বিদ্যালয়ে না এসে বেতন নিচ্ছেন লোহাগড়ার ২ প্রাথমিক শিক্ষক

লোহাগড়া(নড়াইল)প্রতিনিধি: নড়াইলের লোহাগড়ায় বিদ্যালয়ে না এসে বেতন নিচ্ছেন এক প্রধান শিক্ষক। আর প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের সুযোগ নিচ্ছেন আরেক সহকারী শিক্ষক। এ কারনে বিদ্যালয়টির শিক্ষাকাঠাম ব্যাপকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব অনিয়ম চললেও শিক্ষা প্রশাসন নিরব। ক্লাস্টার কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিষয়টি জেনেও না জানার ভান করছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এ অনিয়মের ঘটনাটি ঘটছে উপজেলার শালনগর ইউপির ২৪ নং মন্ডলভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জানা গেছে, শালনগর ইউনিয়নের ২৪ নং মন্ডলভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শামীমারা ২০০৬ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে ওই প্রধান শিক্ষক কর্ম দিবসের অর্ধেকের বেশি দিন বিভিন্ন অযুহাতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন এবং পরের দিন বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নিশ্চিত করেন। আর ওই প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের কারনে সহকারী শিক্ষক মো. আবু ওসমান গণি ছুটি ছাড়া লোহাগড়ায় কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সহকারী শিক্ষক ২০০৭ সালে ওই বিদ্যালয়ে যোগদান করে অদ্যাবধি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্য চালাচ্ছেন। এ ২ শিক্ষকের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারনে বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিশুরা পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী শিক্ষা অফিসার ওই শিক্ষকদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে তাদেরকে এই অনিয়মের সুযোগ দিচ্ছেন। শিক্ষকদের অনুপস্থিতি এবং মানসম্মত শিক্ষার অভাবে দিন দিন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমে ৬১ জনে গিয়ে দাড়িয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার (৭ নভেম্বর) ওই বিদ্যালয়ে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩ জন শিক্ষকের মধ্যে বিদ্যালয়ে উপস্থিত আছেন মাত্র একজন সহকারী শিক্ষক। উপস্থিত সহকারী শিক্ষক কুলসুম খাতুনকে অন্য ২ শিক্ষকের অনুপস্থিতির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক ন্যায়-অন্যায় যাই করুক, আমি কিছু বলতে পারবো না। এ সময় হাজিরা খাতায় দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক (৫ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার ও (৭ অক্টোবর) শনিবার এবং সহকারী শিক্ষক মো. আবু ওসমান গনি (৭ অক্টোবর) শনিবার অনুপস্থিত। তবে তাদের কোন ছুটির আবেদন উপস্থিত শিক্ষক এ প্রতিনিধিকে দেখাতে পারেন নি। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বলেন,আমাদের প্রধান শিক্ষক স্কুলে মাঝে মধ্যে আসে মাঝে মধ্যে আসেনা। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক শামীমারা এর নিকট ফোনে জানতে চাইলে তিনি উদ্ধত স্বরে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি কবে বিদ্যালয়ে আসব আর আসবো না, তা আপনাকে বলতে হবে? বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, আমি একদিন পর একদিন স্কুল করি, লিখিত ভাবে ছুটি নেওয়া না হলেও এ বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার কে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। সহকারী শিক্ষক আবু ওসমান গণির অনুমতি ছাড়াই ছুটি ভোগ করার বিষয়টি প্রধান শিক্ষক শামীমারা স্বীকার করেন।সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পিন্টুরঞ্জন দাস মুঠফোনে বলেন, আমি এলাকার লোকের মাধ্যমে বিষয়টি মৌখিক ভাবে জেনেছি, তবে লিখিত ভাবে আমাকে কেউ অভিযোগ করেন নি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: লুৎফর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক যদি ছুটি ছাড়া বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: জেছের আলী মোবাইলে একাধিক বার যোগাযেগ করেও পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *