানির জন্য পাম্প বসিয়েছি। পৌর এলাকার ভিতরে নতুন রাস্তা নির্মাণ ও ড্রেনেজ সমস্যার সমাধান করেছি। বামনহাটা লৌহজং নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ করেছি। নেতা-কর্মীরা আমার সাথে আছে। আমার বিশ্বাস দল এবারও আমাকে মূল্যায়ন করবে। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অসমাপ্ত কাজ শেষ করব। আমিরুল ইসলাম তালুকদার বিদ্যুৎ বলেন, আমি ভূঞাপুর পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম। আমার মেয়াদকালে পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এটাই আমার শেষ নির্বাচন। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দিবে। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে পৌর এলাকার ড্রেনেজ সমস্যার সমাধান ও নেশামুক্ত পৌরসভা গড়ে তুলবো। আধুনিক ও ডিজিটাল পৌরসভা হিসেবে চিহ্নিত করবো। পৌর বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক মো.জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বর্তমানে পৌরসভার বিশৃঙ্খল অবস্থা। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে পৌর এলাকার প্রধান সমস্যা ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সকল সমস্যার সমাধান করবো। এছাড়াও পৌর এলাকায় বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ করব। ভূঞাপুর পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীতকরণের জন্য কাজ করবো। আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি দু’বার কমিশনার ও একবার প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলাম। গত নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে পরবর্তী পৌর নির্বাচনে মনোনয়নের আশ্বাস দিয়েছিল। আমি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থীও হয়েছিল একজন। দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য থেকেছি। আমার বিশ্বাস দল তার কথা রাখবে। আমাকে মূল্যায়ন করবে। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে ভূঞাপুর পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলবো। তরিকুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন চাইবো। আমি দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য শ্রম দিয়ে চলেছি। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ আমাকে মেয়র নির্বাচন করলে আমি ভূঞাপুর পৌরসভাকে মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত করবো। আর সাধারণ মানুষের পাশে থেকে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করে যাবো।
খায়রুল ইসলাম তালুকদার বাবলু বলেন, দল আমাকে মনোনয়ন দিলে পৌরসভার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ সমস্যার সমাধান করবো। পৌরসভার সর্বত্র সোডিয়াম লাইট দিয়ে আলোকিত করবো। আর ঘরে ঘরে সাপ্লাইয়ের পানি সরবরাহ করবো। এদিকে মেয়র প্রার্থীদের তৎপরতায় অনেকটা আড়ালে পড়ে গেছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কাউন্সিলরদের নির্বাচনী তৎপরতা। ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে ৯টি ওয়ার্ড ও ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।